সোমবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১০

রাজা আর প্রজা

      আজকাল অনেকেই মজা করে বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে পলিটিকস ঢুকে গেছে! আর আমরা বলি আমাদের পলিটিকস আজকাল পলিট্রিকস হয়ে গেছে। এই ট্রিকসমুক্ত পলিটিকস কবে যে আবার ফিরে আসবে, কেউ জানে না! 


     যদিও হওয়া উচিৎ ছিলো নীতির রাজ, হয়ে গেছে রাজের নীতি। বর্তমানে আবার রাজনীতি মানে রাজার নীতি, রাজকীয় নীতি। তাহলে রাজা থাকলে তো প্রজাও থাকতে হয়। গণতান্ত্রিক দেশে আবার রাজা-প্রজার সিস্টেম নেই। 

     অন্যদিকে আমাদের নেতানেত্রীদেরও বলতে শুনি, আমলারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারি। তাহলে কেউ না কেউ বা কোনো জাতি তো প্রজা আছেই। প্রজা ছাড়া তো আর প্রজাতন্ত্র হয় না। 
             এবারে প্রশ্ন হচ্ছে , তাহলে বাংলাদেশে প্রজা কে? 

   উত্তর খুঁজে খুঁজে পেরেশান আমি। আসলেই তো। প্রজা কে? 

       আমার মুশকিল আসান করে দিলো আমাদের জাতীয় সংবিধান। আগেই ছিলো। লক্ষ্য কারা হয় নি। যেন নতুন করে আবিস্কার করলাম, আমাদের সংবিধানের নাম- গণপ্রজাতন্ত্রি বাংলাদেশের সংবিধান। এর মানে কি? 

    সহজ কথায় , আমরা জনগণ হলাম প্রজা ! 

    রাজা আর প্রজা মিলে হয় রাজতন্ত্র। আমাদের দেশে হয়েছে গণতন্ত্র ! 
আর আমরা হয়েছি গণতান্ত্রিক !!! 

    আশ্চর্য না??

বুধবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১০

প্রসঙ্গ ,- সংবিধান সংশোধন : কী আছে জাতির কপালে?

     ১৯৭২ এর ৪ঠা নভেম্বর জন্ম। হাটতে শেখা ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭২ থেকে। সুতরাং জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী আমাদের জাতীয় সংবিধানের বয়স আটত্রিশ। হাজার বছর এবং তারচে’ও বেশি সময় বেঁচে থাকবার জন্য জন্মনেয়া একটি সংবিধানের বয়স আটত্রিশ মানে এখনো দুধের শিশু। অথচ এরই মধ্যে বাচ্চাটির শরীরে চৌদ্দবার অপারেশন চালানো হয়েছে। এগুলোর মধ্যে কিছু কিছু অপারেশন আবার এমনও ছিলো, যা রোগীর নয়, ডাক্তারদের রুটি-রুজির ধান্ধা ঠিক রাখবার জন্যে। এবারে পনের নাম্বার অপারেশনের নিয়ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পনেরজন বিশেষজ্ঞ সার্জনও ঠিক করা হয়েগেছে। তারা বাচ্চাটিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কাজ শুরু করে দিয়েছেন। ছুরি-চাকুতে ধার দিচ্ছেন। দিনক্ষণ ঠিক করে চূড়ান্ত অপারেশনের জন্য ভর্তি করানো হবে দেশের জনগণের আস্থা ও আকাঙ্খার প্রতীক; সবচে’ বিশ্বস্থ ও নির্ভরযোগ্য হাসপাতালে। জাতীয় সংসদ নামক সেই হাসপাতালেই হবে চূড়ান্ত অপারেশন। জটিল এই অপারেশনের পর আমাদের সংবিধানটির শরীর-স্বাস্থ্য, চেহারা-সুরত, আচার-আচরণ কেমন হয়, সেটাই হবে দেখবার বিষয়। আল্লাহপাক আমাদের সংবিধানটিকে সুস্থ রাখুন এবং হায়াতে তাইয়্যিবা দান করুন। লেখার শুরুতে এই প্রার্থনাই জানিয়ে রাখছি। 


     এই মূহুর্তে টক অব দ্য কান্ট্রি হচ্ছে সংবিধান সংশোধন। ইতোমধ্যে পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী বাতিল মর্মে উচ্চ আদালতের রায়ের  আলোকে সংবিধান পূণ:মূদ্রণের কাজ শুরু হয়ে গেছে।  সংবিধান সংশোধন কমিটি  বসে আছে রিলাক্স মোডে। আর  কমিটির বর্তমান কথাবার্তায় যেটুকুন বুঝা যা”ছে, তাতে পূণ:মূদ্রিত সংবিধানে আর সংশোধনী আনার দরকার হবে বলেও মনে হয় না। আদালতের কাধে বন্দুক রেখেই যদি শীকার করে নেয়া যায়, আসল মকসুদ পূর্ণ হয়ে যায়, তাহলে আর খামাখা কষ্ট করার দরকার কী?

      তবুও আমরা বিশ্বাস করতে চাই, আমাদের মহান সংসদ সদস্যদের মাঝে এই বোধটুকু জেগে উঠবে, সংবিধান সংশোধন করার অধিকার সংসদের। দেশের মানুষ তাদেরকে সংসদে পাঠিয়েছে দেশ পরিচালনার জন্যে। দেশ পারচালনার মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে সংবিধান। এই সংবিধানে কী থাকবে আর কী থাকবে না, দেশবাসীর চাহিদার প্রতি লক্ষ রেখে সেটা ঠিক করবেন সাংসদরা। আর এটা করতে যেয়ে ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়, ভুল-ভ্রান্তি করলে জনগনের কাছে জবাবদিহি করতে হবে, অন্তত আর না হলেও প্রতি ৫ বছর পর পর। আর সংবিধান সংশোধনের মতো কাজগুলোও যদি আমাদের সাংসদরা করতে না পারেন, তাহলে তাদের গণ-পদত্যাগ করা উচিত কি না, সেই প্রশ্নও উঠতে পারে।
সংবিধান সংশোধনীর মাসআলায় আদালতকে ব্যবহার করা ঠিক হয় নি, মোটেও ঠিক হয় ন্।ি এটা আদালতের দায়িত্ব না। আদালতের কাজ হলো সংবিধানের কোনো বিষয়ে জটিলতা তৈরি হলে সংশ্লিষ্ট ধারার ব্যাখা দেয়া। এতে করে আদালতকে বিতর্কিত করা হলো কি না-সে প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়েও বলা যায়. এতে করে দেশের মানুষের আর জবাব চাওয়ার সুযোগ থাকলো ন্।া বিচার বিভাগ জবাবদিহিতার উর্দ্ধে। সেই সঙ্গে ভয়ে ভয়ে বলি, আদালতকেই যদি সংবিধান সংশোধনের কর্তৃপক্ষ বানিয়ে ফেলা হয়, তাহলে তো আগামীতে অন্য কোনো  দলের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্টতা না পেলেও সংবিধানে হাত দেবার ছোট্ট একটা পথ খোলা থেকেই যাবে। কারণ এখনকার মাননীয় বিচারপতিদের কাছে যেটা সঠিক মনে হচ্ছে, আগামীর বিচারপতিদের কাছে সেটা তো সঠিক মনে নাও হতে পারে। আর এমনটি তো আমরা এদেশে হতেও দেখেছি।  আর এটা হতেই পারে। দিলের মালিক তো আল্লাহ। কখন কার দিল কোন দিকে ঘুরিয়ে দেন, তিনিই জানেন। অন্তত দেশের প্রখ্যাত আইনজীবি ব্যরিষ্টার রফিকুল হকের(বাংলাদেশের কোর্ট হাওয়া বুঝে রায় দেয়) কথায় যদি সত্যতা থেকে থাকে, তাহলে আগামীতে কখন কী হয় কে জানে!

তো সংবিধান সংশোধনীর ক্ষেত্রে যে ব্যাপারগুলো নজরে আনা উচিত বলে আমরা মনে করি, তা হল,
    ১। পঞ্চম সংশোধনী পুরোটা বাতিল করা সম্ভব কি না? 
    ২। বাহাত্তরের মূল সংবিধানে ফিরে যাওয়া সম্ভব কিংবা উচিৎ কি না?
    ৩। সংবিধানে বিস্মিল্লাহির রাহমানির রাহীম ও মহান আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাসের কথা থাকবে কি না?
    ৪। ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত আসবে?
    ৫। আমাদের জাতিসত্ত্বা ও নাগরিক পরিচয়ের ক্ষেত্রে সৃষ্ট ঝামেলার সমাধান কেমন হবে?
    ৬। ৭০ অনুচ্ছেদের বেলায় নতুন করে চিন্তা-ভাবনা করা হবে কি না?
    ৭। জরুরী বিধান থাকবে কি না?
    ৮। তত্ত্বাবাধয়ক সরকার প্রসঙ্গে চিন্তা-ভাবনা কেমন ?
    ৯। অবৈধ ক্ষমতাদখল বন্ধে কী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে?
    ১০। সর্বোপরি জাতীয় সংবিধান সত্যিকার অর্থেই জাতির আশা-আকাঙ্খার প্রতীক হয়ে উঠবে কি না?
     এই বিষয়গুলো এবং আরো যেগুলো আছে, সেগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হওয়া দরকার। বিষয়গুলোর অনেক গভীরে প্রবেশ করে দেশের মানুষের প্রত্যাশা ও অনুভূতির কথা মাথায় রেখে কাজ করা দরকার। সেই সঙ্গে মনে রাখা দরকার এদেশের শতকরা ৮৮ জন মানুষই মুসলমান। পৃথিবীবাসীর কাছে বাংলাদেশের পরিচয় দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে। খোদ আমেরিকাও স্বীকার করে বাংলাদেশ একটি মডারেট মুসলিম কান্ট্রি।
বিষয়গুলো নিয়ে সু-শীল শ্রেণীর বুদ্ধিজীবিরা পরামর্শ দেবেন। আমরা সাধারণ জনগণ যেভাবে 
ভাবছি-


দুই \
     সরকারের মাননীয় আইনমন্ত্রী থেকে শুরু করে অন্যান্য দায়িত্বশীল মন্ত্রীবর্গ বলে চলেছেন বাহাত্তরের মূল সংবিধানে ফিরে যাওয়া হচ্ছে। কেউ কেউ আরেকটু এডভান্স হয়ে বলে দিচ্ছেন হাইকোর্টের রায়ে ৫ম সংশোধনী অবৈধ হয়ে যাওয়ায় সংবিধান সংশোধনেরই আর দরকার নেই। বাহাত্তরের সংবিধান অটোমেটিক জিন্দা হয়ে উঠেছে। অবশ্য সবকথায় কান দিতে নেই। সেই সুযোগও নেই। আইনমন্ত্রী বলছেন, বাহাত্তরে ফিরে যেতে কোনো সমস্যা নেই। বিশেষত ৫ম সংশোধনী অবৈধ ঘোষিত হয়ে যাবার পর। আওয়ামলীগেরই আরেক সিনিয়র নেতা ওবায়দুল কাদের বলছেন, ৫ম সংশোধনীর পুরোটা বাতিলের সুযোগ নেই। আর সরাসরি এবং হুবহু বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাওয়াও যাবে না। অন্যদিকে বাহাত্তরের সংবিধানের ফজিলত বর্ণনা করে করে পেরেশন হয়ে গেছেন আওয়ামীলীগেরই আরেক সিনিয়র নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। বাহাত্তরের জন্য সবচে’ উচু গলায় তিনিই আওয়াজ দিচ্ছেন। 
     ১৯৭২ সালে আওয়ামীলীগের ততকালীন আইনমন্ত্রী ড. কামাল হুসেনের নেতৃত্বে গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন এই সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। অথচ মজার ব্যাপার হলো, যে বাহাত্তরের জন্য আজ সুরঞ্জিত দা এত লাফালাফি করছেন, সেই মূল সংবিধানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সই করার পরও এই সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত কিন্তু সই করেন নি। অনেকগুলো ধারার সাথে দ্বিমত পোষণ করে বেরিয়ে এসেছিলেন। বঙ্গবন্ধু সই করার পরও সুরঞ্জিত বাবুর সই না করার অর্থ বঙ্গবন্ধুকে অপমান করা। তেমন একজন মানুষকে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সংবিধান সংশোধন কমিটির কো-চেয়ারম্যান করলেন কোন্ বিশ্বাসে, সত্যিই আমাদের মাথায় ঢুকে না। উনার মর্জি মোয়াফিক সবকিছু না হলে এবারেও যে তিনি সই না করে বেরিয়ে যাবেন না, কী গ্যারান্টি আছে?
তো সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীবর্গের পরস্পর বিরোধী মন্তব্যে আমরা সাধারণ জনগণ পড়েছি বিভ্রান্তিতে। আমরা ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না কে সত্য বলছেন আর কে ...


