শনিবার, ২৪ মার্চ, ২০১২

ব্রেইন সার্ভিসিং---!!!



গতকালের পর


বেশি ব্যবহারের ফলে হোক আর ব্যবহার না করার কারণে, ব্রেইনে মাঝেমধ্যে জ্যাম ধরে যায়। কখনো কখনো মনে হয় ব্রেইন বুঝি হ্যাং করেছে! গতকাল আমরা ছিলাম ২০৫৬ সালে। ২০৫৬ থেকে এখন আমরা চলে এসেছি হাল জামানায়।


ব্রেইনের কাজকর্মে গতিশীলতা আনার চিন্তা-ভাবনা থেকেই জাপানে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ব্রেইন সার্ভিসিং ওয়ার্কশপ! (আল্লাহর ওয়াস্তে কেউ আবার আমার কাছে জানতে চাইবেন না ওটা জাপানের কোথায় অবস্থিত? ঐকিক নিয়মের অংকের মতো মনেকরি সূত্রে আগাতে হবে!) ওরা চিন্তা করে দেখেছে ব্রেইনকে মাঝেমধ্যে ওয়াশ ও সার্ভিসিং করা নাহলে ব্রেইনের কর্ম ক্ষমতা হ্রাস পাবে। সেই চিন্তা থেকেই তাদের এই বর্ণালী আয়োজন।


কোনো এক দেশের মাঝারি মানের এক নেতা গেছেন জাপান ভ্রমণে। ঘুরাঘুরির এক পর্যায়ে উনার চোখে পড়লো সার্ভিস সেন্টারটি। যথেষ্ট কৌতূহলি হলেন তিনি। উনার মাথা প্রায়ই ঝিন ঝিন করে! ব্যাথাও থাকে প্রচুর। কখনো কখনো ভোতা ধরণের যন্ত্রণাও হয়! তিনি ভাবলেন এটা বেশি ব্যবহারের কারণেই হয়ে থাকবে। সুযোগ যখন পাওয়া গেছে একটা, কাজে লাগানো দরকার।


তিনি তার ব্রেইনটি সার্ভিসিং এর জন্য দিয়ে দিলেন। ওরা সার্ভিস চার্জ নেয় হান্ড্রেড পার্সেন্ট অগ্রিম পদ্ধতিতে। তিনি চার্য পরিশোধ করলেন। ওয়ার্কশপ কর্তৃপক্ষ উনাকে রিসিট ধরিয়ে দিলো। সাত দিন পর এসে আপনার ব্রেইন নিয়ে যাবেন।


-------------

------------------

সাত দিন পেরিয়ে পনের দিন চলে যাচ্ছে কিন্তু ব্রেইনের মালিক ব্রেইন ফেরত নিতে আসছেন না! কর্তৃপক্ষ কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেল। লোকটি কোনো দুর্ঘটনায় পড়ে-টরে গেলো কি না! আবার এমনও তো হতে পারে কোথাও খেই হারিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে! অসম্ভব না, ব্রেইনলেস একটা মানুষ! রিসিট থেকে তারা মানুষটির ফোন নাম্বার বের করে ফোন করলো। ওপাশ থেকে কেউ একজন জানালো উনি বাংলাদেশে চলে গেছেন। কবে ফিরবেন-বলা যাচ্ছে না।


সার্ভিস সেন্টার ভদ্রলোকের মেইল আইডিটি চেয়ে নিয়ে মেইল করলো উনাকে। বলল, জনাব, আপনার ব্রেইনটি সার্ভিসিং করা হয়ে গেছে। এটা এখন একদম ঝকঝকে এবং ফ্রেশ। প্লিজ, নিয়ে যান।


আরো পনের দিন পর অই লোক মেইলের জবাব দিলেন। কী বলেছিলেন তিনি? সেটা আমরা একটু পরে জানবো। তার আগে স্মরণ করি কিছু অমূল্য বাণী। স্মৃতি থেকে লিখছি। শাব্দিক এদিক-উদিক হলে ক্ষমা চাই।




আল্লাহ মাল আল্লায় নিয়া গেছে !----------- সাবেক যোগাযগমন্ত্রী জনাব আলতাফ হোসেন।

শেয়ার বাজারে আছে ফটকাবাজ------------মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত

টাইটানিকও একদা ডুবিয়াছিলো
----------লঞ্চ ডুবিতে স্বজনহারা মানুষকে সাবেক নৌ-মন্ত্রী মরহুম আকবর হুসেন

এদেশের কওমী মাদরাসাগুলো জঙ্গীদের প্রজনন কেন্দ্র
----------- আইনমন্ত্রী ব্যরিস্টার শফিক আহমেদ।

কম খান, দ্রব্যমূল্য কমবে।------------ সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান

ভারত আমাদের যে পরিমাণ পানি দিচ্ছে, তাই তো যথেষ্ট। ----------- পানিমন্ত্রী শ্রী রমেশ চন্দ্রসেন


তিস্তা চুক্তি কবে হবে আমি কী করে বলবো? আমি তো আর গণক নই।
-------------মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিপুমণি

আগে জানতাম কুকুর লেজ নাড়ে, এখন দেখছি লেজই কুকুর নাড়ে---------- বিএনপিতে তারেক রহমানের প্রভাব নিয়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী

দেশকে যারা অচল করে দিতে চায়, তাদের বিকল করে দেয়ার জন্য ছাত্রদলই যথেষ্ট।-----------------সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।

সরকারের পক্ষে কারো বেডরোম পাহারা দেয়া সম্ভব না।---------------মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

-------- এই মুহুর্তে আর মনে পড়ছে না!!

