শুক্রবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

উইকিলিকসের তথ্য বোমা

  1. বাংলাদেশের বিভিন্ন মাদরাসার অধ্যক্ষ, প্রিন্সিপাল, মুহতামিম ও দেশের উলামায়ে কেরামের ইতমিনানের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটানোর জন্য মাফ চাইছি। এতো আরামের ঘুম ভাঙ্গালাম মারাত্নক একটি সু সংবাদ দেবার জন্য। আপনারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে হাড় ভাঙ্গা খাটুনি খেটে তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন যে মাদরাসাগুলো, সেগুলো নিয়ে আপনাদের আর ভাবতে হবে না!
    মাদরাসাগুলো পরিচালনা করবার জন্য শত লাঞ্ছনা উপেক্ষা করে মানুষের দরজায় দরজায় অনেক ঘুরেছেন আপনারা। আর ঘুরতে হবে না। হাত পেতেছেন সাহায্যের জন্য। আর হাতও পাততে হবে না। এবারে আপনাদের প্রাণপ্রিয় এই প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্দান্ত গতিতেই এগিয়ে যাবে। আপনারা ইচ্ছে করলে তাবলীগে তিন চিল্লায় নাম লেখাতে পারেন।  তাবলীগওয়ালারা ভোগছে আলেম শূন্যতায়। আলেমদের জন্য বরাবরই তারা হাহাকার করছেন। এবার বোধ’য় সময় এসেছে তাদের আফসোস পূর্ণ করার।

  2. ও আচ্ছা, আসল কথাটিই এখনো বলা হয়নি। ঘটনা হচ্ছে বর্তমান বিশ্বের বড় মোড়ল আমেরিকা অত্যন্ত মেহেরবানী করে বাংলাদেশের মাদরাসাগুলোর দায়-দায়িত্ব নিজ কাধে তুলে নিতে রাজি হয়েছে! বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত হযরত জেমস এফ মরিয়াটির প্রেসক্রিপশনের মাধ্যমেই পরিচালিত হবে এদেশের মাদরাসাগুলো। আসুন, সকলে বলি- মারহাবা!!
  3.  
  4. সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের মাদরসাগুলো, বিশেষত কওমী মাদরাসাগুলো রয়েছে বিশেষ নজরদারিতে, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে। গেল বছর আমাদের আইনমন্ত্রী ব্যরিষ্টার শফিক আহমেদ সাহেব বলে বসলেন,  দেশের কওমী মাদরাসাগুলো জঙ্গীবাদের প্রজনন কেন্দ্র! অবশ্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তাৎক্ষনিক বিচক্ষণতায় দুঃখ প্রকাশের মাধ্যমে বিষয়টি চাপা পড়ে গিয়েছিলো। কিস্তু নিরীহ এই মাদরাসাগুলোকে তুচ্চ-তাচ্ছিল্য করে কথাবলায় কোনো ছেদ পড়েনি। 

  5. সরকারের বাঘা বাঘা নেতানেত্রীরা কথায় কথায় জঙ্গীবাদের প্রসঙ্গ টেনে এনে অঙ্গুলি তুলতে চেষ্টা করেন নিরীহ এই মাদরাসাগুলোর দিকে। যেনো দেশে আর কোনো সমস্যা নেই একমাত্র মাদরাসা সমস্যা ছাড়া ! এদেশের কওমী মাদরাসাগুলো যে বেকার তৈরির এক একটি কারখানা, দেশের অনুন্নয়নশীলতা ও অর্থনৈতিক পঙ্গুত্বের  জন্যও যে এই মাদরাসাগুলোই দায়ী, রকমারী ভঙ্গিতে সেটা প্রচার করতে যে যার সাধ্যমত চেষ্টা করে চলেছেন।
    অই সকল বড় মানুষরা জাতির সামনে অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে প্রমাণ করবার চেষ্টা করছেন দেশের সকল অশান্তি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মূলেই রয়েছে এই কওমী মাদরাসাগুলোই। আর দুঃখজনকভাবে এই প্রচারণাটা আবার চলছে একতরফা।  আলেম সমাজ থেকে গঠনমূলক জবাবটা পর্যন্ত যাচ্ছে না। ফলে দেশের সাধারণ মানুষ কিছুটা হলেও বিভ্রান্ত হতে শুরু করেছে। 