      আর এ জন্য আমরা আমাদের নিজের মতো করে ভেবে দেখতে চেষ্টা করছি বাহাত্তরের সংবিধানে আসলেই ফিরে যাওয়া সম্ভব কি না। বাহাত্তরের মূল সংবিধানে ফিরে যাওয়া মানে আমরা যা বুঝি, সবগুলো সংশোধনী বাতিল হয়ে যাওয়া। এবারে প্রশ্ন দেখা দেবে সবগুলো সংশোধনী বাতিল করা কি সম্ভব? সেই ক্ষমতা কি আমাদের আছে? বিশেষত তৃতীয় সংশোধনীর কী হবে? তৃতীয় সংশোধনীর মাধ্যমেই তো আমরা আমাদের বেরুবাড়ি ভারতের হাতে তুলে দিয়েছিলাম। যদিও তার বিনিময়ে দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা সিটমহল এবং সেখানে যাবার জন্য তিনবিঘা করিডোর পাবার কথা ছিলো আমাদের। আমরা পাইনি। সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু বাহাত্তরে ফেরৎ যেতে হলে তৃতীয়টি রেখে বাকী সংশোধনীগুলো বাতিল করলে তো হবে না। আবার তৃতীয় সংশোধনী বাতিল করা মানে তো ভারতের পেট থেকে আমাদের বেরুবাড়ি বের করে নিয়ে আসা। এটা কি সম্ভব? সরকারের ভেতরে/বাইরে এমন কেউ কি আছেন, যার এই সৎ সাহস বা দুঃসাহস আছে যে, তিনি বুকে হাত রেখে বলতে পারেন, হ্যাঁ ভারতের কাছ থেকে আমরা আমাদের বেরুবাড়ি উদ্ধার করে ছাড়বো? যদি না পারেন, তাহলে তো ৩য় সংশোধনী বাতিল করা যাবে না। আর সেটা করতে না পারলে বাহাত্তরে যাওয়া যাবে কেমন করে?
সমস্যা তো এখানেই শেষ নয়, বাহাত্তরের মূল সংবিধানের চার মুলনীতির অন্যতম একটি মূল নীতি ছিল সমাজতন্ত্র। বর্তমান আওয়ামীলীগই তো এখন মুক্ত বাজার অর্থনীতির চর্চা করছে। তাহলে সমাজতন্ত্রকে সংবিধানে প্রতিস্থাপিত করা হবে কেমন করে? তাছাড়া আওয়ামীলীগই তো এখন আর সমাজতন্ত্রের পক্ষে বলে না। এই মাসআ’লায় কী করা হবে?


তিন \
      সংবিধানে বিস্মিল্লাহ থাকবে কি থাকবে না-এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলছে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিরতীহীনভাবে বলে চলেছেন সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম থাকছে। এ নিয়ে বিভ্রান্তির কোনো অবকাশ নেই। দেশের ৮৮% মানুষ প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে বিশ্বাস রাখতে চাইছে। কিন্তু একাধিক মন্ত্রী-এমপি যখন আবার বলেন সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনা হচ্ছে, তখন আবার দেশের মানুষ বিভ্রান্তিতে পড়ে যাচ্ছে। 


     আমাদের কথা হলো, সংবিধানের শুরুতে যদি বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম লেখা থাকে, যদি আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসের কথাগুলো অপরিবর্তনীয় থাকে, যেমনটি থাকবে বলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলছেন, তাহলে তো সেই সংবিধান আর ধর্ম নিরপেক্ষ সংবিধান হলো না। বিসমিল্লাহর পক্ষের সংবিধানই থাকলো। সেই সঙ্গে হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ কর্র্তৃক ৮ম সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করা হয়েছিলো ইসলাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কথাবার্তায় আমরা যদি আস্থা রাখতে পারি, তাহলে এই ধারাও থাকছে। এই যদি হয় অবস্থা তাহলে একটি শব্দ ‘ধর্ম-নিরপেক্ষতা’ নিয়ে এত জল ঘোলা করার দরকার কী? দেশের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের অনুভূতির মাত্রার পরীক্ষা নেয়ারই বা কী প্রয়োজন? সোজাসাপ্টা কেন বলে দেয়া যাচ্ছে না সংবিধানের ধর্ম-নিরপেক্ষতা যুক্ত হচ্ছে না।


চার \
    ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ হচ্ছে। আবার ধর্মীয় রাজনীতি থাকছে। দু’টিই সরকারি ভাষ্য। তবে বাংলাদেশের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল, বিশেষত ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো আশ্বস্থ হতে পারে এই ভেবে যে, শেষোক্ত মন্তব্যটি রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। সরকারের অতি উৎসাহি বাঘাবাঘা কিছু নেতা ঢাকঢুল পিটিয়ে বলে বেড়াচ্ছেন ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ হচ্ছে। আমার জানামতে পৃথিবীতে এমন কোনো ধর্ম নেই যে ধর্মে শান্তি শৃঙ্খলা ও পরমত সহিষ্ণুতার কথা বলা হয়নি। একজন মানুষের ভেতরে যে মানবিকতা ও সুস্থ বিবেকবোধ থাকে, তা অই ধর্মীয় অনুভূতির কারণে। এই অনুভূতি যতক্ষণ জাগ্রত থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সেই মানুষ সমাজের জন্য কল্যাণকর হোক আর না হোক, অন্তত সহনীয় থাকবে। আর যখন এই অনুভূতিটুকু থাকবে না, তখন সেই মানুষ আর পশুতে কোনো ব্যবধান আর থাকবে না।


     যারা বলছেন, বাংলাদেশে ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়া দরকার, তাদেরকে বলি, বিবেক না থাকলে কারো কাছ থেকে ধার করে এনে চিন্তা করুন। একটি গণতান্ত্রিক দেশে যে কারো রাজনীতি করার অধিকার আছে। কে কোন্ আদর্শের ভিত্তিতে রাজনীতি করবে, সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার।
সমস্যা হচ্ছে অস্পষ্টতা। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিয়ে কথা বলবার আগে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা দাঁড় করানো উচিৎ ছিলো। পরিষ্কার হওয়া দরকার ছিলো ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বলতে কী বুঝানো হবে?


      যদি বলা হয় নামের মধ্যে আরবি শব্দ থাকতে পারবে না, তাহলে সমস্যা আওয়ামীলীগেরও আছে। আওয়াম আরবি শব্দ। যদি বলা হয় রাজনীতিতে আল্লাহ রাসুল বা ইসলাম শব্দ মুখে আনা যাবে না, আহলে তো এটা হবে আত্মঘাতি ব্যাপার। একই সাথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনারও পরিপন্থী। ভুলে গেলে তো হবে না, ৭ই মার্চ ১৯৭১ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু সেই ভাষণটি, জাতিকে স্বাধীনতার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ’। 


     বিশেষত একজন মুসলমানের ক্ষেত্রে একজন মুসলমান রাজনীতি করবে অথচ সে তার রাজনৈতিক মঞ্চে, কর্মকান্ডে আল্লাহর নাম নিতে পারবে না, রাসূলের আদর্শে অনুপ্রাণিত হতে পারবে না, অন্যকে অনুপ্রাণিত হতে বলতে পারবে না, একজন হিন্দুলোক রাজনীতির মাঠে তার ভগবানের কথা বলতে পারবে না-এটা কেমন কথা? আমাদের সংবিধানের ৪১ এর ১ এর ক’ তে বলা আছে “প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন ধর্ম অবলম্বন পালন বা প্রচারের অধিকার রহিয়াছে।” আমাদের জিজ্ঞাস্য হলো, এই ধারাটি কি বাদ দিয়ে দেয়া হবে?


       যদি বলা হয় ধর্ম প্রচারে বাধা নেই। বাধার প্রশ্ন আসবে রাজনীতিতে ধর্মকে ব্যবহার প্রসঙ্গে। এই যদি হয় অভিযোগ, তাহলে তো অবস্থা হবে আরো জটিল। প্রথমে নির্ণয় করতে লাগবে ধর্মের প্রচার কাকে বলে আর ব্যবহার কাকে বলে? রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করাকেই যদি রাজনীতিতে ধর্মকে ব্যবহার বুঝানো হয়, তাহলে এই কাজ তো আওয়ামীলীগ-বিএনপিও করে। সকল দলই কিছু না কিছু করে। বিশেষত নির্বাচনের সময়। আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কি নির্বাচনের আগে হেজাব-তসবীহ ব্যবহার করেন নি? বেগম খালেদা জিয়া কি নির্বাচনের আগে কখনো উমরা মিস করেন? এরশাদ সাহেবের মাথা থেকে কি টুপি নামে? 


      এছাড়া রাজনীতিতে ধর্মীয় অনুভূতিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহারের তরতাজা উদাহরণ তো হাতের কাছেই আছে। চট্টগ্রাম এম এ হান্নান বিমান বন্দরকে বিএনপি করেছিলো হযরত শাহ আমানত (র.) বিমান বন্দর। পাল্টা অ্যাকশন হিসেবে আওয়ামীলীগ জিয়া বিমান বন্দরকে করেছে হযরত শাহজালাল (রহ.) বিমানবন্দর। তাহলে ধর্মীয় অনুভূতিকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য আমরা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করবার জন্য কারা ব্যবহার করে? পরিষ্কার বলা দরকার ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বলতে কী বুঝানো হবে? একজন মুসলমানকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান পালনের অঙ্গকার করেই মুসলমান হতে হয়। রাজনীতি ও তো জীবনের একটা ক্ষেত্র। এখন বাংলাদেশের একজন মুসলমান কী করবে? আল্লাহর হুকুম মানবে নাকি সুরঞ্জিত বাবুদের? কথায় কথায় ইউরোপ-আমেরিকার উদাহরণ টানা হয়। আমাদের নেতারা কি দেখছেন না ইউরোপ-আমেরিকাসহ উন্নত বিশ্বের সবগুলো গণতান্ত্রিক দেশেই ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল আছে। অবশ্য ধর্মীয় রাজনীতি মানে যদি হয় ইসলামী রাজনীতি, তাহলে ভিন্ন কথা।


    
     আদালতের রায়ের উপর আমল করে পঞ্চম সংশোধনী হুবহু বাতিল করে দিলে আওয়ামীলীগের দলীয় পরিচয়ই অসাংবিধানিক হয়ে যাবে কি না ভেবে দেখবার বিষয়। পঞ্চম সংশোধনী বাতিল মানে চতুর্থ সংশোধনী বহাল। আর ২৫শে জানুয়ারি ১৯৭৫ চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে তো দেশের সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে একদলীয় বাকশাল গঠন করা হয়েছিল। পঞ্চম সংশোধনীতে ইনডেমনিটি, সামরিক শাসনের বৈধতা দেয়াসহ অনেকগুলো মন্দ দিক হয়তো ছিলো। কিন্তু ভুলেগেলে তো হবে না বহুদলীয় রাজনীতি  সাংবিধানিক বৈধতাও পেয়েছিলো পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে। ১৯৭৫ এর ৮ নভেম্বর এক ঘোষণার মাধ্যমে বাকশাল বাতিল হয়েছিলো যা ৫ম সংশোধনীর অন্তর্ভূক্ত। এখন যদি ৫ম সংশোধনী পুরোপুরি অবৈধ ছিলো বলে মেনে নিতে হয়, তাহলে অবধারিতভাবেই স্বীকার করতে হবে ২৫শে জানুয়ারি ১৯৭৫ এর পর থেকে ২০১০ পর্যন্ত আওয়ামীলীগ-বিএনপি তথা বাংলাদেশের সবগুলো রাজনৈতিক দল অবৈধভাবে রাজনীতি করেছে। এখন দেখবার বিষয় আমাদের সংবিধান সংশোধন কমিটি কী করেন? ৫ম সংশোধনীর কোন্ অংশ বাতিল করেন আর কোন্ অংশ রাখেন। দেখবার বিষয় গ্রহণ বর্জনের মাপকাঠিটি কী হয়?