-----------------
---------------------

পনের দিন পরে অই লোক মেইলের জবাব দিয়েছিলেন। উনি যা বলেছিলেন, বাংলা করলে সেটা অনেকটা এভাবেই দাঁড়ায়-


জনাব, আমি এখন বাংলাদেশে আছি। বেশ আছি। এই অল্প দিনে বিশেষ কারণে এখানকার নাগরিকত্ব পেয়ে গেছি। শুধু তাই না। আপনারা হয়তো বিশ্বাস করতে পারবেন না আমি এখানকার মন্ত্রিত্বের একটি পোষ্টও পেয়ে গেছি। অবাক হবার দরকার নেই। এদেশে তারচে”ও আশ্চর্য ঘটনা ঘটে! আচ্ছা তাহলে, সে অনেক কথা। আপনাদের জেনে কাজ নেই।


এদেশে বেশ আছি আমি। দায়িত্বও পালন করে যাচ্ছি ঠিকটাক। কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আপনারা আমার রেখে আসা ব্রেইন ফেরত আনতে বলছেন তো! থাকুক, আপাতত অটা আপনাদের কাছেই থাকুক। এ দেশে এটার খুব কিছু দরকারও হয় না। অই বস্তু ছাড়াই যে যার কাজ চালিয়ে নিচ্ছে। আমিও। কখনো যখন অন্য দেশে যাবো, অটার প্রয়োজন হবে। তখন নিয়ে নেবো, থ্যাংক ইউ।


------------

---------------

আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে

নেতারচে' যার কাছে নীতি বড় হবে।

শুভ কামনা

২০৫৬ সালের একদিন


আজ থেকে ৫০ বছর আগে কেউ যদি বলতো, একসময় বাজারে হার্টের বাল্ব, কিডিনি, লিভার ইত্যাদি কিনতে পাওয়া যাবে, কেউ বিশ্বাস করতো না। বলত, পাগল! নির্ঘাত পাগল। এই লোকটির মাথা যে পুরোটাই খারাপ, সন্দেহ নেই। কিন্তু আজ---

ঠিক একইভাবে আজ থেকে ৫০ বছর পরে বিজ্ঞান হয়তো এমন অবস্থানে পৌছে যাবে, খোলা বাজারে মানুষের ব্রেইন কিনতে পাওয়া যাবে! সেই সময়ের একটি গল্প। অনুরোধ করছি ৫০ বছর পরের মানসিকতা নিয়ে লেখাটি পড়ার জন্য।

------------
--------------

এক ভদ্রলোক মার্কেটে গেছেন ব্রেইন কিনতে। যে কোনো কারণেই হোক, উনার মেজো ছেলের ব্রেইন ডেমেজ হয়ে গেছে। ছেলেটি এখন বদ্ধ উন্মাদ! তিনি ঢুকলেন একটি আন্তর্জাতিক আন্তর্জাতিক ব্রেইন মার্কেটে। অত্যাধুনিক শপিং মল। ঝকঝকে পরিবেশ। কোথাও একটু ময়লা নেই। ফ্লোরে ভাত মেখে খাওয়া যাবে-অবস্থা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের সমাগমে মুখরিত পুরো মার্কেট। তিনি ঢুকলেন পিওর ব্রেইন সাপ্লায়ার সাইনবোর্ড লাগানো একটি মলে। এই প্রতিষ্ঠানের উপর তিনি আস্থা রাখলেন কারণ, সাইনবোর্ডের কোনায় বোল্ড করে লেখা ISO 9001-2000 সার্টিফাইড।

ভদ্রলোক দোকানে ঢুকতেই সেলসম্যান এগিয়ে এসে রেডিমেট একটি হাসি দিয়ে বলল, এক্সকিউজমি স্যার! কীভাবে সাহায্য করতে পারি আপনাকে?

খুশি হলেন ভদ্রলোক। এর আগে কেউ কখনো তাকে স্যার ডাকেনি। মনে মনে ভাবলেন, যাক, স্যার হবার মতো চেহারা তাহলে আছে তার। আজ অনেকদিন পর সূষ্টিকর্তাকে মন থেকে একটি ধন্যবাদ দিলেন। সেলসম্যানের দিকে তাকিয়ে বললেন, একটি ব্রেইন চাই। ভালো একটি ব্রেইন। দেখান তো!

