শনিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১০

জাতীয় ক্বারী উবায়দুল্লাহ - যত্নহীন অবহেলিত একটি জীবন্ত লাশ!



দীর্ঘ ৫ বছর তিনি শব্দ করে আল্লাহ বলতে পারেন না! যে আল্লাহর নাম নিয়ে, যে আল্লাহর কথা নিয়ে চষে বেড়িয়েছেন তিনি দেশজুড়ে, ঘুরে বেড়িয়েছেন বিশ্বের আনাছে-কানাছে, যে আল্লাহর চিরন্তর বাণী কোরআনের তেলাওয়াত দিয়ে ঝড় তুলেছেন লক্ষ কোটি মুসলমানের হৃদয়ে, সেই আল্লাহর নামটি এখন স্বশব্দের আর উচ্চারণ করতে পারেন না তিনি। আর তাই এখন দু'চোখ দিয়ে বের হতে থাকে বিদগ্ধ পানি। এ যেন কান্না নয়, কষ্টের বরফগলা। এ যেন যন্ত্রণার বিষাক্ত ঝরনাধারা।


 কান্নাই এখন তার সব'চে কাছের, সব'চে বিশ্বস্থ বন্ধু। কত রাত, গভীর রাত তিনি চোখের জলে বুক ভাসিয়েছেন আল্লাহর জিকির করে করে। কত রাত ভোর হয়েছে তেলাওয়াতের সুরে সুরে। আজও তিনি চোখের জলে বুক ভাসান এই জল প্রিয় প্রভুকে চিৎকার করে ডাকতে না পারার বেদনার। তার এখনকার চোখের পানি কষ্টের, দগ্ধ অন্তরের, অতৃপ্তির, যন্ত্রণার। তিনি আমাদের সকলের প্রিয় ক্বারী মাওলানা উবায়দুল্লাহ।


 ৫ বছর ধরে তিনি কথা বলতে পারেন না। ডানপাশ প্যারালাইজড হয়ে গেছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে পারলে আবারো তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসতে পারতেন ক্বিরাতের জগতে। আবারো মাতিয়ে তুলতে পারতেন কোরআন প্রেমীদের হৃদয়। কিন্তু বড় অবহেলায় পড়ে রয়েছেন এই বাংলাদেশের জাতীয় ক্বারী। খালেদা জিয়া, শেখ হাসিনারাও এক সময় ক্বারী উবায়দুল্লাহর তেলাওয়াত শুনে বিমুগ্ধ হতেন। আর আজ .......


রমযান মাসে জায়গায় জায়গায় বিভিন্ন বোর্ডের মাধ্যমে ক্বিরাআত প্রশিক্ষণ দেয়া হয় । ক্বারী উবায়দুল্লাহও রমযান মাসে ঘুরে বেড়িয়েছেন ক্বিরাআতের সেন্টারগুলোতের। তেলাওয়াতের সুরের মুর্ছনায় ঝংকার তুলেছেন অযুত অন্তরে। আযান আজও আছে তবে হযরত বিলাল (রাঃ)’র সেই আযান আর শুনা যায় না। ক্বিরাআত আজও হয়, তবে ক্বারী উবায়দুল্লাহ’র সেই সুর আর কানে ভেসে আসে না! 


দুই// 
বাংলাদেশের জাতীয় ক্বারীর স্বীকৃতি পাওয়া মাওলানা ক্বারী উবায়দুল্লাহ রাষ্ট্রপতির ভাষণ, বাজেট অধিবেশনসহ জাতীয় সংসদের গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশন, রাষ্ট্রপতির বিশেষ কোনো প্রোগ্রামে, রেডিও, টেলিভিশনে, সর্বত্র কোরআনের তেলাওয়াত দিয়ে মুগ্ধ করেছেন সবাইকে। বিভিন্ন সময় আন্তর্জাতিক ক্বিরাআত সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে দেশের জন্য সুনাম কুড়িয়েছেন। সেই সাথে চকবাজার শাহী মসজিদের খতীব হওয়ায় প্রতি জুম্মায় পবিত্র কোরআনের মর্মবাণীও ব্যাখ্যা করে শুনিয়েছেন মুসলমানদের। 


বিভিন্ন দ্বীনি মাহফিলে বক্তব্য রেখেছেন। নসিহত করেছেন লোককে। জীবন ভর কোরআন সংশ্লিষ্ট খেদমতে বিলিয়ে দিয়েছেন নিজেকে। কোনো প্রতিদান চান নি। নীতির প্রশ্ন আপোষও করেন নি কখনও। কাউকে হেয়-ও করেন নি আবার তেলও মারেন নি। যে যুগে টেলিভিশনে সুযোগ পাবার জন্য একশ্রেণীর ক্বারী সাহেবান লাইন ধরে থাকেন, সেই যুগে এমনও হয়েছে যে, টেলিভিশন থেকে লোক এসছে গাড়ী নিয়ে, টিভিতে তেলাওয়াতের উদ্দেশ্য নিয়ে যাবার জন্য কিন্তু তিনি গাড়ী ফিরিয়ে দিয়েছেন কিরআতের ক্লাস করাচ্ছিলেন বলে। দারস্ ছেড়ে উঠেন নি। রাষ্ট্রীয় অফার ফিরিয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট বড় ঈমানী কলিজা লাগে। সেরকম বিশাল একটি কলিজা নিয়েই জন্মেছেন তিনি।


 কখনোই কোনো দুর্বলতা ছিল না তাঁর। নিজের জন্য এ অব্দি কিছুই করেনি। এবং তার'চেও আশ্চর্য ব্যাপার হলো, সেই চেষ্টাই করেন নি কখনো। এখনও ঢাকার লালবাগ চাদনীঘাটে জীর্ণ-শীর্ণ এক ঝুপড়ীতেই বাস করেন। খাট-বিছানাও অতি নিম্ন মানের। চাইলে অনেক কিছুই করতে পারতেন তিনি, কিন্তু কোরআনের সুর যার রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে গেছে, তার আর কী চাই? হায়! আজ তিনি সেই প্রিয় কোরআন আর সুর করে তেলাওয়াত করতে পারেন না! 


তিন// 
বেশ কিছুদিন আগেও জাতীয় পত্রিকাগুলোর প্রথম পাতা জুড়ে কভারেজ পেয়েছিলেন কন্ঠ শিল্পী সাবিনা ইয়াসমীন। “গানের পাখি সাবিনা ইয়াসমীনকে সু-চিকিৎসার মাধ্যমে আবারো গানের জগতে ফিরিয়ে আনতে দেশবাসীর সহযোগিতা চাই” টাইপের বিজ্ঞাপন, নিউজ, হয়েছে। দিনের পর দিন ফলোআপ প্রতিবেদনও হয়েছে। সরকারও সাবিনা ইয়াসমীনের ব্যাপারে যথেষ্ট সহানুভূতিশীল আচরণ করেছেন। সরকারের উদ্যোগে এবং গানপ্রিয় মানুষের সহায়তায় সাবিনা ইয়াসমীন সুস্থ হয়েছেন। ফিরে এসেছেন আবারো সেই জগতে, যেখানে তার বিচরণ। 


এই দেশে অর্থাৎ ৮৮% মুসলমানের এই বাংলাদেশে গানের ভক্তরা তাদের গানের পাখিকে আবারো গানের জগতে ফিরিয়ে আনার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা-তদবীর করতে পারে, কিন্তু কোরআনের পাখি ক্বারী উবায়দুল্লাহ'কে আবারো তেলাওয়াতের সুরের জগতে ফিরিয়ে আনার জন্য কেউ ‘টু’ শব্দটিও পর্যন্ত করছেন না! 




দীর্ঘ ৫০ বছর এদেশে কুরআনের খেদমত করলেন মানুষটি। তিনি তেলাওয়াতের জন্য গেলে জাতীয় সংসদের অধিবেশনই শুরু হতোনা, শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রোগ্রামই শুরু হতোনা। সেই মানুষটি আজ পড়ে আছেন অযত্নে-অবহেলায়। কেউ কিছু বলছেনা।


 ক্বারী উবায়দুল্লাহ এখনো প্রতি রাতে হাত তুলে চোখের পানি ছেড়ে ছেড়ে দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য দোয়া করেন। তবে তাঁর বুকের ভেতর যে চাপা ক্ষোভ ও যন্ত্রনা রয়েছে, সেটাকে তো তিনি চাইলেও মুছে ফেলতে পারবে না। আর ক্বারী উবায়দুল্লাহর মতো খালিস্ দ্বীনদার কুরআনের খাদিমের প্রতি আমাদের অবজ্ঞা ও অবহেলার পরও আমরা বুঝতে পারি না নার্গিস, আয়লা ও লায়লারা বারবার এসে আমাদের কেন হুমকি দিয়ে যায়। 


, শিল্পী সমিতি সাবিনা ইয়াসমীনের জন্য মাঠে নেমেছিলেন। 
 আফসোস, এদেশে যদি কোনো ক্বারী সমিতি থাকতো, অথবা থাকতেন কয়েকজন কুরআনপ্রেমী, তাহলে তারাও নিশ্চয় সকলের প্রিয় উবায়দুল্লাহর জন্য মাঠে নামতেন।  গানের ভক্ত আছে এদেশে লক্ষ-কোটি, তারা তাদের প্রিয় শিল্পীর জন্য সাহায্য সহযোগিতা ও ভালবাসা প্রদর্শন করেছে। ইস্! যদি এদেশে কিছু কোরআনের ভক্তও থাকতো, তাহলে তারাও তাদের প্রিয় ক্বারীর জন্য কিছু না কিছু তো করতোই। 


চার//
 গত ১৭ই আগষ্ট ০৮ বিশ্ব বরেণ্য এই ক্বারী, মাওলানা ক্বারী উবায়দুল্লাহকে তাঁর একান্ত কিছু অনুরাগীগণ দুই দিনের সফরে সিলেট নিয়ে এসেছিলেন। ১৭ই আগষ্ট সন্ধ্যা ৭.৩০ মিনিটে হুজুরকে রিসিভ করতে গাড়ী নিয়ে গিয়েছিলাম আমি, সাথে ছিলেন বাংলাদেশ বেতারের ক্বারী মাওলানা গোলাম আহমদ সাহেব। হুজুর কথা বলতে পারেন না আবার এক সাইট প্যারালাইজ হয়ে গেছে বলে একা একা চলতেও পারেন না। সাথীদের কাধে ভর দিয়ে এসে গাড়ীতে উঠলেন। আর তখন বারবার আমার মনে পড়তে লাগলো দেড় হাজার বছর আগে শেষ নবীর জীবনের শেষে নামাজের কথা ....


