সোমবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১১

অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা


বাংলাদেশের আকাশটা আজ ছেয়ে আছে অস্বস্থির কালো মেঘে। সমস্যা ঘরে-বাইরে । ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তে কেনা দেশটিতে ৩০ লক্ষ মানুষ আজ পথে বসেছে, শেয়ার বাজার কারসাজির কারণে। জিনিষপত্রের দাম বেড়ে চলেছে হু হু করে। পদ্মা সেতু কেলেংকারির কারণে বিশ্ব ব্যাংক আমাদের গালে যে তামাচাটা মারলো, যোগাযোগমন্ত্রীকে সরিয়ে দেয়ায় সেই ক্ষত তো মিলিয়ে যাবে না।

তিস্তার পানি আনতে ব্যর্থ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলন থেকে পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে গেলেই তো আর সমস্যার সমাধান হয়ে গেলো না।

মিস্টার কম খান খ্যাত ফারুক খানকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে ফেলায় চাল ডাল, আলু পটলের দাম এক কানাকড়ি কমেছে বলে জানা যায়নি।

দুর্ঘটনায় আঘাত পেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে যাওয়ায় হাটা-চলার জন্য লাঠির সাহায্য নিলেও সন্তাসীরা দুর্বল হয়ে গেছে ভাবলে তো ভুল হবে।

শেয়ারবাজরে পুঁজি হারিয়ে হাহাকার করতে থাকা মানুষকে ফটকাবাজ বলা ছাড়া মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে অর্থনৈতিক দেউলিয়াপনার বিরুদ্ধে আর কোনো পরিকল্পনার কথা বলতে শোনা যায় না! সব মিলিয়ে একটা হ-য-ব-র-ল অবস্থায় দিন কাটছে আমাদের।

সমস্যার অন্ত নেই দেশে। কোথায় সমাধান নিয়ে ভাবা হবে, তা না, কাজ ছেড়ে অকাজের দিকেই ছুটছে সরকার। গায়ের জোরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়ে আগামীর বাংলাদেশের জন্য অনেক শংকার পথ তৈরি করে রাখা হলো।

দরকার ছিলো না তবুও সংবিধান সংশোধনের নামে কমিটি, সংলাপ, মত বিনিময় নাটক ইত্যাদির পর আজ যে বস্তু সামনে এসেছে, সংবিধানের মোড়কে, এক কথায় বললে সেটাকে জগাখিচুরী না বলে উপায় নেই। সরাসরি পরস্পর বিরোধী কথামালায় সাজানো এই সংবিধানকে একটি হাস্যকর স্থানে স্থাপন করা হয়েছে। কী আর বলার থাকে।

সরকারের দেউলিয়াত্বের সর্বশেষ উদাহরণ হচ্ছে ঢাকাকে দ্বিখন্ডিত করার উন্মাদীয় সিদ্দান্ত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ঢাকার বুকে ছুরি চালানোর এই বুদ্ধি কে দিলো, আমি জানি না। শুধু জানি, যেই দিক, তার মানসিক চিকিৎসা দরকার। চারশ বছরের ঐতিহ্যের ধারক ঢাকাকে মাত্র চার মিনিটে দুভাগ করে সরকার কোন পূণ্য হাসিল করলো, কেউ জানে না। সরকারকে এখন জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে, বাংলাদেশের রাজধানী এখন কোথায় বলবেন? ঢাকায়? কোন ঢাকায়? উত্তর ঢাকায় না দক্ষিণ ঢাকায়? নাকি ড: আসিফ নজরুলের ভাষায় বলতে হবে, বাংলাদেশের রাজধানী এখন ঢাকাসমূহ!

শুরুতেই বলা হয়েছে বাংলাদেশের আকাশটা আজ ছেয়ে আছে অস্বস্থির কালো মেঘে। একে তো ঘরের সমস্যা। কিন্তু সব ছাড়িয়ে পড়শির ধেয়ে আসা বিষাক্ত কালো থাবা ঘুম হারাম করে দিচ্ছে আমাদের। বিশেষত আমরা সিলেটবাসীর। অস্তিত্বের প্রশ্নে আজ বিপর্যস্ত আমরা। ভরসার খুটিগুলোতেও পোঁকা ধরেছে।
আমার দেশের গরিবের রক্তের মতো ঘাম ঝরানো পয়সায় পেট ভরে খেয়ে আমাদের পানিমন্ত্রী যখন কথা বলেন, যখন লাজ-লজ্জার মাথা খেয়ে বলেন, ‘‘ভারত আমাদের যেটুকুন পানি দিচ্ছে, তাই তো বেশি’’, আমরা ভুলে যাই তিনি কি বাংলাদেশের মন্ত্রী নাকি ভারতের কোনো অঙ্গরাজ্যের!
ভারত টিপাই মুখে বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশকে মরু করণের যাবতীয় পরিকল্পনা যখন গুছিয়ে এনেছে, তখনও উপদেষ্টারা যখন বলেন, যখন বলেন, ‘‘টিপাই বাঁধ ইস্যুতে ভারতের কথায় আমরা খুশি! তাদের আচরণে আমরা সন্তুষ্ট!’’ তখন আমাদের আর কোনো সন্দেহই থাকে না তাদের কমিটমেন্ট নিয়ে। আমরা নিশ্চিত হয়ে যাই তারা তাদের দেশের স্বার্থেই কথা বলছেন, আমার বাংলাদেশের হয়ে নয়। আমাদের আর বুঝতে বাকী থাকেনা তারা কাদের হয়ে খেলছেন! শুধু বুঝতে পারিনা তারা তাদের প্রিয় অপারেই চলে যাচ্ছেন না কেনো?

আমার দেশের আলো-বাতাস ব্যবহার করে তারা আমাদের বুকেই ছুরি চালাবেন, তা তো হয় না।