সেলসম্যান বিনীতভাবে বলল, স্যার, কোয়ালিটি কেমন হবে? আমাদের সংগ্রহে বিভিন্ন কোয়ালিটির ব্রেইন আছে। কেমন ব্রেইন চাই আপনার?
তিনি বললেন, ভালো কিছুই দেখান।
সেলসম্যান সুন্দর একটি বক্স নিয়ে এসে মেলে ধরল সামনে। এটা নিতে পারেন স্যার। ভাল মাল।
মেইড কোথায়?
এটি স্যার রাশিয়ান ব্রেইন।
দাম কতো?
এক লক্ষ টাকা স্যার, ফিক্সড।

ভদ্রলোক ভাবলেন, রাশিয়ান ব্রেইন , ভালোই হবার কথা। নেয়া যায়। তবুও অভ্যেস মতো জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা, আপনাদের কাছে এরচে’ ভালো ব্রেইন আছে ?

আছে স্যার, আরো ভালো কোয়ালিটিরও আছে। সে আরো চমতকার একটি প্যাকেট খুলে আরেকটি ব্রেইন বের করল। এবারেরটি আর বশি যত্ন করে রাখা হয়েছে। বলল, এটি নিন স্যার। আমেরিকান ব্রেইন। খাটি মাল। যে লোকের ব্রেইন এটি, জানা গেছে সেই লোক জীবনেও কোনো সমস্যায় পড়েনি । খুবই উন্নত কোয়ালিটি।
ভদ্রলোক ভাবলেন, আমেরিকান ব্রেইন, অবশ্যই রাশিয়ান ব্রেইন থেকে ভাল হবে। না জানি কতো দাম হাঁকায়! জিজ্ঞেস করলেন, এটির মূল্য কতো?
সেলসম্যান বলল, এটি একটু কম আছে স্যার। এই ধরেন ৮০ হাজার পর্যন্ত রাখা যাবে।

বিস্মিত হলেন লোকটি! যেটার মূল্য বেশি হবার কথা, সেটা বলছে কম! ব্যাপার কী! হিসাবে ভুলটুল করছে না তো! পরে হয়তো দেখা গেল, মাল প্যাকেট করে দেয়ার সময় ১ লক্ষ ৮০ হাজারের বিল ধরিয়ে দিচ্ছে!! সেই সাথে কিছুটা উৎসাহীও হয়ে উঠলেন তিনি। বললেন, আচ্ছা, এরচে’ও ভালো কোনো মাল নেই?

আছে স্যার, এরচে’ও ভালো মাল আছে। এখন আপনাকে যেটা দেখাব, আপনার পছন্দ না হয়েই পারে না। সে অত্যন্ত যত্ন করে গ্লাসের ভেতরে রাখা গোল্ডেন চারকোনো একটি বক্স বের করে দিল। বলল, চোখ বন্ধ করে এই মালটি নিয়ে যান স্যার, বিশ্বের সেরা মাল।
এটি কোন দেশের?
এটি স্যার জাপানিজ।

অত্যন্ত খুশি হলেন লোকটি। এতক্ষণে ব্যাটা আসল মাল বের করেছে। জাপানিদের ব্রেইনেরচে’ উন্নত ব্রেইন আর হতেই পারে না। অরা অদের ব্রেইন খাটিয়ে কত কী আবিস্কার করে ফেলেছে! ইলেকট্রনিক পার্টস, মেশিনারিজ থেকে শুরু করে প্রযুক্তির এমন কোনো শাখা খুঁজে পাওয়া মুশকিল, যেখানে অরা সফল হয়নি। চোখ বন্ধ করে কেনার মতোই মাল। কিন্তু পরক্ষণেই বিব্রতকর ভাবনায় পড়ে গেলেন তিনি। নিজের অজান্তেই হাত চলে গেলো পকেটে। ওয়ার্ল্ড ফেমাস জাপানি ব্রেইন। কিছুটা ভয়ের সাথেই বললেন, ভাই, এই ব্রেইনটি সর্বশেষ মূল্য কত? অর্থাৎ কত হলে দিয়ে দেবেন? একটু কমিয়ে বলবেন প্লিজ!!

সেলসম্যান বলল, আপনি মনেহয় স্যার লক্ষ্য করেননি আমাদের এই মার্কেটটা হল ফিক্সড প্রাইস মার্কেট। সঙ্গত কারণেই প্রথম দাম বলুন আর শেষ দাম , দাম কিন্তু অই একটাই। বেশি কথা বলে আপনাকে বিরক্ত করার জন্য আমি দুঃখিত। এই ব্রেইনটি আপনি ৫০ হাজার টাকায় পেতে পারেন।

৫০ হাজার!!! বিস্মিত হলেন ভদ্রলোক। তাকালেন সেলসম্যানের দিকে। আন্দাজ করতে চেষ্টা করলেন ছেলেটি তাঁর সাথে ফাজলামো করার চেষ্টা করছে কি না! তাই যদি না হবে, তাহলে এমন উলটা-পালটা দাম বলছে কেনো! রাশিয়ান ব্রেইন বলল ১ লক্ষ টাকা। আমারিকান ব্রেইন যে কোনো বিচারেই রাশিয়ান ব্রেইন থেকে দামি , অথচ সে বলছে ৮০ হাজার! আবার জাপানি ব্রেইন বর্তমান বিশ্বে সবচে’ ভ্যালুয়েবল, সেটার দাম হওয়ার কথা অনেক বেশি অথচ বলছে মাত্র ৫০ হাজার!!! ঘটনা কি! ব্রেইনের দোকানে কাজ করতে করতে এই ব্যাটার নিজেরই ব্রেইনের কোথাও সর্ট সর্কিট হয়ে গেলো কি না- কে জানে! অসম্ভব না!