  6. সেই সঙ্গে আন্তর্জতিক মিডিয়ার মাধ্যমে  দেশের কওমী মাদরাসাগুলোকে বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করা হচ্ছে একটি জটিল প্রশ্নবোধক স্থানে। আলেম সমাজ নির্বিকার! এই শীতের মওসুমে সালানা জলসা নিয়েই মহা ব্যস্ত! সময় এভাবে এগিয়ে চললে এবারের এই জলসাগুলো যে শেষ জলসাও হতে পারে, এবং ইসলাম মসজিদ-মাদরাসা সম্পর্কিত অপ-প্রচারের জবাব দেয়া যে বে-আইনি নয়, দ্বীনের পক্ষে দাঁড়ানো যে সরকারের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ানো নয়, সম্মানিত আলেম সমাজকে এই কথাটি কে বোঝাবে?
    বর্তমান বিশ্বে হইচই ফেলে দেয়া আমেরিকান ওয়েবসাইট উইকিলিকস সা¤প্রতিক সময়ে যে বোমাটি ফাটিয়েছে, তাতে অবশিষ্ট বিশ্বের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব আরো নগ্নভাবে প্রকাশিত হয়ে পড়েছে। ভয়াবহ এই তথ্য বোমাটির বিস্ফোরণ ঘটানোর পরপরই ওয়েবসাইটটির প্রতিষ্ঠাতা ও কর্ণধার জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে যৌন হয়রানির ঠুনকো অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্রের সবচে’ ঘনিষ্ট মিত্র ব্রিটিশ পুলিশ গ্রেফতার করে বসে। সাথেসাথেই যুক্তরাষ্ট্র অ্যাসাঞ্জকে তাদের কব্জায় নিয়ে যেতে কূঠনৈতিক পায়তারা শুরু করে দেয়। যদিও ব্রিটিশ আদালতের রায়ে তাদের এই মনবাসনা আপাতত আর পূর্ণ হয়নি। জামিনে মুক্তি পান অ্যাসাঞ্জ।

  7. উইকিলিকস দুনিয়া কাঁপানো যে তথ্যগুলো ফাঁস করে, তার মধ্যে একটি হলো, ভারতের কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর একটি বক্তব্য।  সোনিয়া গান্ধী মনে করেন, ভারতে মুসলমানরা নয়, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও সা¤প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের মূল হোতা হলো উগ্র হিন্দু মৌলবাদীরা। তাঁর এই কথাটি যে মিথ্যে নয়, সে কথা প্রমাণ করবার জন্যই সম্ভবত ভারতের কট্টর মৌলবাদী সংগঠন শিবসেনা অসুন্দর পন্থায় সোনিয়ার প্রতিবাদ শুরু করে। থাক, সেটা ভিন্ন দেশের সমস্যা।

  8. উইকিলিকস  একটি ওয়েবভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম।
    যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিসহ গোটা বিশ্বের আড়াই লাখ নথি ফাঁস করার মিশনে নেমেছে তারা। ১৯৬৬ সাল থেকে ফেব্র“য়ারি ১০ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর ও বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে দেশটির ২৭৪টি দূতাবাসের মধ্যে আদান-প্রদান হওয়া নথি ওয়েবসাইটটি প্রকাশ করবে বলে ঘোষণা করে। নথিগুলোর মধ্যে দুই হাজার একশ’ বিরাশিটি বাংলাদেশ বিষয়ক। 

  9. ওয়ান-ইলেভেনের সময় ফখর উদ্দিন সরকারের মার্কিন হুকুম তামিল, মায়নাস টু থিওরী, দুই নেত্রীর আবার রাজনীতিতে ফেরা, ডিজিএফআই সম্পর্কিত তথ্য, এমনকি জাতিসংঘের শাস্তিরক্ষা মিশনে পর্যন্ত বাংলাদেশ ছিলো কঠোর নজরদারীতে-এমন বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য স্থান পায় সেখানে। বাংলাদেশ সম্পর্কিত মার্কিন গোয়েন্দা দপ্তরের বিস্ফোরক সব তথ্য প্রকাশিত হওয়ায় এদেশের রাজনীতিতে মার্কিন আধিপত্যের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে। 