. মা আয়েশার হুজরায় বিশ্বনবী মৃত্যু শয্যার শায়িত। উঠে মসজিদে যাবেন, সেই শারীরিক ক্ষমতা  আর নেই। হযরত আবু বকর ইমামতির জন্য দাড়িয়েছেন বিশ্বনবীর মসল্লায়। পা টলছে, বুক কাঁপছে আবু বকরের। যেখানে দাঁড়িয়ে বিশ্বনবী নামাজ পড়াতেন, নবী এখনো পৃথিবীতেই আছেন, তারপরও নবীর মসল্লায় দাড়ানো, পা তো কাঁপবেই। 


নামাজ শুরু হয়ে গেল। আল্লাহু আকবার ধ্বনি শুনে নবীজি আর স্থির থাকতে পারলেন না। দু'’জন সাহাবীর কাধে ভর করে সোজা চলে গেলেন মসজিদে। আয়েশা বলেন, আমি আল্লাহর সত্ত্বার শপথ করে বলি, নবীজি হুজরা থেকে মসজিদে যাওয়া পর্যন্ত উভয় পা’র কোনো একটি আঙুল মাটিতে সামান্য পরিমাণও ভর দিতে পারেনি। পা টেনে টেনে গিয়ে পৌছেছিলেন নামাজে।  
১৫শত বছর পরে সেই নবীর এক প্রিয় শিষ্য সেই নবীর সবচে’ প্রিয় বস্তু কোরআন’র আশেক ক্বারী উবায়দুল্লাহ নিজ পায়ে আর চলতে পারেন না। কথাও বলতে পারেন না। এই অবস্থায়ও কোরআনের টানে ছুটে এসেছেন। 


সেদিন আল মারকাজুল খায়রী আল ইসলামী সিলেট’র মহাসচিব মাওলানা ক্বারী রফীকুল ইসলাম মুশতাক সাহেবের বাসায় অনেক লোক জড়ো হলেন হুজুরের সান্যিধ্যের জন্য। এর মধ্যে অনেক ক্বারী সাহেবগণও এসে উপস্থিত হলেন। অনেকেই হুজুরের সামনে তেলাওয়াত করলেন। একটি ছোট খাটো ক্বিরাআত সম্মেলন মতন জমে উঠলো মুহুর্তগুলো। সকলেই খুশি প্রিয় ক্বারীকে পাশে পেয়ে। আমি লক্ষ্য করলাম হুজুর কাঁদছেন! তাঁর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে! পরিবেশ ভারী হয়ে এল। উপস্থিত সকলের মুখের হাসি মিলিয়ে গেল। এমন মাহফিলের মধ্যমণি হিসেবে সব'চে উচু স্বরে তিনিই এক সময় ক্বিরাআত পড়েছেন। আর আজ অন্যরা, তাঁর ছাত্ররা পড়ছে কিন্তু তিনি পারছেন না, কান্না ছাড়া আর কী-ই-বা করতে পারতেন তিনি? 


১৯শে আগষ্ট ’০৮ ভোর ৬টায় হুজুরকে বিদায় দিতে গেলাম। মন খারাপ হয়ে গেল আবার। সবাই হাত মেলাচ্ছেন, দোয়া চাইছেন কিন্তু বিনিময়ে মুখ দিয়ে কিছুই বলতে পারছেন না। শুধু চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে পানি। ঢুকরে কেঁদে উঠলেন যাবার মুহুর্তে। কেঁদে এবং কাঁদিয়ে বিদায় নিলেন সিলেট থেকে। 


পাঁচ// 
ডাক্তার বলেছেন বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠাতে পারলে ক্বারী উবায়দুল্লাহ’র আবারো কন্ঠস্বর ফিরে পাবার বেশ ভাল সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু সরকারী-বেসরকারী, কোথাও কোনো উদ্যোগ নেই। এবং তার'চেও আশ্চর্য্যরে ব্যাপার হল এ নিয়ে কোনো আলোচনাও নেই। 


আফসোস! প্রিন্সেস ডায়নার অন্তর্বাসের নিলামের পরিমাণ কত তে গিয়ে উঠলো, লবণ মরিছ মাখিয়ে প্রচার করবার জন্য এদেশের মিডিয়াগুলোতে যথেষ্ট জায়গা থাকে কিন্তু ক্বারী উবায়দুল্লাহ’র মত একজন জাতীয় ক্বারীর জন্য মানবিক আবেদনের জন্য কোনো জায়গা থাকে না! আমরা কোন দেশে বাস করি! 


৩রা জুন ২০১০ আল-জামেয়া কুরআন শিক্ষা বোর্ড, সিলেটের উদ্যোগে অনুষ্ঠিতব্য ক্বিরাআত সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে আবারও সিলেট আসলেন ক্বারী মাওলানা উবায়দুল্লাহ। আসলেন, মঞ্চে উঠলেন আর অবধারিতভাবে চোখের পানিই ফেললেন। তার হাজার হাজার ছাত্র, অসংখ্য ভক্ত অনুরাগী চেয়ে চেয়ে দেখলো। কারো কারো চোখ ভিজে উঠলো হয়তো। কারো মনে সামান্য দাগ কাটলো হয়তো। কিছু সময় হা হুতাশ করা হলো। ইস্ উফ্ জাতীয় কিছু আওয়াজ শুনা গেলো। আর এটা ততক্ষণ, যতক্ষণ এই মানুষটি সামনে থাকলেন। তিনি যখন চলে গেলেন, আমরা আবার ব্যস্ত হয়ে পড়লাম আপন ভুবনে। একজন ক্বারী উবায়দুল্লার জন্য ভাববার সময় কোথায় আমাদের! 


আমি ঠিক করেছি  বয়ো:বৃদ্ধ এই মানুষটির সামনে গিয়ে দাঁড়াবো। “বলবো, আপনি যদি ভেবে থাকেন বাংলাদেশে আপনার হাজার হাজার ছাত্র আছে যারা আপনাকে অন্তর দিয়ে ফিল করে, তাহলে সেটা ভুল। 


আপনি যদি ভাবেন এদেশে আপনার লক্ষ লক্ষ ভক্ত অনুরাগী আছে, তাহলে সেটা আরো বড় ভুল। থাকলে তো খোঁজ নিত। 


আপনি যদি ভাবেন এদেশের মানুষ আপনাকে ভালবাসে। তাই আপনার চিকিৎসার ব্যাপারে কিছু করবে, তাহলে ভুলে যান সেটা। আপনার মতো মানুষের জন্ম হয় দেবার জন্য, পাওয়ার জন্য নয়। আপনার জন্য আমরা কিছুই করছিনা। কিছুই করবো না, তবুও আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে আমরা আপনাকে ভালবাসি! 


আপনি একটি জীবন্ত লাশ হয়ে আমাদেররই চোখের সামনে ধুকে ধুকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছেন, আমরা দেখেও দেখছি না, তবুও আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে আপনাকে ভালবাসি। 


আপনি চলে যাওয়ার পর পত্রিকায় পাঠানোর জন্য শোক বিবৃতিও তৈরি করে ফেলেছি অনেকে, কারণ আমরা আপনাকে ভালবাসি! 


জীবনে আপনি নিজের জন্য করেণ নি কিছু। করেছেন অন্যের জন্যে, আমাদের জন্যে। এই শেষ বিকেলে এসে আমাদেরকে আর পাশে পাচ্ছেন না, তবুও আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে আমরা আপনাকে ভালবাসি। 


আপনার যত ছাত্র (?) আছে সারাদেশে, যত ভক্ত আছে, সবাই আপনার দিকে শুধু তাকালেই সম্পন্ন হয়ে যেতো আপনার সু-চিকিৎসার সকল আয়োজন। কিন্তু ব্যস্ত এই পৃথিবীতে আপনার দিকে তাকাবার সময় কোথায়। তবে বিশ্বাস করুন আমরা আপনাকে ভালবাসি। খুব ভালবাসি। 


প্রিয় উবায়দুল্লাহ, আপনি কি আমাদের ক্ষমা করবেন?    

মঙ্গলবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১০

হাসিনা খালেদা টেলি সংলাপঃ যৌথ চলার অঙ্গিকার


Lye †fv‡i Nyg †_‡K IVv `xN© w`‡bi A‡f¨m|
AvRI DV‡jb| j¤^v GKUv nvB Zz‡j ev_i“‡g XyK‡jb wZwb| †d«k n‡jb| ev_i“g †_‡K †ei n‡jb IRy K‡i| dR‡ii bvgvR c‡o Rvqbvgv‡R em‡jb KziAvb kixd wb‡q| c‡bi wgwbU †ZjvIqvZ Ki‡jb| cÖwZw`bB K‡ib| Ab¨vb¨w`b GKUz †ewk K‡ib| AvR GKUz ZvovZvwo D‡V co‡jb wZwb RvqbvgvR †_‡K| GKUz Zvov Av‡Q AvR| AvR n‡e GKwU we‡kl w`b| AvR wZwb Ggb GKwU KvR Ki‡eb, Gi Av‡M Avi †KD KL‡bv K‡iwb| ¶gZv wQ‡jv mevi, ZeyI K‡iwb †KD| wZwb Ki‡eb KvRwU| my›`‡ii PPv©, †µv‡ai cwimgvwß, †mUv †Zv Kv‡iv bv Kv‡iv ïi“ Kiv `iKvi|