নিজেকে সংযত করলেন ভদ্রলোক। বললেন, এই ছেলে, আমি তো তোমার কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছি না। আপাতত সেটার চেষ্টাও করছি না। তাহলে হয়তো দেখা যাবে একটা না, এজ জোড়া ব্রেইনই কিনতে হবে। যা হোক, বেশি কথা বলে লাভ নেই। তোমাদের কাছে সবচে ভালো কী আছে সেটাই বের করো। অর্থাৎ ইনটেক পিওর কিছু থাকলে বের করে ফেলো। খামাখা সময় নষ্ট করার কোনো মানে হয় না। (মেজাজ খারাপ হওয়ায় ভদ্রলোক আপনি থেকে তুমিতে নেমে গেছেন, খেয়ালই করেননি!)

বিচিত্র ভঙ্গিতে হাসল ছেলেটি। যেনো এই পৃথিবীর তৃ্তীয় শ্রেষ্ট বোকার সাক্ষাত পেয়েছে সে! বলল, আপনি ইনটেইক ব্রেইন চান আগে বলবেন না! আসুন আমার সাথে।

সে ভদ্রলোককে নিয়ে ঢুকলো দোকানের ভেতরের একটি রোমে। অত্যন্ত মনোরম একটি ফ্রিজ খুলে স্বর্ণের বক্সে রাখা একটি ব্রেইন বের করে বলল, এই নিন স্যার, খাটি মাল। সম্পূর্ণ ইনটেক। একদম। গায়ে একটু আচর পর্যন্ত লাগেনি। এরচে’ ফ্রেশ কোনো মাল পৃথিবীতে আর পাবেন না।

ভদ্রলোক মনে মনে ভাবতে লাগলেন, বিশ্বের সেরা এই ব্রেইনটি কিনতে হলে অবশ্যই তাকে তাঁর বাড়িটি বিক্রি করতে হবে। আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করলেন, এটির দাম জানি কতো---??
এটি একটু বেশি স্যার। বুঝতেই পারছেন অক্ষত মাল। এটার মূল্য ৫ লক্ষ্য টাকা।
স্বস্থির নিশ্বাস ফেললেন তিনি। বাড়ি বিক্রি না করলেও চলবে। ব্রেইনটির ব্যাপারে যথেষ্ট আগ্রহী হয়ে উঠলেন তিনি। এমন একটি ব্রেইন তাঁর ছেলের মাথায় ঢুকিয়ে দেয়া গেলো আর কী চাই!! তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এই মহা মূল্যবান ব্রেইনটি কোন দেশের?
সেলসম্যান নির্লিপ্তভাবে জবাব দিলো, এটি স্যার বাংলাদেশি ব্রেইন!!

সকল আগ্রহ মাটি হয়ে গেলো । এই ছেলে যে ফাজলামো করছে, আর কোনো সন্দেহ নেই। রাগে ঘামতে শুরু করলেন তিনি। এতোক্ষণ ধরে উল্টা-পাল্টা দাম বলছে। আর এখন যেটা তিনি মাগনা দিলেও নেবেন কি না সন্দেহ, সেটার দাম বলছে ৫ লাখ! ফাজলামোরও তো একটা সীমা থাকা দরকার। পাড়ার কোনো ছেলে এমন করলে এতক্ষণে থাপড়ে দাঁত ফেলে দিতেন। এখানে এটি সম্ভব না। ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা আছে। সিকিউরিটিও টাইট।

অনেক কষ্টে নিজেকে সংযত করে বললেন, দেখো ছেলে, আমি তোমার বাবার বয়সী। আমার সাথে ইয়ার্কি করা তোমার শোভা পায় না।
সে বলল, আমি আপনার সাথে মোটেও ইয়ার্কি করছি না স্যার। আপনি ব্রেইন দেখতে চেয়েছেন, আমি দেখিয়েছি। আপনি দাম জানতে চেয়েছেন, বলেছি। যেটার যে দাম সেটাই বলেছি। আর একটি কথা , এখানে প্রতিটি পণ্যের যথাযত মূল্যই নির্ধারণ করে রাখা হয়েছে।

এবারে খানিকটা বিব্রত হলেন ভদ্রলোক। ছেলেটির কথা বলার ধরণ দেখে মনে হচ্ছে সে ইয়ার্কি করেনি। কিন্তু ন্যায্য মূল্যই যে বলেছে, সেটাই বা মানবেন কী করে? তিনি স্পষ্ট বুঝতে পারছেন দাম বলছে উল্টা-পাল্টা! অবশেষে বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি আমাকে ব্রেনগুলোর দামটা একটু ব্যাখ্যা করো তো! দেখি তোমাদের মাপকাটিটা কেমন!