দুই \
     বাহাত্তরের মূল সংবিধানে ফিরে যাওয়া হচ্ছে। কেউ কেউ আরেকটু এডভান্স হয়ে বলে দিচ্ছেন সুপ্রিমকোর্টের রায়ে ৫ম সংশোধনী অবৈধ হয়ে যাওয়ায় সংবিধান সংশোধনেরই আর দরকার নেই। বাহাত্তরের সংবিধান অটোমেটিক জিন্দা হয়ে উঠেছে। বাহাত্তরের সংবিধানের ফজিলত বর্ণনা করে করে পেরেশন হয়ে গেছেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। বাহাত্তরের জন্য সবচে’ উচু গলায় তিনিই আওয়াজ দিচ্ছেন। ১৯৭২ সালে আওয়ামীলীগের তৎকালীন আইনমন্ত্রী ড. কামাল হুসেনের নেতৃত্বে গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন এই সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। অথচ মজার ব্যাপার হলো, যে বাহাত্তরের জন্য আজ সুরঞ্জিত দা এত লাফালাফি করছেন, সেই মূল সংবিধানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সই করার পরও এই সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত কিন্তু সই করেন নি। অনেকগুলো ধারার সাথে দ্বিমত পোষণ করে বেরিয়ে এসেছিলেন। বঙ্গবন্ধু সই করার পরও সুরঞ্জিত বাবুর সই না করার অর্থ বঙ্গবন্ধুকে অপমান করা। তেমন একজন মানুষকে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সংবিধান সংশোধন কমিটির কো-চেয়ারম্যান করলেন কোন্ বিশ্বাসে, সত্যিই আমাদের মাথায় ঢুকে না। উনার মর্জি মোয়াফিক সবকিছু না হলে এবারেও যে তিনি সই না করে বেরিয়ে যাবেন না, কী গ্যারান্টি আছে? এই সুরঞ্জিত বাবু অতি স¤প্রতি হুংকার ছুড়ে দিয়ে বলেছেন, এদেশে কাউকে ধর্মীয় রাজনীতি করতে দেয়া হবে না। পরিস্কার ইঙ্গিত ইসলামী রাজনীতিওয়ালাদের দিকে। কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। আল্লাহ পাক দেশের ইসলাম প্রিয় মুসলমানকে উলামায়ে কেরামের নেতৃত্বে আরো শান্তিতে ঘুমানোর তৌফিক দান করুন। সকলে বলুন- আমীন।


     বাহাত্তরের সংবিধানে আসলেই ফিরে যাওয়া সম্ভব কি না। বাহাত্তরের মূল সংবিধানে ফিরে যাওয়া মানে আমরা যা বুঝি, সবগুলো সংশোধনী বাতিল হয়ে যাওয়া। এবারে প্রশ্ন দেখা দেবে সবগুলো সংশোধনী বাতিল করা কি সম্ভব? সেই ক্ষমতা কি আমাদের আছে? বিশেষত তৃতীয় সংশোধনীর কী হবে? তৃতীয় সংশোধনীর মাধ্যমেই তো আমরা আমাদের বেরুবাড়ি ভারতের হাতে তুলে দিয়েছিলাম। যদিও তার বিনিময়ে দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা সিটমহল এবং সেখানে যাবার জন্য তিনবিঘা করিডোর পাবার কথা ছিলো আমাদের। আমরা পাইনি। সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু বাহাত্তরে ফেরৎ যেতে হলে তৃতীয়টি রেখে বাকী সংশোধনীগুলো বাতিল করলে তো হবে না। আবার তৃতীয় সংশোধনী বাতিল করা মানে তো ভারতের পেট থেকে আমাদের বেরুবাড়ি বের করে নিয়ে আসা। এটা কি সম্ভব? সরকারের ভেতরে/বাইরে এমন কেউ কি আছেন, যার এই সৎ সাহস বা দুঃসাহস আছে যে, তিনি বুকে হাত রেখে বলতে পারেন, হ্যাঁ, ভারতের কাছ থেকে আমরা আমাদের বেরুবাড়ি উদ্ধার করে ছাড়বো? যদি না পারেন, তাহলে তো ৩য় সংশোধনী বাতিল করা যাবে না। আর সেটা করতে না পারলে বাহাত্তরে যাওয়া যাবে কেমন করে? মাননীয় আইনমন্ত্রী মহোদয় কি একটু বুঝিয়ে বলবেন?


তিন \
      সংবিধানে বিস্মিল্লাহ থাকবে কি থাকবে না-এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলছে। যদিও চার মূলনীতির অন্যতম নীতি-সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাসের কথাই যদি ছাটাই করে দেয়া হয়, তাহলে বিসমিল্লাহ তাকলেই কি আর না থাকলেই কি? আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিরতীহীনভাবে বলে চলেছেন সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম থাকছে। এ নিয়ে বিভ্রান্তির কোনো অবকাশ নেই। দেশের ৮৮% মানুষ প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে বিশ্বাস রাখতে চাইছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তার কথা রাখবেন, জাতির সাথে প্রতারণা করবেন না, পরে এমন কোনো কথা বলবেন না যে, আমি কী করবো? আদালতের রায়ের বাইরে আমি যাই কী করে! আমি তো আর আইনের উর্দ্ধে নই-আপাতত এই ভরসা রাখা ছাড়া উপায় কী?


      আসলে উড়ে এসে জুড়ে বসা (ওবায়দুল কাদের এর ভাষায় আওয়ামীলীগেরচে’ বড় আওয়ামীলীগার) কিছু রাজনৈতিক বসন্তবাদীরা সরকারকে বিভ্রান্ত করছেন। এরা সংখ্যায় খুবই কম । সারা জীবন এতিমের মতো মাইবাপহীন রাজনীতি করা অই জ্ঞানপাপী লোকগুলো হঠাৎ করে আওয়ামীলীগের অনুকম্পায় মস্ত্রী-এমপি হয়ে এখন রীতিমতো ধরাকে সরা ভাবতে শুরু করেছেন। অল্প জলের মাছ হঠাৎ বেশি জলের নাগাল পেয়ে গেলে ছটপটানিটা যেমন একটু বেশি করে, এক্ষেত্রেও হয়েছে তাই। এই লোকগুলোকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যত তাড়াতাড়ি চিহ্ণিত করতে পারবেন, ততই মঙ্গল। দেশের জন্যও, উনার নিজ দল আওয়ামীলীগের জন্যেও।


চার \
      ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ হচ্ছে। আবার ধর্মীয় রাজনীতি থাকছে। দু’টিই সরকারি ভাষ্য। আর এই ইস্যুতে মাননীয়  আইনমন্ত্রী মহোদয় সবচে বেশি পেরেশান। দিনে এক কথা বলেন তো রাতে অন্য কথা। তবে বাংলাদেশের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল, বিশেষত ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো আশ্বস্থ হতে পারে এই ভেবে যে, শেষোক্ত মন্তব্যটি রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। আমার জানামতে পৃথিবীতে এমন কোনো ধর্ম নেই যে ধর্মে শান্তি শৃঙ্খলা ও পরমত সহিষ্ণুতার কথা বলা হয়নি। একজন মানুষের ভেতরে যে মানবিকতা ও সুস্থ বিবেকবোধ থাকে, তা অই ধর্মীয় অনুভূতির কারণে। এই অনুভূতি যতক্ষণ জাগ্রত থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সেই মানুষ সমাজের জন্য কল্যাণকর হবে। আর যখন এই অনুভূতিটুকু থাকবে না, তখন সেই মানুষ আর পশুতে কোনো ব্যবধান আর থাকবে না। 


     ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিয়ে কথা বলবার আগে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা দাঁড় করানো উচিৎ ছিলো। পরিষ্কার হওয়া দরকার ছিলো ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বলতে কী বুঝানো হবে? যদি বলা হয় নামের মধ্যে আরবি শব্দ থাকতে পারবে না, তাহলে সমস্যা আওয়ামীলীগেরও আছে। ‘আওয়াম’ আরবি শব্দ। যদি বলা হয় রাজনীতিতে আল্লাহ রাসুল বা ইসলাম শব্দ মুখে আনা যাবে না, তাহলে তো এটা হবে আত্মঘাতি ব্যাপার। একই সাথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনারও পরিপন্থী। ভুলেগেলে তো হবে না, ৭ই মার্চ ১৯৭১ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু ধর্মীয় অনুভূতিকেই ব্যবহার করেছিলেন । জাতিকে স্বাধীনতার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ’। 


      যদি বলা হয় ধর্ম প্রচারে বাধা নেই। বাধার প্রশ্ন আসবে রাজনীতিতে ধর্মকে ব্যবহার প্রসঙ্গে। এই যদি হয় অভিযোগ, তাহলে তো অবস্থা হবে আরো জটিল। প্রথমে নির্ণয় করতে লাগবে ধর্মের প্রচার কাকে বলে আর ব্যবহার কাকে বলে? রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করাকেই যদি রাজনীতিতে ধর্মকে ব্যবহার বুঝানো হয়, তাহলে এই কাজ তো আওয়ামীলীগ-বিএনপিও করে। সকল দলই কিছু না কিছু করে। বিশেষত নির্বাচনের সময়। আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কি নির্বাচনের আগে হেজাব-তসবীহ ব্যবহার করেন নি? বেগম খালেদা জিয়া কি নির্বাচনের আগে কখনো উমরা মিস করেন? এরশাদ সাহেবের মাথা থেকে কি টুপি নামে? 


