আমরা বাঙালিরা একটু বেশি আবেগপ্রবন জাতি। আমাদের আবেগের সাথে বিবেকের দ্বন্দ্ব লেগেই থাকে, হর-হামেশা। আর বরাবরই পরাজিত হয় বিবেক, আবেকের কাছে।
এই মূহুর্তের টক টক দ্য কান্ট্রি হচ্ছে, বেগম খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থাকে উচছেদ করা। যদিও ঈদ সামনে থাকায় ব্যপারটি আপাতত ঝিমিয়ে আছে, তবে আশা (!)করা যায় ঈদের পরে আমাদের কপালে দুঃখ আছে অনেক ।
বেগম জিয়াকে বারি থেকে উচ্ছেদের মধ্যদিয়ে পারিবারিক রেষারেষির রাজনীতির পালকে নতুন আরেকটি মাত্রা যোগ হলো। আবার কখনো বিএনপি ক্ষ্মমতায় এলে কী কী করা হতে পারে-আল্লাই জানে। এবং তারপর যদি আবারো আওয়ামীলীগ আসে...
আজব এক দেশে বাস করি আমরা ! একই স্থান, বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে নাম হয় জিয়া উদ্দান, আওয়ামীলীগ থাকলে হয় চন্দ্রিমা ! একই মিলনায়তন, আওয়ামীলীগ হলে হয় বঙ্গবন্ধু সম্মেলনকেন্দ্র, বিএনপির সময় চীন-মৈত্রী !
বিএনপি ক্ষমতায় এসে এম এ হান্নান বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন করে শাহ আমানত করলো। দরকার ছিলো না, তবুও। আওয়ামীলীগ এবারে একতরফা সংখ্যাগরিষ্টতা নিয়ে এসেছে। জিয়াকে করেছে শাহ জালাল। করবেই তো! রাজনৈতিক সহনশীলতার পাঠটি আমাদের রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের কাছে অপাঠ্যই থেকে গেছে যে!
৯৬ এর আওয়ামীলীগ শাসনামলে শেখ হসিনা-রেহানার নামে বরাদ্ধ নেয়া গণভবন বিএনপি ফিরিয়ে এনেছিলো। একই ধারাবাহিকতায় আজ খালেদা জিয়াকে বের করে দেয়া হলো ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে। আসলে বাংলাদেশের রাজনীতিটা হয়ে দাঁড়িয়েছে দুই পরিবারের আবেগ-উচ্চ্ছ্বাশ, মান-অভিমান,হিংসা-প্রতি হিংসা ও প্রতিশোধের চারণভূমি। আমরা সাধারণ জনগন, আমরা যারা মুজিব সেনা বা জিয়ার সৈনিক নই, আমরা যারা পল্লিবন্ধুর ভারসাম্যহীন রাজনীতি বা আল্লাহর আইন চাই অয়ালা দল, কারো সাথেই নেই, আমরা যারা রাজনীতি করি না, আমরা যারা রাজনীতি বুঝি না, সেই আমরা হলাম রাজনীতির দাবার গুটি। তারা দু'পক্ষ আমাদের নিয়ে খেলবেন। যেমন খুশি খেলবেন। ইচ্ছেমতো চাল দেবেন। আমরা বাধা দেবো না। সেই ক্ষমতা আমাদের নেই। তাদের বুদ্ধিদিপ্ত একটি একটি চালে আমরা হারিয়ে যেতে থাকব পৃথিবী নামক বোর্ড থেকে।
বিএনপি যে রাজনৈতিকভাবে কতটা দেউলিয়া হয়ে গেছে, নতুন করে আবার প্রমাণ করলো, ঈদের দু'দিন আগে হরতাল ডেকে।
তাও ইস্যু কী?
দলনেত্রীর বাড়ি!!!
ছোট মুখে বড় কথা হয়ে যাবে, তা নাহলে আমি বলতাম, বিএনপির নীতি নির্ধারকদের মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করার স্বার্থে দলের সাথে অলটাইম সময় দেবার জন্যে একটি সাইক্রিয়াটিষ্ট টিম রাখা দরকার।
হরতাল যদি ডাকতেই হতো, ইস্যুর কি অভাব ছিলো?
বাড়ি নিয়ে কেনো??
সারা বছর তো পড়েই থাকে, ঈদের সময়টাকেই কেনো বেছে নিতে হলো?
আসলে আমাদের ভাগ্যটাই খারাপ। পাঁচ বছর আমাদের ঘাড়ে পড়বে বাঙালি হাতুড়ির বাড়ি, পাঁচ বছর বাংলাদেশি হাতিড়ির। এটাই আমাদের অবধারিত নিয়তি! আমরা আমাদের বিবেক-বুদ্ধি, ক্ষমতা-সামর্থ, সবকিছু পাঁচ বছরের জন্যে ইজারা দিয়ে রাখবো। আমাদের কিছুই বলার থাকবে না! আমাদের কিছুই করার থাকবে না। উনারা দয়া করে আমাদের হাসতে বললে আমরা হসবো, কাঁদতে বললে কাঁদবো, ব্যস! বাড়ি উচ্ছেদের প্রতিবাধে হরতাল ডাকলো বিএনপি। কোনো হরতালই সমর্থনযোগ্য না। তা যে কারণেই ডাকা হোক। প্রতিবাদের তো আরো অনেক ভাষা আছে। আমার যদি সুযোগ থাকতো, তাহলে বেগম জিয়াকে বলতাম,
মাননীয় নেত্রী,
যখন বাড়িটি আপনাকে দেয়া হয়, তখন আপনি ছিলেন এতিম দুই ছেলে নিয়ে অসহায়! আর এখন তো আপনি বাংলাদেশের অন্যতম ধনী এক সন্তানের মা। এমন ১০ টা বাড়ি ১০ মিনিটেই কিনতে পারেন। যখন বুঝতেই পারলেন এই সরকার আপনাকে আর এ বাড়িতে থাকতে দেবে না, তখন বাড়িটা আপনি আগেই ছেড়ে দিলে পারতেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেও আমার যদি সূযোগ থাকতো, তাহলে আমি বলতাম, যেহেতু মামলাটি এখনো আদালতেই আছে, তাহলে সরকারকি পারতনা আরো ক'টা দিন অপেক্ষা করতে! ৪০ বছর অপেক্ষা করা গেলে কী হতো আরো কয়েকটা দিন অপেক্ষা করলে! ঈদের সময়টাতেই কেনো অসুন্দর এই কাজটি করতে হলো!
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আপনি একদিকে বলছেন, ক্যান্টনমেন্ট সংরক্ষিত এলাকা। সিভিলিয়ানদের থাকার জায়গা নয়। অত্যন্ত খাঁটি কথা। কিন্তু আমরা আবার প্যাঁচ খেয়ে যাচ্ছি যখন আপনাকে বলতে শুনছি, শহীদ মইনুল রোডের এই বাড়িটি পিলখানা হত্যাযজ্ঞে নিহত অফিসারদের পরিবারকে দিয়ে দেবার কথা ! একাত্তরের কথা বিবেচনায় রাখলে পিলখানার অই অফিসারদের থেকে কি জিয়ার অবদান দেশের জন্যে কম ছিলো!
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
বিএনপি আপনাদের কাছ থেকে গণভবন নিয়ে গিয়েছিলো।আপনিও ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি ফিরিয়ে আনলেন।তাহলে আগের সাথে তফাতটা হলো কোথায়?
আপনি না দিন বদলের কথা বললেন!
এই কি তার নমূনা!!