AvR 15B wW‡m¤^i 2010Bs| AvR †_‡K 39 eQi Av‡Mi K_v| 24 eQi evOvwj RvwZ‡K wZ‡j wZ‡j wbhv©Zb Kivi ci cwðg cvwK¯—vwb nv‡qbviv 25†k gvP© 1971 G wbixn evOvwj RvwZi Svwc‡q c‡owQ‡jv cvMjv KzKz‡ii g‡Zv| ciw`b 26†k gvP© 1971 †_‡K ïi“ nq evOvwj RvwZi cÖwZ‡iva| mv‡o mvZ †KvwU evOvwj gyw³ Pvq| Avjv`v cZvKv Pvq| cvwK¯—vwb †Mvjvg n‡q Avi †eu‡P _vK‡Z Pvq bv| ïi“ n‡jv gyw³hy×| gyw³i wgwQ‡j G‡m R‡ov n‡Z jvM‡jv evsjvi `vgvj †Q‡jiv| jyw½ c‡i, Mv‡q MvgQv †cuwP‡q ivB‡dj Kv‡a Qy‡U P‡j‡Q gyw³†hv×v, c„w_exi gvbyl Ggb `„k¨ Gi Av‡M Avi †`‡Lwb| 9 gvm wU‡K wQ‡jv cvwK¯—vwbiv| Ae‡k‡l AB †cvlv wg‡jUvixiv †jR NywU‡q cvjv‡Z eva¨ n‡jv| bv‡K LZ& w`‡q Zviv wd‡i †Mj Zv‡`i wVKvbvq| ¯^vaxb n‡jv 56 nvRvi eM©gvB‡ji GB meyR k¨vgj f~ÑLÛ|

AvR 15B wW‡m¤^i 2010Bs | bvgvR †k‡l, †ZjvIqvZ †k‡l, wKQy cÖvZ¨wnK Zmexn cvV Kiv †k‡l D‡V `uvov‡jb wZwb| nvjKv wjKv‡i GKKvc Pv †L‡jb| m‡½ GK wcQ bybZv wew¯‹U| cvb LvIqvi †Zgb A‡f¨m †bB Zuvi| AvR RÏv© w`‡q GKwU cvbI gy‡L w`‡jb| Zvici Av‡¯— Av‡¯— P‡j‡M‡jb jvj †Uwj‡dvbwUi Kv‡Q| A‡bK †f‡e AvR wZwb GB wm×vš—wU wb‡q‡Qb| Kv‡iv mv‡_ civgk© K‡ib wb| GgbwK wb‡Ri †Q‡jцg‡qi mv‡_I bv| KvswLZ wWwRU¸‡jv Pvc‡jb| wis n‡”Q! wZwb A‡c¶v Ki‡Qb| GKevi, `yÕevi, ‡gvU Qq evi UªvB Ki‡jb wZwb| cÖwZeviB wis n‡q Ô†bv AvbmviÕ †Uvb ïbv‡Mj| wiÑWvqvj evU‡b Pvc w`‡jb Avevi| 4_© wis n‡ZB wiwmf n‡jv †dvb| Icvm †_‡K †f‡m Avm‡jv KvswLZ †mB KÚÑ
Òn¨v‡jv!Ó
Òn¨v‡jv ¯­vgvwjKzg| fvwe, †Kgb Av‡Qb?Ó
ÒIqv AvjvBKzg mvjvg| Av‡i Avcv Avcwb! GZ mKv‡j! Avi Avcbvi MjvUv Ggb jvM‡Q †Kb? †Kgb fv½v fv½v! Avwg‡Zv cÖ_‡g wPb‡ZB cvwi wb!Ó
ÒAvcbvi cÖ‡kœi Reve c‡i w`w”Q| Zvi Av‡M ejyb GZ¶Y a‡i †dvb KiwQ Avwg| Avcbv‡K †c‡Z G‡Zv †`wi n‡jv †Kb? dR‡ii bvgvR c‡o Avevi Nywg‡q Uzwg‡q c‡owQ‡jb bvwK?Ó
Òbv Avcv, Avi ej‡eb bv| iv‡Z wKQy KvR wQ‡jv| †`wi K‡i Ny‡g‡Z †MwQ| ZvB DV‡Z AvR †`wi n‡q †M‡Q| bvgvR c‡o Qv‡` nvU‡Z P‡j wM‡qwQjvg|Ó
ÒI Av”Qv|Ó GKUz _vg‡jb wZwb| Zvi ci ej‡jb, ÓK‡qKw`b n‡jv UbwmjUv GKUz cÖf‡jg Ki‡Q| Kxfv‡e Rvwb VvÛv †j‡M †M‡Q| Gi mv‡_ ivZ †_‡K G‡m †hvM w`‡q‡Q mw`© R¡i| G Rb¨B Mjv GKUz fv½v fv½v jvM‡Q| I wKQy bv| wVK n‡q hv‡e| Zvici fvwe, Avcbvi kixi †Kgb? cv‡q †Kv‡bv mgm¨v n‡”Q bv †Zv?Ó
 Ò wR¡ bv Avcv, cv wVKB Av‡Q| MZ gv‡mB †Zv wKs dvnv‡` wM‡q cix¶v Kwi‡q Gjvg| Av”Qv Avcv, Avcbvi Kv‡bi Ae¯’v Kx?Ó 
        ÒAv‡Mi †_‡K fvj| †ek fvj| K‡qKw`b Av‡MB †Zv Av‡gwiKvq wM‡q †PKvc Kwi Avmjvg| nvmcvZvj †Zv Avevi Avgvi †Q‡ji evmvi cv‡kB| †Q‡jB Avgv‡K wb‡q ‡M‡jv| KZ K‡i ejjvg, fvj AvwQ, `iKvi †bB| †K ï‡b Kvi K_v| Avgv‡K †Rvi K‡i wb‡q †Mj| cvMj †Q‡j!Ó

cvVK, GZ¶‡Y wbðqB ey‡S †M‡Qb Kviv K_v ej‡Qb| Zvn‡j Avi Dwb wZwb e‡j fveev‡P¨ Pvjv‡bvi `iKvi Kx? K_v n‡”Q eZ©gvb cÖavbgš¿x †kL nvwmbv Ges mv‡eK cÖavbgš¿x Lv‡j`v wRqvi g‡a¨| GB Am¤¢e KvRwU Kxfv‡e m¤¢e n‡jv, c‡i ejwQ| Zvi Av‡M Pjyb Dbv‡`i AvjvcPvwiZvi evKx Ask ï‡b wbB|