     কথায় কথায় ইউরোপ-আমেরিকার উদাহরণ টানা হয়। আমাদের নেতারা কি দেখছেন না ইউরোপ-আমেরিকাসহ উন্নত বিশ্বের সবগুলো গণতান্ত্রিক দেশেই ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল আছে। ধর্ম নিরপেক্ষতার সবক যেখান থেকে নেয়া হয়েছে, সেই ভারতে যতগুলো ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল আছে, আমাদের দেশে ততটি রাজনৈতিক দলই আছে কি না- সন্দেহ। ভারতে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো বার বার বাষ্ট্র পরিচালনাও করছে। তাহলে .......?  অবশ্য ধর্মীয় রাজনীতি মানে যদি হয় ইসলামী রাজনীতি, তাহলে ভিন্ন কথা।


পাঁচ \
      সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের ব্যাপারে বাস্তবমুখি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা দরকার বলে বিজ্ঞজনেরা মনে করছেন। ৭০ অনুচ্ছেদে বলা আছে, “কোন নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে মনোনিত হইয়া কোন ব্যক্তি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন, অথবা সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তাহা হইলে সংসদে তাঁহার আসন শূন্য হইবে।” এই ধারাটি একই সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। ৩৯(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তাদান করা হইল।’ ৩৯ এর ২ এর ক’ তে গিয়ে বলা হয়েছে, “প্রত্যেক নাগরিকের বাক্ ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের...নিশ্চয়তা দান করা হইল।”
যিনি সংসদ সদস্য, তিনিও তো একজন সম্মানিত নাগরিক। উনারও তো নিজস্ব বিবেকবুদ্ধি ও চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। তিনি এমপি হয়েছেন বলে নাগরিক অধিকার হতে বঞ্চিত হবেন, এটা তো হতে পারে না। এখন সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে একজন সংসদ সদস্য ব্যক্তিগত মত প্রকাশ ও ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোর অধিকার রাখেন। আবার  ৭০ অনুচেছদের কারণে বাধাগ্রস্থ হন।
 বিষয়টির যৌক্তিক শুরাহা হওয়া দরকার। যদি মনে করা হয় একটি রাজনৈতিক দলের ব্যানারে নির্বাচিত হওয়া মানে নিজের বিবেক-বুদ্ধিকে সংশ্লিষ্ট দলের কাছে ৫ বছরের জন্য বন্ধক রেখে দেয়া, তাহলে ৩৯ অনুচ্ছেদের সাথে এই কথাগুলোও যুক্ত করে দেয়া দরকার....“তবে শর্ত থাকে যে, তিনি যদি কোনো রাজনৈতিক দলের ব্যানারে নির্বাচিত এমপি হন, তাহা হইলে তিনি এই মৌলিক অধিকার হইতে বঞ্চিত হইবেন।” আর যদি মনে করা হয় সকল নাগরিকেরই স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার থাকা দরকার, তাহলে ৭০ অনুচ্ছেদটি সংবিধান থেকে বিলুপ্ত হওয়া উচিৎ বলে আমরা মনে করি। আর সেটা করা হলে সংসদ অনেক বেশি জবাবদিহিমূলক ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আমাদের বিশ্বাস। যে কোনো সরকারই সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে যে কোনো আইন পাশ করিয়ে নিতে পারবে না। 
শেষ কথা ঃ  আমাদেরকে আগে ঠিক করতে লাগবে মানুষের জন্য সংবিধান নাকি সংবিধানের জন্য মানুষ। যদি মানুষের জন্যই সংবিধান হয়, তাহলে সংবিধানে অবশ্যই দেশের মানুষের ইচ্ছা ও চাহিদার প্রতিফলন ঘটাতে হবে । সংবিধান হচ্ছে একটি দেশের শাসনতান্ত্রিক রক্ষা কবজ। জাতির আশা-আকাঙ্খার প্রতীক। সংবিধান কোনো ব্যক্তির নয়, দলের নয়, সংবিধান দেশের। সঙ্গত কারণেই সংবিধানে জাতির প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটা দরকার। এ জন্য আমরা মনে করি বাটি চালান দিয়ে বাহাত্তরের সংবিধানকে খুঁজে বের করার দরকার নেই। আমরা আছি দুই হাজার দশে। ৩৮/৪০ বছর পেছনে কেন, আমাদের তো তাকানো দরকার ৪০ পরের দিকে। ২০৫০ সালের উপযোগী করে সংবিধান তৈরি করার কথা কেন ভাবতে পারছি না আমরা? সংবিধান সংশোধনের এই কাজটি রাজনৈতিক মতপার্থক্যের উর্দ্ধে উঠে করা না গেলে যা-ই বলা হোক আর যেভাবেই বলা হোক. আগামীর সরকার এটাকে আওয়ামী সংবিধানই বলবে। আমরা দেশবাসী একুশ শতকের উপযোগী চমৎকার একটি সংবিধানের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছি।                                                                                                                  

শুক্রবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১০

মা, আজ কি আমরা মাংশ খাব না ?

ছোট্ট ছেলে, বয়ষ আট। সকাল থেকেই ঘুরঘুর করছে মায়ের আঁচল ধরে। কিছুক্ষণ পর পর মাকে বলছে, 
মা, আজ সকলের ঘরে মাংশ রান্না হচ্ছে। আমরা কি আজ মাংশ খাবো না । 
মা তাকাচ্ছেন ছেলের মুখের দিকে, বলছেন-হবে বাবা, হবে। তোর বাপ মাংশ আনতে গেছে। এলেই রান্না হবে। একটু সবুর কর বাবা, একটু... 
ছেলেটি ছোখ থেকে সন্দেহ দূর হয় না। এমন আশ্বাস সে অনেক দিথেকেই শুনে আসছে। তাই আশ্বাসে আর বিশ্বাস রাখতে ভরসা পাচ্ছে না। 


আমাদের সমাজের অসহায় ও গরীব সেই অংশটি, যারা জীবনে কখনো দু'দিনের খাবার কখনো একত্র করতে পারেনি! মাংশের গন্ধ যারা ভুলেই গেছে। সারাটা বছর ধরে এই একটি দিনের জন্য অপেক্ষা করে ওরা। আজ ঈদ। আজ ধনীরা কুরবানী করবেন। গরীবকে মাংশ দেবেন। তৃপ্তি করে খাওয়া হবে। 


এবং দু'টি দৃশ্য 

দৃশ্য নং-১ 
লোকটি কিছু মাংশ নিয়ে বাড়ি ফিরেছে। সামান্য কিছু মাংশ। কেজি দু'এক হবে। তা দেখেই তার ছোট্ট বাচ্চাদুটি'র কি চীৎকার ! কী লাফালাফি! ছেলেদের এই আনন্দ দেখে লোকটির চোখে পানি এসে গেলো। সে মনে করতে পারল না শেষবার সে কবে তার সন্তানের মুখে হাসি দেখেছিলো! তৃপ্তির হাসি ! 

দৃশ্য নং-২ 
লোকটি মাথা নিচু করে বাড়ি ফিরে আসছে।ব্যাগ খালি। সে কিছু পায় নি। কেউ তাকে দেয় নি কিছু। বাড়ি আসতেই বাচ্চাদুটি দৌঁড়ে এসে ঘীরে ধরে লোকটিকে। 
বাপজান, মাংশ কই? 

লোকটি জবাব দেয় না। চোখ থেকে তখন ঝরঝর করে পানি পড়তে থকে । মাথা নিচু করে ফেলে সে। নিজেকে একজন ব্যর্থ পিতা বলে ধীক্কার জানাতে থাকে। তারপর ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে আকাশের দিকে।নিরবে। কিছু বলে না। শুধুই তাকিয়ে থাকে। চোখের পানি এক সময় মাটি স্পর্শ করে। 

আজ ঈদ। সামর্থবানরা কুরবানি দিয়ে ফেলেছেন। এখন সম্ভবত চলছে কাটাকাটি ও বাটাবাটির কাজ। ইতিমধ্যেই মগজ- কলিজি ধরনের লোভনীয় অংশগুলো চলে গেছে রান্না ঘরে। কিছুক্ষনের মধ্যেই আয়েশ করে খাওয়া হবে। 
কিন্তু আমরা কি মনে রেখেছি অদের কথা? । লজ্জার মাথা খেয়ে এতটুকু মাংশের আশায় ঘুরে বেড়ায় মানুষের দরজায় দরজায়। আমরা কি জানি উপরের দৃশ্যগুলো আমার দেশের অতি বাস্তব দৃশ্য । আমরা কি জানি, আমরা চাইলেই পারি অসহায় অই মুখগুলোতে একটি দিনের জন্য হলেও হাসি ফোটাতে। আমরা কি পারি না ডীপের গলা অব্দি জ্যাম না করতে অদের থলিকে একটু ভারি করে দিতে। 
পারিনা? 

তবুও ঈদ

একটি পশু আরেকটি পশুকে হত্যা করেনা 
কিন্তু মানুষ মানুষকে হত্যা করে। 
আমার দুর্ভাগ্যযে, আমি একজন মানুষ! 

একটি পশু আরেকটি পশুর জন্যে জীবন দেয় না, 
মানুষ মানুষের জন্যে জীবন দিয়ে দেয়, 
আমার সৌভাগ্যযে, আমি একজন মানুষ। 

মানুষে আর পশুতে বেসিক পার্থক্যটা হচ্ছে, মানুষের বিবেক আছে, পশুর নেই। সেই বিবেকটুকুই যদি মানুষ হারিয়ে ফেলে, তাহলে মানুষে আর পশুতে ব্যবধান থাকলো কি? 

একদিন পরে, রাত পোহালেই ঈদ, ইদ উল-আযহা। সামর্থবান মুসলমান পশু কুরবানি করবেন। গরু- মহিষ-খাসি। কেউ আবার দুম্বা। ক্ষমতা থাকলে উট। অনেকেই কুরবানির মাংশ গরীবকেও ভাগ দেবেন আবার কেউ কেউ ডীপ ফ্রীজের গলা পর্যন্ত জ্যাম করে রাখবেন। 

গরীব মানুষ, অসহায়, অনেক দিন হলো যাদের ঘরে ভালো রান্না হয় নি, মাংশের গন্ধটাই ভুলে গেছে যাদের কেউ কেউ, যারা সারাটা বছর ধরে অপেক্ষা করে এই ঈদে একটু মাংশ খাবে বলে, তাদের কথা কি আমাদের মনে থাকবে? আমরা কি আমাদের মানবিক বিবেকটাকে কাজে লাগাব? আমরা কি প্রমাণ করতে পারবো আমরা মানুষ,শ্রেষ্ট জীব! 
আমরা কি মন থেকে গেয়ে উঠতে পারবো- 
সকলের জন্য সকলে আমরা 
প্রত্যেকে আমরা পরের তরে ! 

আমরা কি পারবো এবারের ঈদে পশু কুরবানির সাথে সাথ্র আমাদের ভেতরের পশুগুলকেও কুরবানি করে ফেলতে! 
যদি পারি, ঈদ ঠিক আছে 
যদি না পারি, কিসের তবে ঈদ! 
কিসের কুরবানি! 

সোমবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১০

কার ঈদ কেমন !

      ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ, জানি সবাই। আসলেই কি তাই?
      তাহলে কার খুশি?  কাদের জন্য আনন্দ?
             বিশেষ কোনো গুত্রের?
             পয়সাঅলাদের?
             সাদা-কালো- বেগুনি মিলিয়ে প্রচুর টাকা আছে, তাদের?
             ক্ষমতা নামের সোনার ডিম দেয়া মুরগি আছে, তাদের?
             শ্রমিকের ঘামকে সিড়ি বানিয়ে আরো উপরে উঠার কায়দ-কানুন শিখছেন, তাদের?
            কার তবে??
‘      ঈদ সকলের’ একথা বলার সুযোগ নেই। কথা ও কাজে তাহলে মিল হবে না।
নজরুল তো আর এমনি এমনি বলে যান নি,
             জীবনে যাদের হর রোজ রোজা
                           ক্ষুদায় আসেনি নিদ
                 আধমরা সেই গরীবের জন্য
                        এসেছে কি আজ ঈদ?
 তাহলে চলুন খুঁজে দেখি কার ঈদ কেমন?