ছেলেটি বলল, দেখুন স্যার, প্রথমে আপনাকে দেখিয়েছি রাশিয়ান ব্রেইন। এটি একটু ব্যবহৃত, ব্যবহারের ফলে একটু ক্ষয় হয়েছে, দাম ১ লক্ষ টাকা। তারপর দেখানো হয়েছিল আমেরিকান ব্রেইন। সেটি আরো বেশি ব্যবহৃত, আরো বেশি ক্ষয় হওয়া, তাই দামটাও একটু কম, ৮০ হাজার। তারপর জাপানি ব্রেইন, ৫০ হাজার বলেছিলাম না? ঠিকই আছে। ওটা অত্যাধিক ব্যবহৃত ব্রেইন। জাপানিরা বলতে গেলে জন্মের পরের দিন থেকেই ব্রেইন ব্যবহার করা শুরু করে দেয়। বুঝতেই পারছেন কত বেশি ব্যবহৃত মাল এটি। তাই দামটাও কম। আর বাংলাদেশি ব্রেইন!

বাংলাদেশি ব্রেইনের দাম সবচে বেশি কারণ, জীবনে এই ব্রেইন কোথাও ব্যবহার করা হয়নি। বাঙালিরা কখনো ব্রেইন ব্যবহার করে না। জন্মের সময় সাথে করে নিয়ে আসা আল্লাহর দেয়া ব্রেইনটি অক্ষত অবস্থায় নিয়েই কবরে চলে যায়। তো জীবনেও ব্যবহার না করার ফলে ব্রেইনটি থেকে যায় সম্পূর্ণ অক্ষত। একদম নতুন। এ জন্যই এটির মূল্য সবচে বেশি।
------------
----------------
ভদ্রলোক শেষ পর্যন্ত উনার ছেলের জন্য ব্রেইন কিনেছিলেন কি না, কিনলেও কোন দেশেরটা , সেটা আমাদের জানা জরুরি না। আমরা ভাববো বাংলাদেশি ব্রেইন নিয়ে

বিশ্ব ধরা খাওয়া দিবস---!!!


প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা! গলা শুকিয়ে কাঁঠ হয়ে আছে। হবারই কথা। ৯ কোটি ৩০ লক্ষ মাইল দূরে ছিল যে সূর্য, সেটি আজ মাথার ৯ ইঞ্চি উপরে! অবস্থা ভয়াবহ! এরই মধ্যে ঘুরছি আমি। বিশাল মাঠে। খোঁজছি পরিচিত কাউকে পাওয়ার আশায়। যদিও জানি, লাভ নেই। আজ কেউ কাউকে না চেনার দিন। আজ মুখ ফিরিয়ে নেয়ার দিন।

বাবার কাছে গিয়ে সন্তান বলবে, বাবা, সামান্য একটু পূণ্যের জন্য ধরা খেয়ে গেছি বাবা। একটু সাহায্য করেন না!

বাবা বলবেন, কে তুমি বালক? তোমাকে তো চিনতে পারছি না! আর আমাকে বাবা বলছ কেনো-পৃথিবীতে থাকতে আমি তো বিয়ে করেছিলাম বলেই মনে করতে পারছি না। তাহলে তুমি আমার ছেলে হবে কীভাবে??

সন্তান যাবে মায়ের কাছে। সেই মা, মাসের পর মাস যে মায়ের কলিজায় লাথি মেরেই ছিল পৃথিবীতে আসা। সেই মা, শীতের রাতে যে মায়ের বুক ভিজিয়ে ছিল বারবার তবুও বিরক্ত হননি একবারের জন্যও। সেই মা, ঝড়-ঝাপটা থেকে সন্তানকে আগলে রেখেছেন বুক পেতে দিয়ে। ছেলের অসুস্থতায় অস্থির হয়ে গেছেন, বলেছেন হে আল্লাহ, যত খুশি কষ্ট আমাকে দাও, আমার সন্তানকে ভাল করে দাও ------------- সেই মায়ের কাছে ।


মা, ও মা! সামান্য একটি পূণ্যের জন্য আমি ধরা খেয়ে গেছি। আজ কেউ আমাকে সাহায্য করছে না গো মা। শেষ ভরসা হিসেবে তোমার কাছেই এলাম। তুমি আমার মা। মায়েরচে’ আপন তো আর কেউ নেই। আমাকে একটি মাত্র পূণ্য দিয়ে উদ্ধার করো আজ।


মা বলবেন, কে বাবা তুমি! তোমাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না! তোমার দুরবস্থার কথা শুনে খারাপ লাগছে। কিন্তু আমি কী করব বলো। আমি নিজেই আজ পেরেশান। তা ছাড়া তুমি আমাকে মা বলছো! পৃথিবীতে আমার তো বিয়েই হয়নি, তুমি আমার ছেলে হবে কী করে!! এই হল আজকের হালত।


------------

---------------

হাশরের দিন আজ। অন্য কথায় বলা যায়
ধরা খাওয়া দিবস। সবাইকেই আজ ধরা খেতে হবে। ভাগ্যবান সামান্য কিছু মানুষ আছেন, যারা আজ ধরা খাবেন না। তাদের কারো সাথে এখনো দেখা হয়নি আমার। হবে হয়তো। দেখা যাক।