cÖavbgš¿x ej‡jb, Òfvwe, †Q‡jiv †Kgb Av‡Q?Ó
wKQy mg‡qi Rb¨ wbie n‡q †M‡jb Lv‡j`v wRqv| j¤^v GKwU k¦vm †ewi‡q G‡jv Zuvi †fZi †_‡K| k¦v‡mi mv‡_ †ewi‡q G‡jv gv‡qi ggZv| ej‡jb,
ÒeyS‡ZB cvi‡Qb Iiv †Kgb _vK‡Z cv‡i| `yB eQi Avgvi †Q‡j `y'†Uvi Dci †h wbhv©Zb n‡q‡Q, Zvic‡iI †h Zviv †eu‡P Av‡Q, ZvB‡Zv Avj­vi ïKwiqv| Av”Qv Avcv, mwZ¨ K‡i e‡jb †Zv, Avcwb wK g‡b K‡ib Avgvi †Q‡jiv †m iKg †Kv‡bv Ab¨vq K‡i‡Q?Ó
wKQyUv weeªZ n‡q †M‡jb gvbbxq cÖavbgš¿x| ej‡jb, Ò‡`Lyb fvwe, Avgvi g‡b Kiv bv Kivq †Zv wKQy hvq Av‡m bv| gvgjv¸‡jv †Zv Av`vj‡Z wePvivaxb| Av`vjZB wm×vš— wbK|Ó
Zv‡Zv wVKB Av‡Q. wKš‘ ivR‰bwZK we‡ePbv e‡j GKUv e¨cvi Av‡Q bv? GB †hgb Avcbviv Avcbv‡`i mKj gvgjv ivR‰bwZK nqivwbg~jK e‡j LvwiR Kwi‡q wb‡jb!
Pzc n‡q †M‡jb gvbbxq cÖavbgš¿x.| GB cÖkœwU Zvi Rb¨ GKUz KwVb n‡q †M‡Q! Gici wKQy¶Y wbi‡e †K‡U †Mj| cÖvq 30 †m‡KÛ| Zvici cÖ_g K_v ej‡jb †kL nvwmbv| ej‡jb,
Òn¨v‡jv!Ó
Ònu¨v, ïb‡Z cvw”Q, e‡jb|Ó
ÒAvgiv wK GKwU e¨vcv‡i GKgZ n‡Z cvwi AvR?Ó
Ò‡Kvb& e¨vcv‡i?Ó
ÒAZx‡Z Kx n‡q‡Q, †mUv wb‡q Avgiv Avi K_v ej‡ev bv| Avgiv ej‡ev fwel¨Z wb‡q|Ó
ÒcÖ¯—ve PgrKvi, Avwg ivwR| wKš‘ Avcbvi `‡ji †bZviv wK †mUv gvb‡e?Ó
Ò‡`Lyb, Avgvi `‡jiUv Avcwb Avgvi Dci †Q‡o †`b| Avcwb Avcbvi `‡ji gyLevR‡`i mvgvj w`b|Ó
Ò‡`Lyb Avcv, Avcwb hw` Avcbvi MjvevR‡`i K‡›Uªvj K‡i †dj‡Z cv‡ib, Zvn‡j Avwg Avgvi gyLevR‡`i K‡›Uªvj Ki‡Z cvi‡ev| Avi n¨vu, Avcbvi ˆmq` Avkivd mv‡n‡ei KvQ †_‡K AwZ AvIqvgxjxMvi‡`i wjwóUvI ‡hvMvo K‡i †b‡eb| Avi Avcwb Avcbvi gš¿x-Ggwc‡`i K‡›Uªvj K‡i †dj‡j †Zv mgm¨v Ggwb‡ZB K‡g Avm‡e| ïi“ †Zv DbvivB K‡i| Ó
ÒAvcwb wKš‘ fvwe Avev‡iv AZx‡Z P‡j hv‡”Qb?Ó
Òmwi, Avcv|Ó
ÒAv”Qv wVK Av‡Q| Gevi g~j Av‡jvPbvq Avmv hvK| †`‡k G‡Zv mgm¨v| `ªe¨g~j¨ wbqš¿b Kiv hv‡”Q bv| mš¿vm `gb Kiv hv‡”Q bv, cÖkvmb h‡š¿ MwZkxjZv Avbv hv‡”Q bv| Gw`‡K Avgvi ¸Yai gš¿xiv Kv‡Ri'†P K_v ej‡Qb †ewk| Avevi gv‡SÑg‡a¨ Ggb dvjZz K_vI ej‡Q †KD †KD, hvi Rb¨ Avgv‡K ch©š— weeªZ n‡Z n‡”Q| GB †`L‡jb bv K‡qKw`b Av‡M XvKv wek¦we`¨vj‡q mš¿vmx KZ…©K wbnZ QvÎ, Kx †hb bvg .... nu¨v, Avey eKi, Zvi g„Zz¨‡Z Avgvi ¯^ivóªgš¿x e‡j em‡jb, ÔGUv GKUv wew”Qbœ NUbv, Ggb n‡ZB cv‡i ....?Ó
‡Uwj‡dv‡bi Acvk †_‡K nvwmi kã ïbv‡Mj| †kL nvwmbv ej‡jb, ÒAvcwb nvm‡Qb? Avgvi K_v ï‡b Avcwb nvm‡Qb?Ó
Lv‡j`v wRqv ej‡jb, Òmwi Avcv, Avwg nvmwQ Ab¨ Kvi‡Y| Avcwb ej‡Qb, `ªe¨g~j¨ Kgv‡bv hv‡”Q bv| IUv wK Avgvi mgq Kg wQ‡jv bvwK! Avmj K_v nj, Avgv‡`i GB †`‡k `ªe¨g~j¨ KL‡bv †Kv‡bv miKv‡ii nv‡ZB _v‡K bv| AUv _v‡K wmwÛ‡K‡Ui wbqš¿‡Y| Avi Avcwb Avcbvi ¯^ivóªgš¿xi †edvk gš—‡e¨i K_v ej‡jb| Avcbvi wK g‡b †bB Avgvi ¯^ivóªgš¿x AvjZvd û‡m‡bi K_v| mš¿vmx‡`i ¸wj‡Z wbnZ †Q‡ji gvÑevevi Kv‡Q wM‡q ÔIÕ e‡jwQ‡jv, ÔAvj­vi gvj Avj­vq wbqv‡M‡Q!Ó
†kL nvwmbv ej‡jb, ÒAv”Qv fvwe, QvÎjxM‡K wb‡q Kx Kwi e‡jb †Zv| †Q‡j¸‡jv‡K  †Zv †Kv‡bvfv‡eB `gv‡bv hv‡”Q bv|Ó
ÒAv‡i Avcv| Avgvi mgq Avgvi QvÎ`j Kg K‡i‡Q bvwK! mwi Avcv|Ó
Ò‡Kb! mwi †Kb?Ó †kL nvwmbvi K‡Ú we®§q|
Lv‡j`v wRqv ej‡jb, ÒwKQzw`b Av‡M msm‡` Avgvi `‡ji wKQ mvsm` PvPv‡K (e½eÜz)wb‡q †h †bvsiv K_v¸‡jv e‡j‡Q, mwZ¨B †mUv `ytLRbK| Avwg Zv‡`i n‡q Avcbvi Kv‡Q ¶gv PvBwQ|Ó
Ò¶gv‡Zv Avgv‡iv PvIqv `iKvi| Avgvi `‡ji mvsm`ivI †Zv fvB mv‡ne‡K(wRqvDi ingvb) wb‡q ev‡R K_v e‡j‡Q| Avi Avcbvi Kv‡Q‡Zv Ggwb‡ZB we‡klfv‡e ¶gv PvIqv `iKvi|
‡K‡bv? we‡klfv‡e ¶gv PvIqv `iKvi †K‡bv?
KviY Avcbv‡K Avcbvi Pwj­k eQ‡ii emZ evwo †_‡K D‡”Q` K‡iwQ! mwi fvwe| eyS‡Z cviwQ KvRUv wVK nqwb wKš‘ `‡ji †fZi AvwgI Pv‡c wQjvg|
bv Avcv, G wb‡q Avcbvi nxbgb¨Zvq †fvMvi †Kv‡bv KviY †bB| AvgviB DwPZ wQ‡jv evwowU Av‡MB †Q‡o †`qv| ZvQvov we‡klfv‡e ¶gv ‡Zv AvgviI PvIqv `iKvi|
‡K‡bv?
KviY, MYfeb †_‡K AvwgI Avcbv‡K †ei K‡i w`jvg bv! Kx ‡h n‡qwQ‡jv ZLb! Avm‡j n‡q‡Q wK, Avgvi Dc‡`óvivB gv_vUv Avgvi ¸wj‡q †K‡q †dj‡Q!
Ime K_v Avi †U‡b bv AvbvB fv‡jv| Avi Dc‡`óv‡`i K_v ej‡Qb? Avgvi nhiZM‡Yi Ae¯’v †`_‡Qb bv? hvB †nvK, Kv‡Ri K_vq Avwm|
 Avwg Avcbvi mvnvh¨ PvB|Ó
Ò Kx mvnvh¨?Ó
ÒAvwg PvB ivóª cwiPvjbvq mvwe©Kfv‡e Avcwb Avgv‡K civgk© †`‡eb|Ó
ÒZvi †Kv‡bv `iKvi Av‡Q e‡j †Zv g‡b nq bv| Avcbvi †jLvcov †hvM¨Zv †Kv‡bvwUB †Zv Avgvi †_‡K Kg bv|Ó
Òbv fvwe, cvk KvwU‡q hv‡eb bv| Avwg wKš‘ Avcbv‡K QvowQ bv|Ó
Òejyb Avgv‡K Kx Ki‡Z n‡e?Ó
ÒcÖ_‡gB Avcwb hv Ki‡eb  Zv n‡jv, Avgvi †h †Kv‡bv KvR mwVK g‡b bv Ki‡j, †`‡ki gvby‡li ¯^v_©we‡ivax g‡b n‡j mv‡_ mv‡_B Avgv‡K †dvb Ki‡eb|Ó
ÒAv”Qv wVK Av‡Q|Ó
Ò‡`‡ki ¯^v‡_© †Kv‡bv KvR Kiv DwPr g‡b n‡j  Avgv‡K e‡j †`‡eb|Ó
ÒAv”Qv wVK Av‡Q|Ó
ÒAvgv‡K me mgq †QvU †ev‡bi g‡Zv †`L‡eb| Avwg †Zv Avcbvi ‡P‡q `yB eQ‡ii †QvU|Ó
ÒAv”Qv wVK Av‡Q| Avi wKQy?Ó
Ònu¨v, Gev‡i Avwg Avgvi Avmj cwiKíbvi K_vwU ej‡ev| A‡bK †f‡e Avwg GB wm×vš— wb‡qwQ| Avcwb wKš‘ bv Ki‡Z cvi‡eb bv|Ó
Òejyb Avcv| Kx Ki‡Z n‡e Avgv‡K?Ó
Ò‡Zgb wKQyB Ki‡Z n‡e bv| Avcbv‡K ïay nu¨v ej‡Z n‡e|Ó
ÒKx e¨vcvi Avcv! †`‡k nuvÑbv †fvU w`‡”Qb bvwK?
 Lv‡j`v wRqvi K‡Ú iwmKZv| †kL nvwmbv ej‡jb, ÒAvcwb K_vwU‡K nvjKv fv‡e †b‡eb bv fvwe| Avwg wmwiqvmwjB ejwQ|Ó
ÒAv”Qv ejyb Avgv‡K †Kv_vq nv ej‡Z n‡e?Ó
ÒejwQ! Zvi Av‡M ejyb Avcbvi evmvq wK dzj¸‡jv †cŠu‡Q‡Q?Ó
ÒKx‡mi dzj?Ó
ÒAvwg Avcbvi Rb¨ wKQy dzj cvwV‡qwQ| AvR Avwg Ggb GKwU KvR Ki‡Z hvw”Q, hv Gi Av‡M †KD Avi K‡iwb| ZvB dz‡ji ï‡f”QvUv Avcbv‡KB cÖ_g cvVvjvg|Ó
ÒAvcv, _¨vsK q~¨|Ó
ÒAv”Qv fvwe, AvR KZ ZvwiL, Avcbvi g‡b Av‡Q?Ó
Òg‡b _vK‡e bv †Kb? AvR  15B wW‡m¤^i|Ó
ÒGLb KUv ev‡R?Ó
ÒmKvj 7Uv evBk|Ó
ÒAvMvgxKvj KZ ZvwiL?Ó
Ò‡Kb! 16B wW‡m¤^i ©|Ó
16B wW‡m¤^‡ii cÖ_g cÖni †Zv ïi“ n‡e AvR ivZ 12 Uv 1 wgwbU †_‡K| knx` wgbv‡i dzj w`‡Z hv‡eb bv?Ó
ÒnVvr G cÖkœ †Kb?Ó
ÒAvcwb wKš‘ Avgvi cÖ‡kœi Reve †`bwb|Ó
Ònu¨v hv‡ev| cÖwZ eQiB †Zv hvB|Ó
ÒAvwg Gevi GKUz Ab¨fv‡e dzj w`‡Z PvB|Ó
ÒAb¨fv‡e! Avcwb wK †nwjKÞv‡i K‡i knx` wgbv‡i hvevi K_v fve‡Qb?Ó
Òbv fvwe, Avgvi gv_vq GKUv Ab¨ cwiKíbv G‡m‡Q| Avwg wVK K‡iwQ Gevi Avcwb Avi Avwg Avgiv `ÕR‡b wg‡j GK mv‡_ GKwU †Zvov †`‡ev|Ó
f¨vev‡PKv †L‡q DV‡jb Lv‡j`v wRqv! Kx ej‡eb †f‡e †c‡jb bv| cÖavbgš¿x ej‡jb,
ÒKx n‡jv! Avcwb wKQy ej‡Qb bv?Ó
ÒAvm‡j Avcwb Kx ej‡Qb Avwg †Zv eyS‡ZB cviwQ bv| Zvn‡j Kx ej‡ev?Ó
Ò‡`Lyb fvwe, Avcbvi Avgvi, Avgv‡`i `yÕR‡bi †mŠfvM¨ †h, mviv †`‡ki gvbyl Avgiv `yÕR‡bi DciB Av¯’v ivL‡Q| evievi ivL‡Q| Avgv‡`i wK DwPr bv Zv‡`i Av¯’vi cÖwZ`vb †`qv?Ó
Ònu¨v, DwPr †Zv|Ó
ÒAvgv‡`i wK DwPr bv †`‡ki gvby‡li AvkvÑAvKvsLvi cÖZxK n‡q DVv?Ó
Ònu¨v, ZvB‡Zv DwPr|Ó
ÒAvcbvi wK g‡b Av‡Q  GKevi †mbvKz‡Ä AwZ mvgvb¨ wKQy mg‡qi Rb¨ GKÎ n‡qwQjvg Avgiv| ‡mw`b ILv‡b Avgv‡`i g‡a¨ nvB- n¨v‡jv ai‡bi K_v n‡qwQ‡jv gvÎ| Avi †mUv †`‡L †`‡ki gvbyl Kx Lywk n‡qwQ‡jv| w`‡bi ci w`b G wb‡q cÎ cwÎKvq KZ †jLv n‡jv| †Uwjwfkb¸‡jvi UK‡kv †Zv G NUbv wb‡qB gyLi wQ‡jv K‡qK w`b|Ó  
Ò‡`‡ki gvbyl wKš‘ Av‡iKwU Lei ï‡bI Lywk n‡qwQ‡jv Avcv|Ó ej‡jb Lv‡j`v wRqv|
Ò‡Kvb& Lei?Ó †kL nvwmbvi K‡Ú we®§q! Lv‡j`v wRqv ej‡jb,
Ò‡Kb! Avcbvi g‡b †mB dLi“wÏb miKvi Avgiv `yÕRb‡K †MÖdZvi K‡i hLb we‡kl KvivMv‡i wb‡¶c Ki‡jv, Avgiv wQjvg cvkvcvwk i“‡g| Avcwb kL K‡i ivbœv Ki‡Zb gv‡SÑg‡a¨| Avcwb Avcbvi wbR nv‡Z ivbœv Kiv Lvevi wUwdb Kvwiqv‡i K‡i Avgvi Rb¨ cvVv‡Zb| hvB e‡jb Avcv, Avcbvi nv‡Zi ivbœv wKš‘ AmvaviY! cÖksmv bv K‡i cviwQ bv|Ó
Ò_¨vsK q~¨ fvwe|Ó
cÖksmv ï‡b Lywk n‡jb †kL nvwmbv| Lv‡j`v wRqv ej‡jb,
ÒevB‡i G‡m GB NUbv hLb Avcwb wgwWqvi Kv‡Q cÖKvk Ki‡jb, Kx Lywk n‡jv gvbyl?Ó
†kL nvwmbv ej‡jb, ÒAvm‡j n‡q‡Q wK fvwe, Avcwb GKRb bvix, AvwgI bvix| Avcwb Avgvi m‡½ myÑm¤úK© ivL‡eb, Avwg mym¤úK© ivL‡ev Avcbvi m‡½| †evb †evb gZb Pj‡ev `yÕR‡b| wKš‘ mgm¨v †Zv n‡”Q Avgvi `‡ji †jvK| Zviv Pvq bv Avcbvi m‡½ Avgvi m¤úK© gayi †nvK|Ó
 Lv‡j`v wRqv ej‡jb, ÒGKB Ae¯’v‡Zv Avcv AvgviI n‡q‡Q| Avgvi `‡ji †bZvivI †Zv Pvq bv Avcbvi m‡½ Avgvi m¤úK© fvj †nvK|Ó
‡kL nvwmbv ej‡jb, ÒAvwg ZvB GKwU wm×vš— wb‡qwQ fvwe? Kv‡iv mv‡_ †Kv‡bv civgk© bv K‡iB| Avcwb ïay m¤§wZ Rvbv‡jB wWwmkb dvBbvj|Ó
Òe‡jb Avcv, Kx wm×vš—? Avwg mev©Z¥Kfv‡e Avcbvi mv‡_ AvwQ|Ó
ÒAvwg wm×vš— wb‡qwQ AvR †_‡K Avcbv‡K mv‡_ wb‡qB ïi“ n‡e Avgvi c_Pjv| Avwg me KvR Kivi Av‡M Avcbvi civgk© †b‡ev|Ó
Lv‡j`v wRqv ej‡jb, ÒAvwg ivwR n‡Z cvwi Z‡e GK k‡Z©?Ó 
ÒkZ©! Kx kZ©?Ó
ÒkZ© n‡”Q, AvMvgx‡Z †`‡ki gvbyl Avgv‡K †fvU w`‡j Avcbv‡KI wKš‘ _vK‡Z n‡e Avgvi mv‡_|Ó
‡kL nvwmbv ej‡jb, ÒAvwg ivwRÓ
ÒcÖgxR?Ó
Ònu¨v, cÖgxR|Ó
ÒZ‡e AvwQ Avwg Avcbvi mv‡_|Ó
†kL nvwmbv ej‡jb, ÒKvRUv Avwg ïi“ Ki‡Z PvB AvR †_‡K|Ó
Òejyb Avgv‡K Kx Ki‡Z n‡e?Ó
ÒAvcbv‡K wKQyB Ki‡Z n‡e bv| AvR ivZ 11 Uvq Avcwb ïay ˆZwi n‡q _vK‡eb| Avwg Avcbvi evmvq Avm‡ev| Avcwb Avcbvi †Mvjvcx kvwoUv ci‡eb| AB kvwo‡Z Avcbv‡K hv gvbvq bv?Ó 
Lv‡jv`v wRqv ej‡jb, ÒAvcwb Avgvi evmvq Avm‡eb, G ‡Zv Lywki K_v| wKš‘ †Mvjvcx kvwo c‡i evmvq †mu‡R ¸‡R ˆZwi n‡Z n‡e †Kb?Ó
ÒAv‡i fvwe, eyS‡jb bv? Avwg Avcbv‡K wb‡q GK Mvwo‡Z †ei n‡ev| `yÕR‡b wg‡j eo GKwU dy‡ji †Zvov wKb‡ev| Zvici ‡mvRv P‡j hv‡ev knx` wgbv‡i? Gev‡e Avgiv `yÕR‡b wg‡j GKmv‡_ GKwU dz‡ji †Zvov †`e| Zv‡Z K‡i GKwU dz‡ji †Zvov nq †Zv Kg co‡e| wKš‘ G‡Z K‡i †`‡ki gvbyl †Zv e‡UB, 30 jvL knx‡`i AvZ¥vI Lywk n‡q hv‡e e‡j Avgvi avibv|Ó
Avb‡›` cÖvq wPgrKvi K‡i DV‡jb †eMg Lv‡j`v wRqv| ej‡jb, ÒPgrKvi AvBwWqv! Avcv Avwg ivwR| Z‡e dz‡ji `vg wKš‘ Avwg ‡`e| wi‡Kv‡q÷|Ó
ÒAv”Qv wVK Av‡Q? `vg AvcwbB w`‡qb|Ó
Ò_¨vsK q~¨ Avcv|Ó
ÒZvn‡j K_v dvBbvj| ivZ 11 Uv?Ó
ÒwVK Av‡Q|Ó
Ò‰Zwi _vK‡eb wKš‘Ó
ÒAek¨B|Ó
ÒKvD‡K Av‡M †_‡K ejvi `iKvi †bB|Ó
ÒwVK Av‡Q|Ó
ÒAv”Qv, Zvn‡j ivLwQ GLb|Ó
ÒwVK Av‡Q Avcv|Ó
Ò‡Lv`v nv‡dR fvwe|Ó
Ò‡Lv`v nv‡dR Avcv| fvj _vK‡eb...