রাষ্ট্রপতির ঈদ
     বাংলাদেশের নাম্বার ওয়ান পার্সন হলেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি। যদিও সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি শাহাব উদ্দিনের ভাষায়; মিলাদ মাহফিলে অংশগ্রহন ও কবর জিয়ারত করা ছাড়া এদেশের রাষ্ট্রপতিদের তেমন কোনো কাজ থাকে না। সেটা ভিন্ন কথা। ঈদের দিনে বঙ্গভবনের দরজা-জানালা খুলে দেয়া হয়। এলিট পাড়ার মানুষ লাইন ধরে প্রবেশ করতে থাকেন বঙ্গভবনে। সদর দরজায় দাঁড়িয়ে থাকেন মহাসমান্য রাষ্ট্রপতি, স্ব-স্ত্রীক। আগন্তকদের সাথে হেন্ডশেক করেন। কারো ভাগ্য প্রশস্থ হলে রাষ্ট্রপতির সাথে কোলাকুলির সুযোগ ঘটে। সম্ভবত হেভি খাওয়া- দাওয়াও হয়। আর এই পুরো অনুষ্টানটিকে মিডিয়ার মাধ্যমে জাতির সামনে তুলে ধরা হয় রাষ্ট্রপতির ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় নামে। বরকতি এই কাজটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও করেন।


প্রধানমন্ত্রীর ঈদ
      ইদ উল ফিতর হলে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায় পহেলা রমযান থেকেই। পহেলা রমযানেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পঙ্গু বিধবা ও আলেমদের নিয়ে ইফতার করেন। পনেরো রমযানের পর থেকেই সমাজের বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণীর মানুষের কাছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে ঈদ শুভেচ্ছা বা ঈদ কার্ড পৌঁছুতে থাকে। একটি কার্ড বিরুধীদলীয় নেত্রীর ঠিকানায়ও যায়। অবশ্য সমাজের বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণী বলতে যাদের মেরুদন্ড শক্ত,পকেট গরম. তাদেরকে বুঝতে হবে। আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য মিডিয়ার মাধ্যমে ঈদ শুভেচ্ছা।
 ঈদ উল অযহায় কুরবানি করার পর সারাদিনই সময় দিতে হয় দলীয় নেতাকর্মীদের, যাদের পোষাকি নাম জনগণ। উভয় ঈদেই ঈদের দিনটিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অত্যন্ত ব্যস্ত সময় কাটাতে হয়। দলীয় নেতাকর্মী, কুটনীতিকগণ, সম মনা রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীর সাথে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। আর আমরা সাধারণ জনগণ টেলিভিশনে সেটা বসে বসে দেখি।


বিরোধীদলীয় নেত্রীর ঈদ
    ইদ উল ফিতর এর ক্ষেত্রে মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রীও ব্যস্ত হয়ে পড়েন পহেলা রমযান থেকে। প্রথম রমযান তিনি ইফতার করেন এতিম ও আলেমের সাথে। উনার পক্ষ থেকেও একটা ঈদকার্ড প্রধানমন্ত্রীর কাছে যায়। ঈদ উল অযহায় কুরবানি করার পর সারাদিনই সময় দিতে হয় দলীয় নেতাকর্মীদের, আর এই হযরতদেরও পোষাকি নাম জনগণ।  ঈদের দিন ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি ঈদের পর আন্দোলনের মাঠ কীভাবে গরম করা যায়, সেটা নিয়েও হালকা আলাপ-আলোচনা চলে।
পাঠক, একটি ব্যাপার কি লক্ষ্য করছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধীদলীয় নেত্রীর মাঝে  কোনো ব্যপারেই মিল না থাকলেও এই একটি ব্যপারে কিন্তু অদ্ভুত মিল! দ’ুজনেই এতিম ও পঙ্গুর সাথে আলেমদের নিয়ে একত্রে ইফতার করেন। আলেমদের সামাজিক অবস্থানের দিকে সেটা কোনো ইঙ্গিত কি না, ভেবে দেখবার বিষয় হতে পারে।
                                      ( অবশ্য এবারের ঈদের কথা আলাদা)


মন্ত্রী-এমপিদের ঈদ
     এদেশের মহা ভাগ্যবান কিছু মানুষ আছেন যারা সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মেছেন। তারা হলেন মন্ত্রী- এমপি। ঈদের দিন তারা চেষ্টা করেন নিজ গ্রামের বাড়ি তথা নির্বাচনি এলাকায় থাকতে। যারা তাদের ভোট দিয়ে নেতা বানিয়েছে, তিনি যে তাদের ভুলে যান নি, অতি সুক্ষèভাবে প্রমাণ করতে চেষ্টা করা। আমরা সহজ সরল জনগণ সেটা আবার বিশ্বাসও করি। আমাদের মন্ত্রী- এমপিরা যে জনগণের জন্য গভীর মমতা রাখেন. সেটা প্রমাণ করতে বছরের দুই ঈদে তারা হাজির হন সাধারণ মানুষের মাঝে।


ব্যবসায়ীদের ঈদ
       দেশের বড়বড় ব্যবসায়ী যারা, অর্থাৎ যারা দেশের সার্বিক অর্থনীতির উপর প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা রাখেন, সিন্ডিকেট করে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেন, অর্থাৎ প্রকৃত অর্থে বাজার ব্যবস্থা যারা নিয়ন্ত্রন করেন, তাদের কথা আলাদা। তাদের বেশিরভাগই ঈদ করেন দেশের বাইরে। অবশ্য বাইরে যাবার আগে গরিব-দুঃখি মানুষের জন্য যে কিছুই করে যান না, সেটা বলা বে-ইনসাফি হবে। মাইকে ঘোষনা দিয়ে কয়েক হাজার গরিব মিসকিনকে এনে জড়ো করেন। বিশেষ আমন্ত্রনে ডজন খানেক মিডিয়ার ক্যামেরাও হাজির থাকে। তারপর দু’তলার বেলকনি থেকে কয়েকশ’ শাড়ি-লুঙ্গি ছুড়ে দেন কয়েক হাজার মানুষের দিকে। কাপড় কুড়াতে গিয়ে পায়ের তলায় পিষ্ট হয়ে মারা যায় কেউ কেউ।
মধ্যম শ্রেনীর ব্যবসায়ী যারা, ঈদের রাত পর্যন্ত তাদের ব্যস্থ থাকতে হয় দোকানদারি নিয়ে। কেউ কেউ তো আবার ঈদের দিনেও দোকান খোলা রাখেন। তারা তাদের বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে মোটামুটি ভালোই কাটান ঈদের দিনটি।


ইমাম- মুয়াজ্জিনের ঈদ
      এই মানুষগুলোর অবস্থা বেশ করুণ! ইমাম মানে নেতা। এই নেতার নেতৃত্বে নামাজ আদায় করা হয়।  ইমাম সাহেব সামনে থাকেন। বাকি সকল মুসল্লি, তা তিনি রাষ্ট্রপতি হোন, মন্ত্রী-এমপি হোন অথবা সাধারণ কেউ, সবাইকে পেছনেই দাঁড়াতে হয়। অথচ আমাদের দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ইমাম মুয়াজ্জিনকে প্রাপ্য সম্মান দেওয়া হয় না। বিশেষত বেয়াদব টাইপের কিছু মুতাওয়াল্লি-সেক্রেটারি আছেন, যারা ইমাম মুয়াজ্জিনকে অনেকটা কর্মচারির মতো মনে করেন। তারা ভুলে যান তারা মসজিদ পরিচালনা কমিঠির সভাপতি বা সেক্রেটারি। ইমাম সাহেবের নন।
      ঈদ উপলক্ষে এই মানুষগুলোর ছুটি নেই। যুক্তি সঙ্গত কারণ আছে হয়তো। মুয়াজ্জিন সাহেবকে ছুটি দিলে আযান দেবে কে? ইমাম সাহেবকে ছুটি দিলে নামাজ পড়াবে কে? সে জন্য ঈদের দিনটিতে তাদের আর বাড়ি যাওয়া হয় না। প্রিয় সন্তানকে কাছে ডেকে একটু আদর করা হয় না। আবার অনেক মসজিদে ঈদের বোনাসটা পর্যন্ত দেয়া হয় না। সামান্য যে কয়টা টাকা বেতন পান, সেটাই পাঠিয়ে দেন বাড়িতে। তার পরেও বিস্ময়কর ব্যপার হলো, অন্যান্য পয়সাওয়ালা লোকদেরচে’ তাদের সংসারটা আবার ভালোই চলে!


ডাক্তারের ঈদ
     আমাদের দেশে ডাক্তারদের রোজগারপাতি মাশাল্লাহ খারাপ না। অন্য যেকোনো ব্যবসারচে’ ভালো ও লাভজনক।। সরকারি-বেসরকারি চাকরি, ক্লিনিকের ইনকামসহ অন্যান্য উপরি ইনকাম মিলিয়ে একজন ডাক্তারের পকেটে প্রচুর টাকাপয়সা আসে। আমি অত্যন্ত দুঃখিত,ডাক্তারির মতো মহান একটি পেশাকে আমি ব্যবসার সাথে তুলনা করে ফেলেছি। কী করবো, আজকাল অধিকাংশ ডাক্তারদের কাছেই ডাক্তারি আর সেবামূলক পেশা নয়, রীতিমতো ব্যবসা।
  ঈদ উপলক্ষে বড়বড় ডাক্তাররা সবাই ছুটিতে চলে যান। এই সময় অসুস্থ রোগীরা হাসপাতালে বড়বেশি অসহায় অবস্থায় সময় কাটায়। ইমার্জেন্সি রোগীরা যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে কিন্তু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নাগাল পায় না। অবশ্য করারও কিছু নেই। আফটার অল ডাক্তাররাও তো সামাজিক মানুষ। তাদেরও তো একটা পার্সোনাল লাইফ আছে। সব মিলিয়ে ডাক্তারদের ঈদ বেশ ভালোই কাটে।


রোগীদের ঈদ
     রোগী দুই প্রকার। ঘরের রোগী, হাসপাতালের রোগী। অসুস্থ হয়ে বাসায় পড়ে থাকলে এক কথা। তাদের দিকে ঘরের মানুষ একটু খেয়াল দেয়। খেয়ালের পরিমাণটা নির্ভর করে রোগীর প্রভাবের উপর। কিন্তু যারা হাসপাতালের বেডে বা মেঝেতে পড়ে থাকে, তাদের অবস্থা বড় করুণ! যদিও ঈদ উপলক্ষে একটু ভালোমন্দ খাবারের ব্যবস্থা করা হয়, কিন্তু শরীরে শান্তি না থাকলে খাবার দিয়ে কী হবে? আত্মীয়-স্বজন থাকলে হাসপাতালে টিফিন যায়। যাদের কেউ নেই, তাদের জন্যে কেউ যায় না। তারা তখন ফ্যাল্ ফ্যাল্ করে তাকিয়ে থাকে শুধু। শারীরিক কষ্টের সাথে তখন যোগ হয় মানসিক কষ্ট।


পুলিশের ঈদ
      যদিও ঘুষ দুর্নীতি করে করে একশ্রেণীর পুলিশ গোটা পুলিশ বাহিনীর ইমেজকে একেবারে তলানিতে এনে ঠেকিয়েছে। তবে সৎ ও নিষ্টাবান পুলিশ কিন্তু এখনো আছেন। আর আছেন বলেই আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রের শাসনকাঠামোটা এখনো ভেঙে পড়ে নি। কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে ঈদ উপলক্ষে পুলিশের ছুটি নেই। ঈদের দিনেও তাদের ডিউটি করতে হয়। আমরা বাঙালিরাযে ঈদের দিনটিতে মারামারি করবো না, তার নিশ্চয়তা তো আমরা নিজেরাই দিতে পারি না। ঈদগাহের দখল নিয়ে পর্যন্ত রক্তপাতের ঐতিহ্য আছে আমাদের। যার ফলে পুলিশের লোকগুলোকে বেতনের সময় হলে বেতন এবং বোনাসের টাকাগুলো বাড়িতে পাঠিয়ে একা একা ঈদ করতে হয়। ঈদ করা মানে ডিউটির ফাঁকে একটু সেমাই খাওয়া আর কি!