হাঁটছি আমি। হঠাৎ একটি জটলা দেখে এগিয়ে গেলাম সেদিকে। ধুসর বাদামী কালারের সাফারী পরা একজনকে মানুষকে ঘিরে কয়েক ড’জন মহিলা। তাদের সাথে অনেকগুলো ছেলেমেয়ে। মানুষটি বসে আছেন গালে হাত দিয়ে। আজ সাফারী পরার দিন না। আজ কারো গায়েই কাপড় থাকার কথা না। সাফারী আমার দৃষ্টি বিভ্রম, সন্দেহ নেই।


খুব পরিচিত মনে হতে লাগলো মানুষটিকে। কোথায় যেনো দেখেছি! কোথায় যেনো---


কাছে গেলাম আমি। আরে! এ তো আমাদের হু মু এমদাদ সাহেব! উনার আশে পাশে উনার দলের আর কাউকেই দেখতে পেলাম না। অবশ্য সেটাই স্বাভাবিক। গাছেরটা খেয়েছেন, সাথে থেকে তলারটাও কুড়িয়েছেন, উনার তেমন বন্ধুরা পৃথিবীতে থাকতেই সুযোগ মত কেটে পড়েছিলেন আর আজ তো কিয়ামত।


উনার কাছে গেলাম আমি। কথাবার্তা বলে যা জানলাম, তা হচ্ছে, অনেকগুলো কারণে আজ তিনি ধরা খেয়েছেন। যে মহিলারা ছেলেমেয়ে নিয়ে ঘিরে রেখেছেন তাকে, তাদের দাবি, তাদের সবগুলো সন্তানের বাবা হলেন তিনি! কিন্তু হু মু এমদাদ সাহেব সেটা স্বীকার করতে চাইছেন না! আশ্চর্য! তিনি যাকে নিজের পূত্র বলে দাবি করছেন, সেই ছেলে যে উনারই, নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। আবার যেগুলো পিতৃ্ত্বের দাবি তোলা হচ্ছে তাকে ঘিরে, তিনি সেটা মেনে নিচ্ছেন না!!


ফেরেশতারা পড়েছেন মহা মুশকিলে। এখন রীতিমত ডিএনএ টেস্ট এর ব্যবস্থা করতে হবে। তাঁরা যাচ্ছেন আল্লাহ পাকের কাছে। এ ব্যাপারে করণীয় কী, সেটির সিদ্ধান্ত আনতে হবে। আমি ফিরে আসলাম সেখান থেকে। এই ব্যাপারে আপডেট জানতে আরো অপেক্ষা করতে হবে আমাদের। সে পর্যন্ত আমরা বসে না থেকে বরং অন্য দিকে যাচ্ছি।


------------

------------------

ঘুরতে ঘুরতে আমার দেখা হল ডঃ জামাল হুসেনের সাথে। তিনি একজন বিখ্যাত আইনজীবি ছিলেন। উনার কাহিনী কি! জিজ্ঞেস করলাম ফেরেশতাকে। আমাকে জানানো হল, তিনি ধরা খেয়েছেন অন্য কারণে। উনাকে বলা হয়েছে পৃথিবীতে থাকতে তুমি যা যা করেছিলে, সব বাদ, শুধু একটি প্রশ্নের জবাব দাও। তোমার বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে তুমি তোমার নিজের দেশের আলো বাতাস ব্যবহার করতে, কিন্তু তোমার হৃদয়ের টান ছিলো পশ্চিম পাড়ার দিকে! ওরাই ছিলো তোমার মনের মানুষ। নিজ দেশের স্বার্থেরচে’ ওই দেশের স্বার্থই ছিলো তোমার কাছে বড়। এমন অভিযোগ আছে তোমার বিরুদ্ধে। বলো সত্যি কি না? তুমি চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে পারো। বলো কী চাও তুমি?


তিনি আমতা আমতা করেছেন। জবাব দিতে পারেননি। তিনি জানেন আজ যুক্তি খাড়া করে পার পাওয়া যাবে না। আজ কথা বলবে শুধুই ডকুমেন্ট। তিনি বিড় বিড় করে শুধু বলেছিলেন,

পরম করুণাময়ের করুণা চাই আমি।
কী চাই বললে? কী চাই?
করুণা
কার করুণা?
পরম করুণাময়ের।
তিনি আবার কে?
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন।
মানে? তুমি কি তার করুণায় বিশ্বাস করো?
জি, কেনো করবো না?
পৃথিবীতে থাকতেও করতে?

একটু থমকে উঠলেন তিনি! সারা জীবন অন্যকে জেরা করেছেন তিনি। নিজে কখনো জেরার সামনে পড়েননি। আজ পড়েছেন। বুঝতে পারছেন জেরা অন্য দিকে মোড় নিচ্ছে। কী বলবেন, ভেবে পাচ্ছেন না।


ফেরেশতা বললেন,

কী হলো? কথা বলো---!
--------- তিনি এখনো নিশ্চুপ
কথা বলছো না কেনো? হাত বন্ধ কেনো? কথা না বললে তো হবে না!