`iRvq cÖPÛ †Rv‡i av°vi kã ïbjvg| SUcU D‡V `iRv Ly‡j w`‡ZB `iRvq `uvov‡bv Avgvi eÜzwU ej‡jv, ÒKx †i! GB A‡ejvq, w`‡bi †ejvq Ny‡gvw”Qm? e¨vcvi Kx? kixi Uwii Lvivc bv †Zv?Ó
mw¤^r wd‡i †cjvg Avwg| GZ¶Y Nygvw”Qjvg! Zvn‡j GZ¶Y hv †`Ljvg, hv ïbjvg me ¯^cœ? w`ev ¯^cœ? evievi g‡b n‡jv NygwU fvO‡jv †Kb? GZ my›`i GKwU ¯^cœ bó n‡q †Mj! GB Nyg hw` Avi bv fvO‡Zv! GB ¯^cœ hw` ¯^cœ bv n‡Zv! 

wKš‘ Kx Ki‡ev! cÖK…wZi cwiKíbv‡K e`‡j †`qvi ¶gZv †Zv Avgvi †bB| Z‡e evi evi ïay g‡b n‡Z jvM‡jv, Bm! hw` Ggb n‡Zv!
                                                                                                

স্বাধীনতা মানেই মুক্তি নয়

         বছরখানেক আগে সিলেট প্রেসক্লাবকে ঘিরে একটি রিউমার প্রচারিত হয়েছিলো। “সিলেট প্রেসক্লাবে পাকিস্তান কর্ণার স্থাপন করা হবে।” অন্যদের কথা জানি না।খবরটি শুনে আমি ব্যক্তিগতভাবে খুব খুশি হয়েছিলাম। আমি মনে মনে ঠিক করে ফেলেছিলাম সিলেটে কর্ণারটি তৈরি হয়ে গেলে আমি জাতীয় পর্যায়ে প্রস্তাব করার চেষ্টা করবো বাংলাদেশের প্রতিটি প্রেসক্লাবে একটি করে পাকিস্তান কর্ণার তৈরি করার জন্য।


     নিউটনের তৃতীয় সূত্র অনুযায়ী ‘প্রত্যেক ক্রিয়ার সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে।’ প্রেসক্লাবে পাকিস্তান কর্ণার স্থাপিত হলে আমার দৃষ্টিতে মন্দ হতো না। আমরা এখানে নিউটন সাহেবের সূত্রের উপর আমল করার সুযোগ পেতাম।

      আমরা জানি হাজিগণ মিনায় গিয়ে শয়তানের উপর পাথর নিক্ষেপ করেন। শয়তান তো অদৃশ্য। দেখা যায় না। শয়তানের শারীরিক আকৃতি ও অবস্থান নেই। তাহলে শয়তানের উপর পাথর নিক্ষেপ করা হয় কিভাবে? 