সন্ত্রাসীদের ঈদ
      সারা বছর মাস্তানি করলেও ঈদের দিনে দামি পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে সন্ত্রসীরা গিয়ে হাজির হয় ঈদগাহে। নামাজের পরে গণ-কোলাকুলির মাহফিলে মাস্তান বাবাজিকেই বেশি ব্যস্ত দেখা যায়। সকলেই এক ধরণের তোয়াজমাখা মনোভাব নিয়ে তাদের সাথে মেশেন। সবচে’ বেশি সালাম এরাই পায়। চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ অন্যান্য সুকর্মগুলো করে করে উর্ধ্বতন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে বাট দেবার পরও তাদের কাছে যে পরিমাণ পয়সা থাকে, তাতে । অনায়াশেই পরবর্তী ঈদ পর্যন্ত তারা ঘরে বসে খেতে পারে। তবে এতোটা অলস তারা নয়। ঈদের পরপর যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি তারা আবার কাজে নেমে পড়ে।


কয়েদীদের ঈদ
    জীবন্ত যারা কবরে আছে.তাদের নাম কয়েদী। কারাগার হচ্ছে জীবন্তদের কবর। সাত বছর কারাভোগ করে বেরুনোর পর আল্লাহর নবী হযরত ইউসুফ আ.এর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিলো; কারাগার ব্যপারটি কেমন? তিনি তিনটি বাক্য বললেন।
     হাজা মানাযিলুল বল্ওয়া।
        তাজ্ররিবাতুল আস্দিকা।
            মাক্ববারাতুল আহ্ইয়া।
অর্থাৎ জেল বড়ই কষ্টের জায়গা। বন্ধুত্বের পরীক্ষার স্থল এবং জীবিতদের কবর।
ঈদের দিনে কয়েদিদের জন্য বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয় বলে শুনেছি।  তবে ঈদের আনন্দ তাদের স্পর্শ করে কি না, আমার জানা নেই। না করারই কথা। মা-বাবা, ভাইবোন, বউবাচ্চা ছাড়া একাকি চার দেয়ালের ভেতরে ভালো লাগার কোনো কারণ নেই। বিশেষত বিনাদোষে জেল খাটছে যারা।


ফেরারীদের ঈদ
     ফেরারীও আবার দুই প্রকার। মামলার কারণে ফেরারী, হামলার ভয়ে ফেরারী। এদের জীবন যাযাবরের মতো। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ঘুরে বেড়ায় তারা। জানে শান্তি থাকে না। বিড়ালের পায়ের আওয়াজ শুনলেই ভয়ে আত্কে উঠে তারা! ভাবে; পুলিশ এসে গেলো কি না! অপরিচিত কেউ তাকাচ্ছে দেখলে চমকে উঠে। ভাবে, প্রতিপক্ষ দলের লোক নয়তো? ঈদের আনন্দ থেকে তারা পুরোপুরি বঞ্চিত।


মহিলাদের ঈদ
      আমাদের সৌভাগ্যযে, আমাদের দেশের নারীরা একটু বেশি সহনশীল প্রকৃতির।  খাওয়ারচে’ খাওয়াতেই বেশি পঁছন্দ করেন তারা। রমযান থেকে দেখুন। রমযানের দুপুর থেকেই তাদের শুরু করতে হয় ইফতারি তৈরির কাজ। রোজা রেখে সারাটা দিন কাটাতে হয় জ্বলন্ত চুলোর কাছে। তারপর আবার কাঁচাচানায় লবনটা পরিমাণমতো না হলে ধমকও খেতে হয়! ইফতার করে সকল পুরুষ মানুষ পেট টাইট করে বেরিয়ে যায়। বাসন কোসন পরিস্কার করে ঐ মহিলাগগুলো তারাবির নামাজে দাঁড়ায়। তারাবির পর আবার হালকা থেকে মাঝারি ধরনের নাস্তার আয়োজন করে দিতে হয়। ভক্কর চক্কর করতে করতে এভাবেই অর্ধেক রাত শেষ। দ’ুএক ঘন্টা বিছানায় গড়াড়ড়ি করে অথবা স্বামীর বিশেষ সেবা(!)র প্রযোজন হলে সেখানেও সময় দিতে হয়। তারপর আবারো তাদের ব্যস্ত হয়ে উঠতে হয় সেহরী তৈরির কাজে। এভাবেই কেটে যায় পুরোটা মাস। তাও হাসিমুখে। ঈদের আগের রাতটি তাদের চলে যায় রকমারি পিঠা তেরির মহৎ কাজে।
    কুরবানীর ঈদে মসলা বাটা এবং রান্নাবান্না করার পেছনেই ব্যস্ত থাকতে হয় তাদের। দেখা যায় গরু কাটাকাটির কাজ তখনো শেষ হয়নি, এরই মধ্যে কর্তা মশাই কলিজি ভূনার জন্য চেঁচামেচি শুরু করে দিয়েছেন! বড় ছেলের আবার মগজ পছন্দ।  বাকিদের চাই গুশত ভূনা। আমার মাগুলোকে/বোনগুলোকে তখন প্রতি ঘন্টা একশ মাইল গতিতে কাজ চালাতে হয়। মেশিনের মতো। ঈদের দিন, সারাদিন তাদের কেটে যায় রান্নাবান্নার কাজে। বাকি সময় মেহমানদের আপ্যায়নে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ঈদের নতুন শাড়িটি পর্যন্ত গায়ে তোলার সুযোগ হয়ে ওঠে না।


শিশুদের ঈদ
      ঈদ কাহাকে বলে, উহা কতো প্রকার ও কী কী, সেটা শিশুদেরচে’ ভালো আর কে জানবে? ঈদের প্রকৃত আনন্দ শিশুরাই উপভোগ করে থাকে। ঈদের নতুন জামা-কাপড় কেনার পর সেগুলো স্ব-যত্নে লুকিয়ে রাখে। জান দিয়ে দেবে তবুও তারা সেগুলো ঈদের আগে কাউকে দেখতে দেবে না। ঈদের দিন তারা থাকে মহাব্যস্ত। অবশ্য আমি যাদের কথা বলছি, তারা পয়সাওয়ালা লোকের ভাগ্যবান বাচ্চা। গরীবের ছেলেমেয়ের কাছে ঈদ অন্য দশটা পাঁচটা দিনের মতোই আরো একটা দিন।


বুড়াবুড়ির ঈদ
       বয়স একটু বেশি হয়ে গেছ্।ে এই ধরেন ৭০/৮০। দু’একটি ব্যতিক্রম বাদ দিলে সংসারে তাদেরকে বার্ডেন মনে করা হয়। সারা জীবন  হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে গায়ের ঘাম পানি করে সংসারের জন্য একটু স্বচ্ছলতা আনতে চেষ্টা করে যাওয়া অই মানুষগুলোকে জীবনের শেষ সময়টুকু কাটাতে হয় বড় অযতেœ, বড় অবহেলায়। ঈদের দিন যখন বড় হয়ে যাওয়া সন্তান তাকে ঠিকমতো একবার এসে জিজ্ঞেসও করে না, তখন তারা বসে বসে ভাবতে থাকেন সেই দিনগুলোর কথা। একসময় এই ছেলেমেয়েগুলোর মুখে হাসি ফোটানোর জন্য তারা কত ক- ই-না করেছেন! ঈদের দিন নিজে না পরে সন্তানকে পরিয়েছেন। সন্তানের এক টুকরো হাসির জন্যে নিজের জানটা পর্যন্ত কুরবান করে দিতে তৈরি থেকেছেন। দিন কত তাড়াতাড়ি বদলে যায়!


টুকাইদের ঈদ
     টুকাইদের নিয়ে কেউ ভাবে না। একজন ভাবতেন। হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ। একটি বাচ্চা যে আল্লাহর কতো বড় নিয়ামত, সেটা তিনি ভালো করেই জানতেন। যে কারণে মাষ্টার শাদ’র মাঝেই তিনি সুখ খুঁজে নিয়ে সন্তুষ্ট হতে চেয়েছিলেন। এরশাদ সাহেব টুকাইদের জন্যে করেছিলেন পথকলি। এদেশে শেখ রাসেল স্মতি সংসদ আছে, জিয়া শিশু-কিশোর সংঘ আছে, এরশাদের পথকলিও আছে। আবার ছিন্নমূল বস্ত্রহীন টুকাইও আছে। আমি জানি না রাস্থায় পড়ে থাকা আশ্রয়হীন ওসব ছেলেমেয়েগুলোর জন্যে যদি কোনো পরিকল্পনাই না থাকবে, তাহলে সময় সময় সংশ্লিষ্ট সরকারকে তেল মারা ছাড়া অসব সংঘঠনের আর কাজটা কী?
টুকাইদের কাজ হচ্ছে রাস্তায় পড়ে থাকা ময়লা- আবর্জনার ভেতর থেকে বেচেঁ থাকার অবলম্বনটুকু খুঁজে বের করা। ঈদ তাদের কাছে আলাদা কিছু নয়। কাধে বস্তা ঝুলিয়ে এদিনও তাদের বেরুতে হয়। কারণ, তা না করলে পেটে খাবার ঝুটবে না। ঘরনাইদের জন্য আবার ঈদ!


রিক্সাওয়ালার ঈদ
       রিক্সাওয়ালাদের ইনকাম কিন্তু খারাপ না। ওরা যদি খাসলতটা ভালো করে পাঁচ বছর রিক্সা চালাতে পারতো, তাহলে নিজেই ৪/৫টি রিক্সার মালিক হয়ে যেতো। কিন্তু সেটা তারা করবে না। দিনে ৩শ টাকা রুজগার করলে রিক্সার রোজ দিয়ে ঘরের জন্য চাল-ডাল কিনবে। এবং অতি অবশ্যই সেকেন্ড ক্লাসের টিকেট কেটে সিনেমা হলে ঢুকবে।
কিছু কিছু রিক্সাওয়ালা ঈদের দিনেও রিক্সা নিয়ে বেরোয়। ঈদের দিন ভাড়া বেশি পাওয়া যায়। অবশ্য কিছু আছে বাস্তবিকই অসহায়। শরীর মানে না। তবুও তাদের বেরুতে হয়। রিক্সা টানতে হয় সারা দিন। ঈদের সারাটা দিন। সমাজের এই অসহায় অংশটি, দু’দিনের খাবার কখনো একত্র করতে পারে নি। তাই ঈদ তাদের জন্যে আলাদা কিছু নয়। অন্য দশটি- পাঁচটি দিনের মতোই একটি দিন।


চাকরীজীবির ঈদ
      হালকা থেকে মাঝারি ধরনের চাকরিজীবি যারা, অনেক টানাটুনি করে তাদেরকে ঈদের খরচ এডজাষ্ট করতে হয়। বেতন- বোনাস মিলিয়ে কোনো রকমে চালিয়ে নিতে চেষ্টা করেন। অবশ্য হাই লেভেলের চাকরিজীবি যারা, আমলা শ্রেণী, তাদের কথা ভিন্ন। এদেশে মন্ত্রীদেরচে’ আমলাদের ইনকাম ভালো। যাকে বলে মূলা থেকে মূলার ডাঁটি শক্ত!  দেখাযায় যত টাকা তারা বেতন পান, তারচে’ কয়েকগুণ বেশি টাকা তাদের খরচ হয় বিলাসিতার পেছনে। এই অতিরিক্ত টাকা কোথ্যেকে আসে, আল্লাহ মাবুদ ছাড়া কেউ জানে না। যদি জানতো, তাহলে কালে-ভাদ্রে হলেও নিশ্চই খোঁজ নিতো। এই প্রজাতির মানুষ সাধারণত বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে দেশের বাইরেই ঈদ করে থাকেন।