এই ফাঁকে জানিয়ে রাখা দরকার আজ কিয়ামতের দিন। মুখ বন্ধ। সারা জীবন মুখ তথা জিহবা কথা বলেছে। সত্য-মিথ্যা , বলেছে যা খুশি, যেমন খুশি। আজ আল্লাহ আদেশ জারি করেছেন। আজ মুখ না, কথা বলবে হাত। সাক্ষ দেবে পা।


ফেরেশতাদের পক্ষ থেকে হালকা ধমক দিয়ে বলা হলো, চুপ করে থাকলে তো হবে না। কথা বলতে হবে। তোমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে পৃথিবীতে থাকতে তুমি কি আল্লাহর করুণায় বিশ্বাস করতে? তাহলে ঊনিশশ’ কুয়াত্তর সালে তোমাদের দেশ চালনার সংবিধান যখন তৈরি করেছিলে, তুমিই তো ছিলে ফ্রন্ট লাইনের কারিগর। কোথায় ছিলো করুণার কথা? কোথায় ছিলো আল্লাহর নাম?


বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন তিনি। তিনি তার মেয়ের সাহায্য নিতে চাইলেন। উনার মেয়েও আইনজীবি । তাকে জানানো হলো, আজ ওকালতি চলবে না। কিছু বলতে চাইলে আত্মপক্ষ সমর্থন করে, সেটা নিজেকেই করতে হবে। তাছাড়া কন্যাও আছেন রিমান্ডে। উল্টা-পাল্টা তো আর তিনিও কম করেননি বেঁচে থাকতে!


আমি জানি না চূড়ান্ত রায়ে কী হবে। বিচার তো এখনো শুরু হয়নি, আনুষ্ঠানিকভাবে। শুরু হোক, তারপর। চলুন, দেখি আর কার কী অবস্থা!!!


আমি আছি, ঘুরছি, সাথেই থাকুন।

সে ছিলো এক ভিন্ন সফর--- ২



পূর্ব প্রকাশিতের পর

পিনপতন নিরবতা মাড়িয়ে এগিয়ে চলেছি আমি। বিশেষ ব্যবস্থায়। হঠাৎ চোখে পড়ল একটি জটলা। এগিয়ে গেলাম আমি। কয়েক হাজার মানুষকে মাথা নিচে পা উপরে-অবস্থায় ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। কাছে গেলাম আমি। এরা কারা-জানা দরকার। কী এমন পাপ তারা করেছিল যে, আজ তাদের এই করুণ পরিণতির সামনা করতে হল!!

খোঁজ নিয়ে জানলাম এরা হচ্ছে নাস্তিক। পৃথিবীতে থাকতে তারা বলত, স্রষ্টা বলে কিছু নেই। আজ তাদের আল্লাহপাকের সামনে হাজির করে বলা হয়েছিল, তোমরা বলতে আল্লাহ বলে কেউ নেই! এখন---

ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে একটি শব্দই শুধু বের হয়েছে তাদের মুখ থেকে, সরি। ফেরেশতারা জানিয়ে দিয়েছেন, আজ নো সরি। যা করার করে ফেলেছ। সুযোগ দেয়া হয়েছে। আর না। আজ পরিণতি দিবস। তারপর তাদের উলটো করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এভাবে কত দিন থাকতে হবে- বলা মুশকিল। বিচারিক কার্যক্রম কতদিন চলবে, আল্লাহপাক ছাড়া কেউ জানে না। শুধু একটি অংকই জানা গেছে। কিয়ামতের এক দিন হবে পৃথিবীর হিসাবে ৫০ হাজার বছরের সমান! এর মানে এই পৃথিবীতে কেউ যদি একশ বছর বেঁচে থাকে, তাহলে কিয়ামতের এক দিনের তুলনায় সেটা হবে ২ মিনিট ৪৫ সেকেন্ড!!

-----------
--------------

কিছু দূর এগিয়ে গেলাম আমি। বেশ কিছু সামনে গিয়ে আবিস্কার করলাম ভারি একটি পর্দা টানানো। পর্দার ভেতরে কিছু লোককে জড়ো করা হয়েছে। জানাগেল এরা উম্মতে মুহাম্মদীর আলেম সমাজের একটি অংশ। উনাদের উল্লেখযোগ্য অংশ বাংলাদেশি।

আমার জানামতে পৃথিবীতে থাকতে আলেমরা তো ভালো কাজই করতেন। লোকজনকে নেক কাজের নসিহত করতেন, তাও মাইক লাগিয়ে। বুঝলাম আল্লাহপাক খুশি হয়ে আলেমদের জন্য আজ বিশেষ সম্মান বা আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেছেন, বোধকরি। আফসোস হতে লাগলো আমার। ইচ্ছে করতে লাগলো ভেতরে যাবার। চমৎকার এই ব্যাপারটি কাছে থেকে দেখা দরকার।