  10. উইকিলিকস এর ফাঁস করা মার্কিন গোপন কুটনৈতিক নথির উদ্ধৃতি দিয়ে ব্রিটেনের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান স¤প্রতি একটি রিপোর্ট করেছে। সেখানে উল্লেখযোগ্য একটি পয়েন্ট হলো, বাংলাদেশের মাদরাসা বিষয়ক। উইকিলিকস এর বরাত দিয়ে গার্ডিয়ান জানায়, বাংলাদেশের মাদরাসা শিক্ষায় গুণগত পরিবর্তন এনে  সন্ত্রাস ও জঙ্গী বিরোধী শিক্ষাব্যবস্থায় পরিণত করতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য কাজ করে আসছিলো।
    ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিভাগ বা ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল   ডেভেলপমেন্ট (ডিএফআইডি) এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়াটি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করে ইসলামিক স্কুল ও মাদরাসাগুলোতে নির্দিষ্ট মানসম্পন্ন শিক্ষাক্রম অনুসরণের অনুরোধ জানান। 

  11. উইকিলিকস সূত্রে আরো জানা যায়, বাংলাদেশের মাদরাসা শিক্ষায় পরিবর্তন আনতে মার্কিন সরকারের উন্নয়নমূলক সংস্থা (ইউএসএআইডি) বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করবার প্রস্তাব দেয়।  যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব মনে করে, বাংলাদেশের মাদরাসাগুলো জঙ্গী উৎপাদনের কারখানা। ঠিক যেমনটি বলেছিলেন আমাদের  আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ সাহেব! আগে আমাদের বুঝে না আসলেও এখন আর বুঝতে সমস্যা হচ্ছে না আইনমন্ত্রী যে সুরটি তুলেছিলেন, সেটার গীতিকার কে ছিলো?
    যুক্তরাষ্ট্র মনে করে বাংলাদেশের মাদরাসাগুলোতে জিহাদে অংশগ্রহণ করতে ছাত্রদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। উইকিলিকস এর বরাত দিয়ে গার্ডিয়ান জানায়, বাংলাদেশে প্রায় ৬৪ হাজার ইসলামিক স্কুল বা মাদরাসা রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমান সরকার প্রায় ১৫ হাজার মাদরাসা নিয়ে উৎকন্ঠিত! কারণ এসব মাদরাসা সরকারের প্রচলিত নিয়ম মেনে চলে না।
    মার্কিনীরা বিশ্বের যেদিকেই তাকায়, শুধু সন্ত্রাসী আর জঙ্গীবাদই দেখে। তাদের চোখে আর ভালো মানুষ পড়ে না। কারণ আছে। জন্ডিস রোগী যেদিকেই তাকায়, হলুদই দেখে। কারণ তার জন্ডিস। তার চোখ হলদে হয়ে গেছে।

  12. এদেশে মাদরাসা শিক্ষার ইতিহাস ৭শ বছরের। এই শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন পরিবর্ধন, সংস্কার-সংযোজন, যাই দরকার হোক, সংশ্লিষ্টরাই করবেন। এখানো বিদেশি মুরব্বীদের নাগ গলানোর তো কোনো অধিকারই ছিলো না। কিন্তু দেখা যাচ্ছে শুধু নাকই গলানো হচ্ছেনা, মাথাটাই ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে।
    এমনিতেই এদেশের মাদরাসাগুলো মানুষের সাহায্য নির্ভর দুর্বল শরীর নিয়ে বেঁচে আছে কোনো রকমে। ভোগছে রক্ত শূন্যতায়। গত ৭ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদে পাশ হওয়া জাতীয় শিক্ষানীতিতে মাদরাসা শিক্ষার যেভাবে ঠুটি চেপে ধরা হয়েছে, তাতে নিঃদ্বিধায় বলে দেয়া যায় সময় ক্ষেপন না করে এদেশে মাদরাসা শিক্ষার কবর খোড়াখুড়ির কাজটি শুরু করে দেয়া দরকার। 

  13. আল্লাহপাক বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে উলামায়ে কেরামের নেতৃত্বে আরো শান্তিতে ঘুমানোর তাওফিক দান করুন।  ৬ জানুয়ারী ২০১১