লেখকের ঈদ
        লেখকরা মোটামুটি ১০ রমযানের পর থেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বিভিন্ন পত্রিকার ঈদ সংখ্যার জন্য লেখার ফরমায়েশ থাকে। আবার প্রতিটি পত্রিকার জন্য লিখতে হয় আলাদা আলাদা ফিচার। এক্ষেত্রে সম্পাদক মহোদয়গণ আবার সেনসিটিভ। অন্য পত্রিকায়ও ছাপা হওয়া লেখা নিজ পত্রিকায় ছাপানোকে পত্রিকার স্বাতন্ত্র ও ইমেজ ভুলণ্ঠিত হবার মতো ঘটনা বলেই মনে করেন। লিখে খান-এমন লেখকের সংখ্যা সারা দেশে খুব বেশি হবে না। পয়সার বিনিময়ে লেখেন, এমন লেখকরা সাভাবিক কারণেই এক লেখা একাধিক পত্রিকাতে দেন না। দেয়া উচিতও না। কিন্তু ফ্রি লিখেন যারা, তারাতো চাইতেই পারেন অনেক কষ্ট করে লেখা তাদের ফিচারটি যত বেশি সম্ভব পাঠকের সামনে যাক।  


সাংবাদিকের ঈদ
      সাংবাদিকরা যে খুব একটা রিলাক্সড হয়ে ঈদ করতে পারেন, সেটা বলার সুযোগ নেই। ঈদের দিনের নানা ঘটনাবলি তাদেরকে পর্যবেক্ষন করতে হয়। বিশেষত ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিক। রাষ্ট্রপতি কোন্ ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করলেন,সেটার ছবি দরকার। মন্ত্রী-এমপিদের কে কোথায় ঈদ করলেন, সেটা জাতিকে না জানালে কেমন করে হবে? প্রিন্ট মিডিয়ার লোকগুলোকেও বেড়ানোর পাশাপাশি চোখ-কান খোলা রাখতে হয়। সংবাদ স্টক করে রাখতে হয়। মারাতœক কোনো নিউজ কভার করতে না পারলে এবং সেটা অন্য পত্রিকায় ছাপা হলে অনেক ক্ষেত্রে সম্পাদকের ধমকও হজম করতে হয়।

বড়লোকের ঈদ
      ভয়াবহ পরিমাণ সম্পদের অধিকারী অনেক মানুষ আছেন এদেশে। যাদের অনেকের পক্ষে তাদের টোটাল সম্পদের হিসাব মেলানো সম্ভব হয় নি। তারা নিেেজরাই জানেন না ব্যাংকে, শেয়ার মার্কেটে, লকারে, আলমিরাতে, ড্রামে, বালিশে, তোষকের ভেতরে তাদের কতো টাকা আছে? উনাদের কথা আমরাও জানতাম না যদি না ওয়ান ইলেভেন আসতো। আর কিছু করতে পারুক আর না পারুক, এই একটি কাজ কিন্তু ফখর উদ্দিন সরকার করতে পেরেছিলো। আমাদের গরিব এই দেশের  টাকাগুলো কোথায় আছে, মোটামুটি একটা ফিরিস্তি তুলে ধরতে পেরেছিলো।
ফিরিস্তি শব্দটা আসতেই একজন মানুষের কথা বিশেষভাবে মনে পড়ে গেলো। শব্দটা তিনি এতো বেশি ব্যবহার করতেন যে, আমার কাছে মনে হতো নিরীহ গোছের এই শব্দটি যেন তাঁর জন্যেই তৈরি। তিনি  সাইফুর রহমান। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা অর্থনীতিবিদ, আমাদের দেশের সর্বকালের সেরা অর্থমন্ত্রী জনাব এম সাইফুর রহমান। যিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। আজকের এই পরিসরে আমরা মানুষটির আতœার শান্তির জন্যে প্রার্থনা করতে পারি। করা দরকারও। আর কেউ জানুক আর না জানুক, আল্লাহপাক তো জানলেন, সিলেটবাসী অকৃতজ্ঞ নয়।

       যাদের কথা বলছিলাম। অর্থাৎ যারা প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করেন বিলাসিতায়। সুইজারল্যান্ড ছাড়া যাদের হলিডে উদযাপন করা হয় না। সিঙ্গাপুর ছাড়া যাদের বউ’য়ের শাড়ি পাওয়া যায় না। ইউরোপ-আমেরিকা ছাড়া সন্তানকে ভর্তি করার উপযোগী কলেজ পাওয়া যায় না। এবং অতি অবশ্যই ইফাম,ডরমিকম সিডাকসিন সেডিল জাতীয় অনেকগুলো ট্যাবলেটের সাহায্য না নিলে যাদের ঘুমও হয় না। টাকার পাহাড়ের চূঁড়ায় চড়েও, সুখের সাম্রাজ্য গড়েও এতটুকু শান্তির জন্যে ছটপট করছেন যারা, তাদের ঈদ তো বিশাল ব্যাপার-স্যাপার। উনারা আছেন বলেই তো ৪০/৫০ হাজার টাকা মূল্যের জুতোগুলি বিক্রি করার মানুষ পাওয়া যাচ্ছে। তারা না থাকলে, তাদের হাই ক্লাস কন্যারা না থাকলে লাখ টাকা মূল্যের জামাগুলো কে কিনতো! ব্যবসায়ীদের অবস্থা কী হতো?
ভয়াবহ পরিমাণের সম্পদের মালিক অই সকল মালদারদের বলি, বিশ্বাস করুন, খোদার কসম, এইযে বিশাল অর্থ ভান্ডার গড়ে তুলেছেন আপনি, চোখ বন্ধ করেন এবং দেখতে চেষ্টা করেন, দেখবেন কিছুই আপনার নয়। আপনি পৃথিবীতে থাকতেই উইল জাতীয় কাগজপত্র করিয়ে নিতে না পারলে আপনি মারা যাবার পর, কবরে আপনার লাশটি বাশি হবার আগেই আপনার সম্পদ ভাগ-বাটোয়ারা হয়ে যাবে। আপনি না যুক্তিবাদি মানুষ! আপনি না বাস্তববাদি! তাহলে এই ব্যাপারটি বুঝেন না কেনো?
অতএব, নিজের জন্যে কিছু করেন। স্রেফ নিজের জন্যে। আর এটা হতে পারে গরিব ও অনাহারীর মুখে খাবার তুলে দেবার মাধ্যমে। এক টুকরো কাপড় কিনে দেয়ার মাধ্যমে। গরিবকে ঈদের আনন্দে একটু শেয়ার করেন। আতœার প্রশান্তি আপনাকে আচ্ছন্ন করে রাখবে। অন্যকে খাবার দিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে দেখুন। তারপর বুকে হাত রেখে বলুন খেয়ে আরাম না খাইয়ে? একবার কাজটি করেই দেখেন না! আপনি বিস্মিত হয়ে আবিস্কার করবেন এমন আনন্দ এর আগে কখনো আর পান নি।


ফকিরের ঈদ
       ফকির আছে দুই কোয়ালিটির। এক, সত্যিকারের ফকির। যাদের ঘরে খাবার নেই। পরণে কাপড় নেই।  যে কারণে ঈদের দিনেও তাদের বেরুতে হয় ভিক্ষের থালা নিয়ে। এতটুকু খাবারের আশায় হাজিরা দিতে হয় মানুষের দরজায়। ভিক্ষে করে জীবিকা নির্বাহ করে যারা, ঈদ তাদের সামনে আলাদা কোনো বৈশিষ্ট নিয়ে হাজির হয় না। প্রাত্যহিক নিয়মে এ দিনও তাদের ঘুরতে হয় মানুষের বাড়ি বাড়ি। নিজের না হোক, বাচ্চা-কাচ্চার মুখের দিকে তাকিয়ে। ক্ষিধের অত্যাচার থেকে সাময়িক মুক্তির জন্যে হলেও তাদের বেরুতে হয় মানুষের এক টুকরো করুণার আশায়। সামান্য এই করুণাটুকুও আবার সবাই করে না।
      কিছু আছে পেশাদার ফকির। ভিক্ষাভিত্তিকে যারা পেশা বানিয়ে ফেলেছে। তাদের অনেকের ঘরে টেলিভিশন পর্যন্ত আছে। মোটামুটি চলনসই ফার্নিচার আছে। মোবাইল ফোনতো আর আছেই। ঈদ উপলক্ষে এরা অনেকগুলো শাড়ি-লুঙ্গির বন্দোবস্ত করে ফেলে। টেক্স-কমিশন ও ভাড়া-টারা দিয়েও তাদের হাতে প্রচুর টাকাপয়সা জমে যায়। সে জন্যে ঈদের দিনে এরা আর বের হয় না।  স্ত্রী পুত্র নিয়ে এনজয় করে কাট্য়া।


     সহজ সরল পাঠক কেউ থাকলে তিনি সম্ভবত টেক্স কমিশনের ঘটনাটি বুঝতে পারছেন না। এটা আরো এক জগত। এয়ারপোর্ট এলাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ভিক্ষে করার জন্যে প্রথমেই টাকাপয়সা খরচ করে যথাযত কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পারমিশন নিতে হয়। লিগ্যালিটি নিতে হয়। তারপর সারা দিনে যা ইনকাম হবে, তার ফিফটি পারসেন্ট দিয়ে দিতে হয়  তাদেরকে, যাদের দাপটে এলাকা তঠস্থ থাকে। কেউ যদি প্রশ্ন করেন, ফকিরের কাছ থেকে কমিশন খায়, এই ভালো বংশের মানুষগুলোর পরিচয় কী? জবাবে শুধু এটুকুই বলবো, এরা তারা, বাতাস যাদের অনুকুলে থাকে।
       চলুন এবারের ঈদে পশুর সাথে সাথে আমাদের ভেতরের পশুগুলোকেও কুরবানী করে ফেলি।  এবারের ঈদ আমাদের জীবনের শেষ ঈদ  হতেও তো পারে!