     যারা হজ্ব করেছেন, তারা জানেন, ওখানে তিনটি খাম্বা তৈরি করে রাখা হয়েছে। ওগুলো প্রতিকী শয়তান। হাজিগণ ওগুলোতেই পাথর মারেন।

     আমরা একাত্তর পরবর্তী প্রজন্ম। আমরা বিজয় দেখিনি। সেই সঙ্গে আমরা পাকিস্তানি নরপশুদের পশুত্ব দেখিনি। ঐ সকল হায়েনাদের পাশবিকতাও দেখিনি। 
আমরা দেখিনি মানুষ কতটা পশু হলে পরে মায়ের পেটে থাকা বাচ্চাকে বেয়নেট দ্বারা খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বের করে উল্লাস করতে পারে! 

     আমরা তখন ছিলাম না বলে আমাদের দেখতে হয় নি বাবার সামনে তার নিষ্পাপ মেয়ের উপর পাশবিক অত্যাচারের সেই দৃশ্যগুলো। 

     আমাদের সৌভাগ্য যে, আমরা তখন ছিলাম না বলে আমরা দেখতে পাইনি পাকিস্তানি গাদ্দারেরা কতটা নীচ্ ও হিংস্র হতে পারে। 

     তবে যেটুকু শুনেছি, যতটুকু জেনেছি, তাতেই আমাদের মুখ ভর্তি হয়ে গেছে থুথুতে। আমরা আমাদের ঘৃণার এই থুথুগুলো জমিয়ে রাখছি। ফেলবার মত উপযুক্ত জায়গা খুঁজে পাচ্ছি না। সিলেট প্রেসক্লাবে পাকিস্তান কর্ণার হতে যাচ্ছে শুনে আশাবাদী হয়ে উঠেছিলাম আমরা।
সত্যিই যদি পাকিস্তান কর্ণারটি তৈরি হতো, তাহলে আমরা সকাল-বিকাল ওখানে গিয়ে থুথু ফেলে আসতে পারতাম। মনটা হালকা হতো। যারা প্রতিবাদ করে এটি রুখে দিয়েছেন, কাজটা তারা ভাল করেন নি। 
দুই 
   ডিসেম্বর বিজয়ের মাস।
   ১৬ই ডিসেম্বর ২০১০ আমাদের ৩৯তম বিজয় দিবস। এর আগে আমরা ৩৮টি বিজয় উদযাপন করেছি। কিন্তু বিজয়ের প্রকৃত উদ্দেশ্য, স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থ খুঁজে বের করার পথে পা বাড়াইনি। 
এই ৩৮ বছরে সম্ভবত একটি দিনও আমরা ভেবে দেখার ফুরসত পাইনি স্বাধীনতার মূল চেতনা এবং প্রকৃত উদ্দেশ্যটি কী ছিল? 
   এই ৩৮ বছর পাকিস্তান ক্রিকেট টিমকে আমরা হাততালি দিয়ে সমর্থন দিয়েছি। একবারও আমাদের মনে হয়নি এই ক্রিকেটাররা তো তাদেরই উত্তরসূরী, যারা একাত্তুরে আমার ভাইকে হত্যা করেছিলো, লাঞ্ছিত করেছিলো আমার বোনকে।

     উল্টো আমরা অনেকেই যুক্তি খাড়া করে বলেছি, রাজনীতি আর খেলাধুলাকে এক করে ফেলা উচিৎ নয়। পাকিস্তান একটি মুসলিম দেশ। আর মুসলিম ভাই হিসেবে আমরা পাকিস্তানকে সমর্থন করছি। একবারও আমাদের মনে হয়নি পাকিস্তান ক্রিকেট দল ইসলাম প্রচারের কাজে আসলে মুসলিম হিসেবে তাদেরকে সাপোর্ট করার না হয় যুক্তি থাকতো। খেলাধুলা তো ইসলামের কাজ নয়। 

     রাজনীতি ও খেলার মাঠকে আলাদা রাখার পেছনেও আমরা যুক্তি দিই। অথচ বিস্ময়করভাবে আমরা ভুলে যাই ২০০০ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমকে টেষ্টের মর্যাদা দেয়া যায় কি না, সেটা নিয়ে যখন টেষ্ট প্লেইং ৯টি দেশের অধিনায়কদের সভা হচ্ছিলো, সেখানে কিন্তু পাকিস্তান আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি।

     ভারত, শ্রীলংকা, জিম্বাবুয়ে ওয়েষ্টইন্ডিজ আমাদেরকে টেষ্ট স্ট্যাটাস দেয়ার পক্ষে মতামত দিয়েছিলো। বিপক্ষে ছিল অষ্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ড। সাউথ আফ্রিকা ছিল নিরব। 

     পাকিস্তানকে জিজ্ঞেস করার পর সেদেশের অধিনায়ক ইনজামাম-উল-হক তার স্বভাবসূলভ ভঙ্গিমায় বা’'হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলীর নখ কামড়াতে কামড়াতে বলছিলেন, “এ ব্যাপারে আমার কোনো মতামত নেই। বাংলাদেশকে টেষ্টের মর্যাদা দেয়া হলে কতটুকু কী হবে আমি বুঝতে পারছি না। 
অথচ ভারতের অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী আমাদের হয়ে কোমর বেঁধে তর্ক করেছেন সেদিন। তাহলে খেলাধুলার ক্ষেত্রেও পাকিস্তানকে সমর্থন আমরা কোন্ যুক্তিতে করি?
তিন 
     ৩৮ বছর পেরিয়ে গেছে আমরা স্বাধীনতা এনেছি। কিন্তু এখনো যে প্রশ্নটি সচেতন দেশপ্রেমিক বাংলাদেশিকে তাড়িয়ে বেড়ায়, তা হচ্ছে, 
যে স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি, তেমন স্বাধীনতা কি আমরা চেয়েছিলাম? আর যে স্বাধীনতা চেয়েছিলাম তেমন স্বাধীনতা কী আমরা পেয়েছি? 
     একটি পতাকা এবং স্বতন্ত্র ভূ-খণ্ডের মাঝেই যদি আমরা স্বাধীনতার স্বাদ পেয়ে যাই, তৃপ্তি পেয়ে যাই, তাহলে অবশ্য ভিন্ন কথা। কিন্তু শুধু আলাদা ভূ-খন্ড ও পতাকার নামই কি স্বাধীনতা? 

    স্বাধীনতা মানে তো অধিকার নিয়ে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকা। আমরা কি সেটা পারছি? 

    স্বাধীনতা মানে তো নতজানু নীতি থেকে বেরিয়ে আসা। আমরা কী পেরেছি? 

    তাহলে এত ভারত তোষণ কেন?

     স্বাধীনতা মানে তো স্বয়ংসম্পূর্ণতা। আমরা কী হতে পেরেছি? তাহলে বারবার কেন আমাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানের জন্য নির্লজ্জের মত হাত বাড়াচ্ছি বিদেশিদের দিকে। 

    বিজয় মানে তো পরাজয় এর গ্লানি গা থেকে ঝেড়ে ফেলা। আমরা কি সেটা করতে পেরেছি? তবে কেন সন্ত্রাস ও দুর্নীতির কাছে অসহায় আত্ম সমর্পন! 

    বিজয় মানে তো বীরত্বের গৌরব গাঁথা। তাহলে বারবার কেন আমরা কাপুরুষের মত বিদেশিদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও কটুকথা হজম করে যাচ্ছি। 
কে দেবে জবাব?

কার কাছে চাইবো আমরা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর? 

     আওয়ামীলীগের কাছে? 

     বিএনপি’র কাছে? 

     সামরিক সরকারের শাসনামল ছাড়া বাংলাদেশের পুরোটা সময়তো পালাক্রমে এই দুটি দলই শাসন করলো। কী দিয়েছে তারা আমাদের? কী করেছে তারা আমাদের জন্য? বিদেশে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে তাদের কোনো অবদান আছে কী? দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন বানানো ছাড়া আন্তর্জাতিক অঙ্গণে আমাদের জন্য তারা আর কী করেছেন? 

     তারা এক পক্ষ অন্য পক্ষকে ঘায়েল করার প্লান-প্রোগ্রামে যে সময় ব্যয় করেন, সেই সময়টুকুই যদি দেশের জন্য দিতেন, নিঃসার্থ হয়ে, তাহলে বাংলাদেশকে কি অনেক উপরে উঠে যেত না? পরিবারতন্ত্রের গ্যাড়াকল থেকে কবে বেরুবে আমাদের গণতন্ত্র? দল-নিরপেক্ষ একজন সচেতন নাগরিক তো প্রশ্ন করতেই পারে বাংলাদেশ তুমি কার?

     আওয়ামীলীগের? 

     বিএনপি’র?

   অথবা আরেকটু সাহস করে বলতে পারে বাংলাদেশ তুমি কার?

     খালেদা জিয়ার? 

    নাকি শেখ হাসিনার?
চার 
    ১৬ই ডিসেম্বর আমাদের বিজয় দিবস। আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি ৩৯ বছর আগে। মুক্তি পাইনি আজও! মুক্তি পাইনি দারীদ্র্য থেকে! মুক্তি পাইনি সামাজিক বৈষম্য থেকে! মুক্তি পাইনি সন্ত্রাস ও দুর্নীতি থেকে! আমরা ভুলে যাই স্বাধীনতা মানেই মুক্তি নয়।

     আসুন আমরা বিজয়ের স্বাদ পেতে চেষ্টা করি। স্বাধীনতার প্রকৃত উদ্দেশ্য খুঁজে বের করতে সচেষ্ট হই। ৩০ লক্ষ লোক জীবন দিয়ে এই দেশটি স্বাধীন করে এ জন্য দিয়ে যায়নি যে, আমরা যা ইচ্ছা তাই করবো। যেমন খুশি, তেমন চলবো। 

    তারা তো চেয়েছিলো তাদের বাংলাদেশের মানুষগুলো মাথা উচু করে বাঁচবে। নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করবে। সর্বোপরি নিঃশর্তভাবে দেশকে ভালবাসবে। 
শুধুই বাংলাদেশকে।

     আমরা যদি সেটা করতে না পারি, তাহলে স্বাধীনতা আর পরাধীনতার মাঝে ব্যবধান থাকলো কই?

সোমবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১০

মরণোত্তর তোষা শিরণি

১৬ই ডিসেম্বর আসছে। প্রতি বছরই একবার করে আসে। আমাদের জানিয়ে দিতে যে, আমরা কতো বড় অকৃতজ্ঞ! আমরা সেটা গায়ে মাখি না। লজ্জা আমাদের থেকে কতো আলোক বর্ষ দূরে চলে গেছে- কে জানে!


আমরা পুরুষরা লজ্জা পাইনা কারণ, লজ্জা নারীর ভূষন!
নারীরা পাইনা কারণ পুরুষের সমান অধিকারের যুগ! আর এভাবেই নির্লজ্জতা, নিমকহারামী,অকৃ্তজ্ঞতা ও বেঈমানিকে নিত্য সঙ্গি করেই আমাদের অদ্ভূত জীবন চলা!!


আজব এক দেশে বাস করি আমরা। এক দেশে ছিলো এক রাজা...টাইপ দেশগুলোতেও মনে হয় এই অবস্থা নেই! রাজাকারকে রাষ্ট্রপতি বানাই! স্বাধীনতা বিরধীদের গাড়িতে পতাকা টানিয়ে দেই! মুক্তিযোদ্ধাদের দিকে ফিরেও তাকাই না। যদি তাকাই-ও, তার শরীরে দেশদ্রোহিতার গন্ধ পাই। তাকে ফাসি'র সু সংবাদ (!) পর্যন্ত শোনাতে দ্বিধা করি না । মেজর জলিলরা ,মুক্তিযোদ্ধারা এভাবেই যুগে যুগে আমাদের দ্বারা পুরোস্কৃত হয়ে থাকে!!!




আমরা ছিলাম পাকিস্তান নামক একটি দেশের খাদ্য। ২৪টি বছর অরা আমাদের ঘাড়ে চেপে রয়েছে ।লেবু চিপে রস বের করার মতো বের করে নিয়েছে আমাদের শরীরের যত রক্ত। স্বাধীনভাবে নিঃশ্বাসতুকু পর্যন্ত নিতে দেয় নি আমাদের! অনেকটা মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটপট করছিলো তখন সাড়ে সাত কোটি বাঙালি।


এই অবস্থায় রুখে দাঁড়ানো হয়ে পড়েছিলো অনিবার্য। রুখে দাঁড়ালো সোয়া সাত কোটি মানুষ।


( নিরব ও রাজাকারের আনুমানিক সংখ্যা বাদ দেয়া হলো) 


২৬শে মার্চ ১৯৭১ থেকে নিয়ে ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ পর্যন্ত দীর্ঘ ৮ মাস ২২ দিনে ৩০ লক্ষ জীবন এবং ২ লক্ষ সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা পেলাম সতন্ত্র একটি পতাকা,লাল-সবুজ।


অথচ; যাদের জন্য আজ আমরা মুক্তভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারছি, তাঁরা কিন্তু ভোগছে শ্বাস কষ্টে! ফিরে তাকাবার সময় নেই আমাদের! পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা পা হারিয়ে ঘরে বসে আছে আজ ৩৯ বছর হলো।থাকুক, আমাদের কী! আমরা আমাদের পায়ে সামান্য ব্যাথা হলে ছুটে যাচ্ছি মাউন্ট এলিজাবেত কিংবা কিং ফাহাদে।


বোমার বিকট শব্দে শ্রবণ ক্ষমতা হারিয়ে মানুষটি বেঁচে আছে ৩৯ বছর ধরে, মরার মতো। আমাদের কী! আমরা তো আমাদের কানের চিকিৎসায় ছুটে যেতে পারছি আমেরিকায়!
আমাদের হলোটা কী!!


আবার ফিরে এসেছে ডিসেম্বর। কদর বেড়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের। ১৬ই ডিসেম্বর আসবে। 
কিছু ফুল দেয়া হবে
কিছু পদক বিতরণ হবে
কিছু আলোচনা সভা হবে
কিছু সাংস্কৃতিক অনুষ্টান হবে
স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে কিছু বিতর্ক হবে
এই তো!!


জীবিত থাকতে খোঁজ-খবর নেয়ার দরকার মনে না করলেও কিছু মুক্তিযোদ্ধার বিধবা স্ত্রী বা এতিম ছেলের ধরে এনে তাদের হাতে তুলে দেয়া হবে একটি তোষা শিরিণি'র প্যাকেট। যার কেতাবী নাম-মরণোত্তর।



আমার যদি ক্ষমতা থাকতো, তাহলে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের জিজ্ঞেস করতাম,-


জীবিত থাকতে আমরা তোমাদের খোঁজ নিই নি! খুব যখন বাঁচতে চাইছিলে, আমরা এগিয়ে আসি নি! আর আজ,তুমি যখন নেই, আমরা তোমাকে মরণোত্তর পদক দিচ্ছি!
তুমি কি খুব খুশি হয়েছো???

বুধবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১০

খাল কেটে হাঙর নিয়ে আসা !!!

বিষয়টি নিয়ে ইতোপূর্বে অনেক লিখেছি আমি। এক দেশ থেকে দ্বিতীয় দেশের ভেতর দিয়ে তৃতীয় দেশে গিয়ে বের হলে সেটা ট্রানজিট। আর দ্বিতীয় দেশ ঘুরে আবার নিজ দেশে এসে যুক্ত হলে সেটার নাম হয় করিডোর।

ভারত থেকে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ঢুকে আবার ভারতেরই অন্য অঞ্চল দিয়ে বের হবার যে পায়তারা করছে ভারত, যে কোনো সংজ্ঞায়ই এটা করিডোর। 

আমাদের একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবিরা এটাকে ট্রানজিট বলছেন কোন যুক্তিতে, আল্লাই জানে !! আমাদের অবশ্য বুঝার কথাও না। আমরাতো আর বুদ্ধিজীবি না। আমাদের কাছে তো এটাকে খাল কেটে হাঙর নিয়ে আসাই মনে হচ্ছে।

বাতাসে ভেসে বেড়ানো সূত্রে জানা গেছে ইতোমধ্যে ভারতের সাথে নাকি ট্রানজিট চুক্তি সই করা হয়েও গেছে! হয়ে গিয়ে থাকলে বলতে হবে কাজটা ভালো হয়নি! এতবড় গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যুটি সংসদে ব্যাপকভাবে আলোচনা করেই কেনো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে না? গালি-গালাজের ফাঁকে ফাঁকে এই কাজগুলোও তো করা যায়!

ভারতের জন্য ট্রানজিট বা করিডোর দরকার তাদের দেশের স্বাধীনতাকামী(তাদের ভাষায় বিচ্ছিন্নতাবাদী)সেভেন সিস্টারসকে সাইজ করবার জন্যে ! 
১৯৭১ এ এই অঞ্চলের মানুষগুলোই আমাদেরকে সাহায্য করেছিলো সবচে বেশি। নিজেদের প্লেটের ভাত শেয়ার করেছিলো আমাদের সাথে। আজ তারা যখন তাদের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে, তখন আমাদের কাছে সাহায্যও চাইছে না, বলছে তাদের প্রতিপক্ষ হয়ে যেনো না দাড়াই।

আমরা কতো বড় অকৃতজ্ঞ, সেই কাজটুকু পর্যন্ত আমরা করতে চাইছি না ! নিকট ভবিষ্যতে এটা যে আমাদের জন্য আত্মঘাতি হতে পারে, কেউ কি সেটা ভেবে দেখেছেন?

মাঝেমধ্যে শোনা যায় উলফা নেতাদেরকে ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। এমনকি আমার দেশের ভেতর থেকে ভারতীয় সেনারা এসে ধরে নিয়ে যাবার সংবাদও আমরা পত্র-পত্রিকা মাধ্যমে জেনেছি।
কেনো?
আসাম-ত্রিপুরা-সেভেন সিস্টারস, এটা সমস্যা হয়ে থাকলে ভারতের আভ্যন্তরীণ সমস্যা। আমরা জড়াবো কেনো? দুশমনের কি এতই অভাব পড়ে গেছে আমাদের ? 
সেধে দুশমন বাড়ানোর কি খুব বেশি দরকার?

আজকের আমাদের সময়'র নিউজের সূত্র ধরেই বলছি।
আমাদের মুহতারামা পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন,ভারত-বাংলাদেশ ট্রানজিট চুক্তি বেদ বাক্য নয় যে, পরিবর্তন করা যাবে না। এর মানে দেশবাসীকে মোটামুটি অন্ধকারে রেখেই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়ে গেছে ! 
অতঃপর আমাদের কপালে কী আছে- কে বলতে পারে!!

 আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারত বাংলাদেশকে সাহায্য করেছে, সত্য কথা। সেখানে বাংলাদেশের যেমন স্বার্থ ছিল, ভারতেরও ছিল । যে নিয়তই করুক, ভারত আমাদের সাহায্য করেছে, এটাই সত্যি। 
আবার ভারত সাহায্য করেছে তার নিজের স্বার্থে-এটাও ঠিক। অনেকগুলো স্বার্থের মধ্য একটি হতে পারে এই যে, পাকিস্তান ছিলো তাদের দুশমন। আর (পশ্চিম) পাকিস্তান তখন আমাদেরও দুশমন অন্য কথায় আমরা পাকিস্তানের দুশমন। আর দুশমনের দুশমন বন্ধুই হয়ে থাকে। 

বাংলাদেশের স্বাধীনতা আমরাও চাচ্ছিলাম, ভারতও চাচ্ছিলো। তবে উদ্দেশ্য ছিলো ভিন্ন। আমরা স্বাধীনতা চাচ্ছিলাম হায়েনাদের কবল থেকে মুক্তির জন্য। অধিকার নিয়ে বাঁচবার জন্য। আর ভারত চাইছিলো পাকিস্তান খন্ড হয়ে যাক।

৭১ এ সাহায্য করেছে বলে ভারতকে যথাসাধ্য সাহায্য আমাদের নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে; তাই বলে বাংলাদেশের বুকে পুকুর খনন করে ভারতকে সাহায্য ???  