পর্দার কাছাকাছি গেলাম আমি। দায়িত্বশীল ফেরেশতার কাছে জানতে চাইলাম, ভেতরে কারা?
ভুরু কুচকে তাকালেন তিনি। চেহারায় বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। আমি আমার পাস দেখালাম। হাশরের মাঠে ঘুরে বেড়াবার জন্যে আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে বিশেষ পারমিশন দেয়া হয়েছে আমাকে। পাস দেখার পর ফেরেশতার মুখের পেশিগুলো স্বাভাবিক হয়ে আসতে শুরু করেল। তিনি জানালেন, উনারা আলেম সমাজ।
আমি বললাম, উনাদের এখানে বিশেষভাবে আলাদা করা হল কেন?
বিশেষ কারণ আছে।
সেই বিশেষ কারণটি কি বলা যাবে?
তিনি বললেন---

তিনি যা বললেন, তাতে আমার আক্কেলগুড়ুম অবস্থা! এমন কিছু শুনতে হতে পারে- আমার কল্পনায়ও ছিলো না। তিনি আমাকে যা জানালেন, তার সারমর্ম হল,

এখানে আলেম-উলামাদের একটা অংশকে জড়ো জরা হয়েছে বিশেষ শাস্থি দেয়ার জন্য। এরা তারা, যারা পৃথিবীতে থাকতে ঐক্যের পক্ষে লম্বা লম্বা কথা বলতেন। মাইক লাগিয়ে কুরআনের আয়াত ওয়া’তাসিমূ বি-হাবলিল্লাহি জামিয়াঊ ওয়ালা তাফাররাক্কূ, ( তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখো, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না) পড়ে পড়ে ওয়াজ করে বেড়াতেন, ঘন্টার পর ঘন্টা লোকজনের কান গরম করে রাখতেন কিন্তু নিজেরা থাকতেন পরস্পর থেকে একশ হাত দূরে!

আমি ফেরেশতাকে প্রশ্ন করলাম, উনাদের সাথে আজ কেমন ব্যবহার করা হচ্ছে?
তিনি জানালেন, তাদের জন্য আজ কেঁচি ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কিছু বুঝতে না পেরে তাকালাম আমি। তিনি বললেন, তাদেরকে পবিত্র কুরআনের আরেকটি আয়াত সামনে নিয়ে এসে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে, লিমা তাকুলূনা মা-লা তাফয়ালূন, সেটা তোমরা কেনো বলতে যা করতে না! তারা জবাব দিতে পারেননি! তাই আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে তাদের জিহবা গোড়ার দিক থেকে আজ কেটে ফেলার নির্দেষ দেয়া হয়েছে! আপনি চাইলে আপনাকে ভেতরে যাবার সুযোগ দিতে পারি। যেহেতু পাস আছে আপনার।

আমি বললাম, তার আর দরকার নেই। শুনেই ভয় করছে আমার। এমন বীভৎস ঘটনা না দেখাই ভালো।

সালাম দিয়ে ঘুরে দাড়ালাম আমি। আমি মুসাফির। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকলে হবে না। আমাকে ছুটতে হবে।

------------
----------------

কিছু দূর অগ্রসর হলাম আরো। হঠাৎ চোখ আটকে গেল এক জায়গায়। দেখলাম ফেরাউন, কারুন, নমরুদ, শাদ্দাদ আর আবু জেহেলদের নেতৃত্বে একটি বিশাল দল একত্রে জট পাকিয়ে বসে আছে ভয়ার্ত চেহারায়। তাদের সাথে বুশ-ব্লেয়ার নেতানিয়াহুরাও আছেন। আমি বিস্মিত হয়ে লক্ষ্য করলাম আমার বাংলাদেশের পরিচিত অনেক মুখও রয়েছে এই দলে। এগিয়ে গেলাম আমি, তাদের কাছাকাছি। এ ব্যাপারে আমাকে কোন তথ্য যদি উদঘাটন করা যায়!

কর্তব্যরত ফেরেশতা আমাকে নিরাশ করলেন না। আমি যখন এখানকার ব্যক্তিবর্গ সম্বন্ধে জানতে চাইলাম, বিশেষ করে যখন জানতে চাইলাম আমার বাংলাদেশি মানুষগুলোকে কেনো এদের কাতারে যুক্ত করা হল, ফেরাউন---বুশ গংরা, ওরা তো একাধিক স্রষ্টা বা ত্রিত্ববাদে বিশ্বাসী। কেউ কেউ নাস্তিকও।এদের সাথে ওদের কী সম্পর্ক?

আমাকে জানানো হল, আপনার বাংলাদেশি যাদের দেখছেন, তারা বেঁচে থাকতে বুশ-ব্লেয়ার-ফেরাউনদের অনুস্মরণ করত। আর পৃথিবীতে থাকতেই জানিয়ে রাখা ছিলো, যে যার সাথে চলবে বা অনুস্মরণ করবে, তার সাথেই তার হাশর হবে!

মুসলমান হয়েও অমুসলিমদের সারিতে দাঁড়ানো ঐ লোকগুলোর ভাগ্যে কী আছে, সেটা জানার জন্য আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। বিচার দিবসের আনুষ্ঠানিক কর্মকাণ্ড শুরু হয়নি এখনো।

আরো সামনে এগুলাম আমি। দেখি আর কার সাথে দেখা হয়। সাথেই থাকুন--