আবাগের সাথে বিবেকের দ্বন্দ্ব



        আমরা বাঙালিরা একটু বেশি আবেগপ্রবন জাতি। আমাদের আবেগের সাথে বিবেকের দ্বন্দ্ব লেগেই থাকে, হর-হামেশা। আর বরাবরই পরাজিত হয় বিবেক, আবেকের কাছে।
      এই মূহুর্তের টক টক দ্য কান্ট্রি হচ্ছে, বেগম খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থাকে উচছেদ করা। যদিও ঈদ সামনে থাকায় ব্যপারটি আপাতত ঝিমিয়ে আছে, তবে আশা (!)করা যায় ঈদের পরে আমাদের কপালে  দুঃখ আছে  অনেক । 
 
        বেগম জিয়াকে বারি থেকে উচ্ছেদের মধ্যদিয়ে পারিবারিক রেষারেষির রাজনীতির পালকে নতুন আরেকটি মাত্রা যোগ হলো। আবার কখনো বিএনপি ক্ষ্মমতায় এলে কী কী করা হতে পারে-আল্লাই জানে। এবং তারপর যদি আবারো আওয়ামীলীগ আসে...
         আজব এক দেশে বাস করি আমরা ! একই স্থান, বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে নাম হয় জিয়া উদ্দান, আওয়ামীলীগ থাকলে হয় চন্দ্রিমা ! একই মিলনায়তন, আওয়ামীলীগ হলে হয় বঙ্গবন্ধু সম্মেলনকেন্দ্র, বিএনপির সময় চীন-মৈত্রী !
      বিএনপি ক্ষমতায় এসে এম এ হান্নান বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন করে শাহ আমানত করলো। দরকার ছিলো না, তবুও। আওয়ামীলীগ এবারে একতরফা সংখ্যাগরিষ্টতা নিয়ে এসেছে। জিয়াকে করেছে শাহ জালাল। করবেই তো! রাজনৈতিক সহনশীলতার পাঠটি আমাদের রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের কাছে অপাঠ্যই থেকে গেছে যে!
       ৯৬ এর আওয়ামীলীগ শাসনামলে শেখ হসিনা-রেহানার নামে বরাদ্ধ নেয়া গণভবন বিএনপি ফিরিয়ে এনেছিলো। একই ধারাবাহিকতায় আজ খালেদা জিয়াকে বের করে দেয়া হলো ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে।  আসলে বাংলাদেশের রাজনীতিটা হয়ে দাঁড়িয়েছে দুই পরিবারের আবেগ-উচ্চ্ছ্বাশ, মান-অভিমান,হিংসা-প্রতি হিংসা ও প্রতিশোধের চারণভূমি। আমরা সাধারণ জনগন, আমরা যারা মুজিব সেনা বা জিয়ার সৈনিক নই, আমরা যারা পল্লিবন্ধুর ভারসাম্যহীন রাজনীতি বা আল্লাহর আইন চাই অয়ালা দল, কারো সাথেই নেই, আমরা যারা রাজনীতি করি না, আমরা যারা রাজনীতি বুঝি না, সেই আমরা হলাম রাজনীতির দাবার গুটি।  তারা দু'পক্ষ আমাদের নিয়ে খেলবেন। যেমন খুশি খেলবেন। ইচ্ছেমতো চাল দেবেন। আমরা বাধা দেবো না। সেই ক্ষমতা আমাদের নেই। তাদের বুদ্ধিদিপ্ত একটি একটি চালে আমরা হারিয়ে যেতে থাকব পৃথিবী নামক বোর্ড থেকে। 

    বিএনপি যে রাজনৈতিকভাবে কতটা দেউলিয়া হয়ে গেছে, নতুন করে আবার প্রমাণ করলো, ঈদের দু'দিন আগে হরতাল ডেকে। 
        তাও ইস্যু কী?
        দলনেত্রীর বাড়ি!!!
        ছোট মুখে বড় কথা হয়ে যাবে, তা নাহলে আমি বলতাম, বিএনপির নীতি নির্ধারকদের মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করার স্বার্থে দলের সাথে অলটাইম সময় দেবার জন্যে একটি সাইক্রিয়াটিষ্ট টিম রাখা দরকার। 
          হরতাল যদি ডাকতেই হতো, ইস্যুর কি অভাব ছিলো?
          বাড়ি নিয়ে কেনো??
          সারা বছর তো পড়েই থাকে, ঈদের সময়টাকেই কেনো বেছে নিতে হলো?

      আসলে আমাদের ভাগ্যটাই খারাপ। পাঁচ বছর আমাদের ঘাড়ে পড়বে বাঙালি হাতুড়ির বাড়ি, পাঁচ বছর বাংলাদেশি হাতিড়ির। এটাই আমাদের অবধারিত নিয়তি!  আমরা আমাদের বিবেক-বুদ্ধি, ক্ষমতা-সামর্থ, সবকিছু পাঁচ বছরের জন্যে ইজারা দিয়ে রাখবো। আমাদের কিছুই বলার থাকবে না! আমাদের কিছুই করার থাকবে না। উনারা দয়া করে আমাদের হাসতে বললে আমরা হসবো, কাঁদতে বললে কাঁদবো, ব্যস!    বাড়ি উচ্ছেদের প্রতিবাধে হরতাল ডাকলো বিএনপি। কোনো হরতালই সমর্থনযোগ্য না। তা যে কারণেই ডাকা হোক। প্রতিবাদের তো আরো অনেক ভাষা আছে।   আমার যদি সুযোগ থাকতো, তাহলে বেগম জিয়াকে বলতাম, 
 মাননীয় নেত্রী, 
   যখন বাড়িটি আপনাকে দেয়া হয়, তখন আপনি ছিলেন এতিম দুই ছেলে নিয়ে অসহায়! আর এখন তো আপনি বাংলাদেশের অন্যতম ধনী এক সন্তানের মা। এমন ১০ টা বাড়ি ১০ মিনিটেই কিনতে পারেন। যখন বুঝতেই পারলেন এই সরকার আপনাকে আর এ বাড়িতে থাকতে দেবে না, তখন  বাড়িটা আপনি আগেই ছেড়ে দিলে পারতেন। 

   মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেও আমার যদি সূযোগ থাকতো, তাহলে আমি বলতাম,  যেহেতু মামলাটি এখনো আদালতেই আছে, তাহলে সরকারকি পারতনা আরো ক'টা দিন অপেক্ষা করতে! ৪০ বছর অপেক্ষা করা গেলে কী হতো আরো কয়েকটা দিন অপেক্ষা করলে! ঈদের সময়টাতেই কেনো অসুন্দর এই কাজটি করতে হলো!
 মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
      আপনি একদিকে বলছেন, ক্যান্টনমেন্ট সংরক্ষিত এলাকা। সিভিলিয়ানদের থাকার জায়গা নয়। অত্যন্ত   খাঁটি কথা। কিন্তু আমরা আবার প্যাঁচ খেয়ে যাচ্ছি যখন আপনাকে বলতে শুনছি, শহীদ মইনুল রোডের এই বাড়িটি পিলখানা হত্যাযজ্ঞে নিহত অফিসারদের পরিবারকে দিয়ে দেবার কথা ! একাত্তরের কথা বিবেচনায় রাখলে পিলখানার অই অফিসারদের থেকে কি জিয়ার অবদান দেশের জন্যে কম ছিলো!
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
     বিএনপি আপনাদের কাছ থেকে গণভবন নিয়ে গিয়েছিলো।আপনিও ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি ফিরিয়ে আনলেন।তাহলে আগের সাথে তফাতটা হলো কোথায়? 
আপনি না দিন বদলের কথা বললেন!
এই কি তার নমূনা!!


রবিবার, ৭ নভেম্বর, ২০১০

Secret of success

     বলা হয়ে থাক,Industry is the mother of good luck, পরিশ্রম সৌভাগ্যের  প্রসুতি। অর্থাৎ সফলতার জন্য অবশ্য করনীয় ব্যাপারটি হল, Hard work  বা কঠোর পরিশ্রম।
     কথাটি বোধয় পুরো ঠিক  না। পরিশ্রমই যদি সৌভাগ্যের একমাত্র চাবিকাটি হত, তাহলে সারাদিন  হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খেটে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রিকসা চালায় যারা,  যারা ব্রিজে রিকসা ঠেলে, যারা ২ মনের চালের বস্তা কাধে নিয়ে কুঁজো হয়ে থাকে, তারা কিন্তু  কঠোর পরিশ্রমই করে। ওরা কি সফল ? তাদের কি ভাগ্যবান বলা যাবে? যদি না যায়, তাহলে তো স্বীকার করতেই হবে-Industry is the mother of good luck বাক্যটি যর্থাথ নয় ।
     আপাত দৃষ্টিতে আমরা মনে করি একজন সফল মানুষ যা করেন, তা করলেই বুজি  সফল হওয়া যায় ! ব্যাপারটি কিন্তু এমন নয়। এখন ক্রিকেটের যুগ। সুতরাং ক্রিকেট দিয়েই  উদাহরণ দিই।
       মনে করা যাক, শচীন ক্রিকেট ওয়ার্ল্ডের নাম্বার  ওয়ান ব্যাটসম্যান। এখন শচীনকে শচীন হতে গিয়ে  সহজাত প্রতিভা ছাড়া আর যা করতে হয়েছে, তা হল Hard work বা কঠোর পরিশ্রম। তাকে প্রতিদিন ২/৩ ঘন্টা  প্র্যাকটিস করতে হয়েছে। এখন কেউ যদি প্রতিদিন ৫/৬ ঘন্টা করে ব্যাটিং প্র্যাকটিস শুরু করে দেয়, তাহলে কি তার পক্ষে শচীন হয়ে যাওয়া সম্ভব? অথবা শচীনের চেয়ে গ্রেট কেউ?
     একজন সফল মানুষ সফলতার জন্যে যা করে, তা করলেই যদি সফল হওয়া যেত, তাহলে তো ক্রিকেট বিশ্বে প্রতি বছর দু’পাঁচ ডজন শচীনের জন্ম হত।
   তাহলে সফলতার মূল রহস্য কী ? What is the secret of success?
এ ব্যাপারে বলা যায়,
     একজন সফল মানুষ সফলতার জন্যে যা করেন, তা করাই সফলতার মূলমন্ত্র নয়। তেমনি  সফল মানুষ সফলতার জন্যে  কাজটি কীভাবে করেন- সেটাও গুরুত্বর্পূণ নয়। বরং সফলতার মূল মন্ত্র হচ্ছ. The real secret lise the fact that successful people formed the HABIT of doing things that failures dont like to do,  WHAY?
    সারর্মম হচ্ছে, অসফল ও ব্যর্থ লোকেরা যে কাজগুলো করতে অপছন্দ করে, সেই কাজগুলো করতে করতে সেটাকে অভ্যেসে পরিণত করে ফেলেন সফল লোকেরা। [sb]কেনো[/sb]? এই কেনো-ই হচ্ছে সফলতার মূল রহস্য।
      প্রতিদিন ভোরবেলা ঘুম ছেড়ে কষ্ট করে ২/৩ ঘন্টা প্রাকটিস করতে কারোই ভাল লাগে না। ৪০ বছরের শচীনেরও ভাল লাগে না। কিন্তু ভাল না লাগার এই কাজটি করাকে শচীন অভ্যেসে পরিণত করে ফেলেছেন যে কারণে, সেই কারণটি-ই হচ্ছে  সফলতার মূল মন্ত্র।

        ইতালির একজন বিখ্যাত  অর্থনীতিবিদ পৃথিবীবাসিকে একটি চমতকার সূত্র উপহার দিয়েছিলেন যা ৮০;২০(আশি অনুপাত বিশ) নামে পরিচিত। উনার দাবি ছিলো . এই পৃথিবীর মোট সম্পদের ৮০% সম্পদ ভোগ করে ২০% লোকে, আর অবশিষ্ট ২০% সম্পদ ভাগ হয় ৮০% লোকের মাঝে। যার ফলেই ধনি- গরিবের এই বৈষম্য।
        কারণ ব্যাখ্যায় তনি বলেছিলেন, পৃথিবীর ৮০% মানুষ Hard work  বা কঠোর পরিশ্রম করে মোট সম্পদের ২০% এর মালিক হয়। আর অবশিষ্ট ৮০% সম্পদ যে ২০% লোকে ভোগ কর, তারা কিন্তু  Hard work করে না। তারা করে Smart work  । আর Smart work  এর সংজ্ঞায় তিনি বলেছিলেন-
       S=Spacific
       M=Measurable
       A=Attainable
       R= Realistic
       T= Time bounding

       প্রথমত:  সফলতার টার্গেটকে  হতে হবে সুনির্দিষ্টপ। হতে হবে পরিমাপযোগ্য। সেই সাথে  টার্গেটকে হতে হবে অতিক্রমযোগ্য। হতে হবে বাস্তবসম্মত। সেই সঙ্গে নিজেকে একটি সময়ও বেধে দিতে লাগবে । এই পাঁচ বৈশিষ্টের সমন্বয়ে যারা কাজ করতে পারে, তাদের কাজকে  বলাহয়- Smart work । আর এটা এই পৃথিবীর মাত্র ২০% লোকেই করে থাকেন। আর তারাই ৮০%  সম্পদের মালিক হন।