আমাদের কথা হচ্ছে, সবকিছুর উপরে দেশের স্বার্থ রাখতে হবে। দেশটাতো আমাদের সকলের। এ দেশকে তো আমরা আর আওয়ামীলীগ-বিএনপি'র কাছে লিজ দিয়ে দিই নি!!!

শুক্রবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১০

বঙ্গবীর! পারলে ক্ষমা করে দিও

         রহস্যজনক কোনো কারণেই হবে হয়তো, আমাদের জাতীয় জীবনে ওসমানী একটি আপাঙ্ক্তেয় নাম। অন্য দশজন পাঁচজন মুক্তিযোদ্ধদের নামের সাথেই পাইকারীভাবে উচ্চারিত হয় মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর জেনারেল আতাউল গণি ওসমানীর নামটি। আর হবে না-ই বা কেন! বঙ্গবীরকে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক স্বীকার করতেই তো অনেকের আপত্তি। আজব এক দেশে বাস করি আমরা। রাজাকার হিসেবে অভিযোগ আছে, এমন লোককেও আমরা দেশের রাষ্ট্রপতির আসনে বসিয়ে দেই। চিহ্নিত রাজাকারদের সংসদে পাঠাই। এমনকি ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের দাগ লেগে থাকা পতাকাঅলা গাড়ির পর্যন্ত মালিক বানিয়ে দেই অনেক রাজাকারকে। অথচ যে লোকটি বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে সাড়ে সাত কোটি বাঙালির প্রত্যাশার প্রদীপটি জ্বালিয়ে সদর্পে চষে বেড়ালেন জুলুমের অন্ধকারে, সেই মানুষটির নাম আমরা মুছে ফেলি ইতিহাস থেকে! আবার আমরা চেষ্টা করছি ইতিহাস বিকৃতির ধারাকে রুখে দাঁড়াতে! আশ্চর্য! 

    মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস জুড়ে ওসমানী ছিলেন মাঠে। যুদ্ধ থেকে জীবন নিয়ে ফিরতে পারারচে'’ না পারাই ছিলো সেখানে সহজ। তিনি ফিরলেন। অন্ধকার জয় করেই ফিরলেন। আলোর মিছিলে আহবান জানালেন বাঙালি জাতিকে। সবাই এসে জড়ো হলো। মুক্তিপাগল মানুষ পতঙ্গপালের মতো এসে জড়ো হতে থাকলো রেসকোর্স ময়দানে। সবাই ইতিহাসের অংশ হতে চায়। স্বাধীন বাংলায় প্রথম শ্বাসটি তারা নিতে চায় আমাদের সূর্য সন্তানদের হাতে হাত রেখে। পারলে কিছু থু থুও নিক্ষেপ করতে চায় পাকিস্তানি অই পিশাচগুলোর মুখে। 
     ২৪ বছর জ্বালাতন করেছে অই পশুগুলো। তাদের বিষাক্ত ছুবলে বিক্ষত হয়েছে আমার সবুজ চত্তর। সবুজ শ্যামল প্রান্তরকে ওরা ভাসিয়ে দিয়েছে লালের বন্যায়। ২৬শে মার্চ ১৯৭১ থেকে নিয়ে ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১, এই ৮ মাস ২২ দিনে আমাদের উপর বসিয়েছে অরা মরণ কামড়। পিঠ যখন দেয়ালে ঠেকে গেছে, তখন পাল্টা আঘাত হেনেছে বাঙালি জাতি। বিষদাঁত ভেঙে দিয়েছে তাদের। ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ লেজ সোজা করে দাঁড়িয়েছে অই পশ্চিম পাকিস্তানি কুকুরগুলো। গত ৯ মাস ওরা পাগল হয়ে গিয়েছিলো। কুত্তা যব্ পাগল হো যায়ে, তো উস্কো গুলি মারদেনি চাহিয়ে। বাঙালি জাতি উদারমনা। পাগলা কুকুরগুলোকে গুলি না করে ফিরে যাবার সুযোগ দিলো। ঢাকার রেসকোর্স ময়দান ভরে উঠলো কানায়-কানায়। পশ্চিম পাকিস্তানি মিলেটারীরা আজ নাকে খত্ দেবে। আত্মসমর্পনের দলিলে স্বাক্ষর করে লেজ গুটিয়ে ফিরে যাবে যেখান থেকে এসেছিলো। লক্ষ বাঙালির পদভারে মুখরিত রেসকোর্স ময়দান। মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে বঙ্গবীর ওসমানী কখন আসবেন! স্বাধীন বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে যুদ্ধের হাল ধরেছেন বঙ্গবীর ওসমানী। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের মূল বেদিত যে কেবল তাকেই মানায়। 



দুই. 

         স্বাধীন বাংলার প্রথম সূর্যটা আমাদের গ্রাস করে নিল দুরভিসন্ধির কালো মেঘ। ঝকঝকে দিবসের দুপুরটাকে মনে হতে লাগলো অস্বস্থিকর ভূতুড়ে রজনী। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারত ছিলো আমাদের প্রধান সহযোগী শক্তি। তাদের সহায়তার কথা আমরা কোনোদিনই ভুলবো না। বাঙালি অকৃতজ্ঞ জাতি নয়। যদিও দুষ্টু লোকেরা বলাবলি করেন, ভারত আমাদেরকে সাহায্য করেছিলো তার নিজের স্বার্থে। পাকিস্তান ছিলো তার দুশমন। আর দুশমনের দুশমন তো বন্ধুই হয়। সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সহযোদ্ধা হিসেবে অংশগ্রহণ করেছে ভারত, এটাই বড় কথা। আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। 
     তবে কৃতজ্ঞতার মানে তো নিজেদের সত্তাকে বিক্রি করে দেয়া নয়। যুদ্ধের সাধারণ নিয়ম হলো পরাজিত গোষ্ঠি আত্মসমর্পণ করবে বিজয়ী কমান্ডার বা বিজয়ী দেশের নেতার কাছে। সেই অর্থে, অতি স্বাভাবিক কারণেই ১৬ই ডিসেম্বর রেসকোর্স ময়দানের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের মধ্যমনি হবার কথা আমাদের ওসমানীকে। অথচ সুদূর পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ওসমানীকে বাইরে রাখা হলো। নিরাপত্তাজনিত ঠুনকো অজুহাত দেখিয়ে অনুষ্ঠানে হাজিরই হতে দেয়া হলো না মানুষটিকে। আমার লক্ষ ভাইকে অমানবিক নির্যাতন করে হত্যা করার পরও, আমার মা বোনদের লাঞ্চিত করার পরও, যেখানে পশ্চিম পাকিস্তানিরা নিরাপদ, সেখানে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়কের নিরাপত্তার অভাব? বাঙালি জাতি এর'চে জঘন্য গাঁজাখুরি যুক্তি এর আগে আর শুনে নি! 
     পরিকল্পনা অনুযায়ী হানাদার বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল নিয়াজী আত্মসমর্পণ করলেন মিত্রবাহিনীর প্রধান জেনারেল আরোরার কাছে। পরনির্ভরতা বা নিজের মাথার উপর অন্যের ছড়ি ঘুরানোর সুযোগ করে দেয়ার নতজানু একটি অধ্যায়ের মধ্যদিয়েই শুরু হলো স্বাধীন বাংলাদেশের যাত্রা। অবজ্ঞা করা হল ওসমানীকে। অপমান করা হল বাঙালি জাতিকে। বাঙালি সত্তাকে। আর সেই অপমানের নিরব সাক্ষী হয়ে থাকলো ঢাকার রেসকোর্স ময়দান। 



তিন. 

     এই ফাঁকে বলে রাখি, আমি ভারত বিদ্বেষী বা ভারত বিরোধী নই, তবে বাংলাদেশের পক্ষে। আমি আমার দেশের কথা বলবো। দেশের স্বার্থ দেখবো সবকিছুর উর্ধ্বে তুলে। আর এ কাজ করতে যেয়ে ভারত যদি সামনে পড়ে, ছেড়ে কথা বলবো কেন? আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারত আমাদের সাহায্য করেছে। আমরা তাদের প্রতি বারবার কৃতজ্ঞতা জানাই। তবে ইতিহাসের শরীর কালো পর্দা দিয়ে ঢেকে না দিলে স্বীকার তো করতেই হবে দাদারা কিন্তু বিনিময়ও একেবারে কম নেয় নি। যুদ্ধ বিধ্ব্যস্থ একটি দেশ যখন মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াতে চেয়েছে, ছিন্ন ভিন্ন টুকরোগুলো জড়ো করে ঘরটি আবার দাঁড় করানোর কথা ভাবছে, তখনই আমার দেশের ধ্বংসের আলামত যে সম্পদগুলো পড়েছিলো ছড়িয়ে, অন্ধের যষ্টি বা যক্ষের ধনের মত যেগুলোকে বুকে আগলে নিয়ে দেশটি পূণ:গঠন করার কথা, ভারতের শকুন দৃষ্টি পড়লো তখন। 

     আমরা জানি, ইসলামী রাষ্ট্র হলে যুদ্ধে পরাজিত দেশের সম্পদকে বলা হয় গণিমতের মাল। আমাদের ক্ষেত্রে ঘটলো বিপরীত। যুদ্ধে জয়ী হলাম আমরা। তবুও যেন আমাদের মাল হয়েগেল গণিমতের মাল! ট্রাক বোঝাই হয়ে হয়ে আমার দেশের সম্পদ চলে যেতে লাগলো অপারে। অতি কৃতজ্ঞ নেতারা আমাদের চুপ করে থাকলেন। কিছুই বললেন না। বাঁধা দিলেন না। বললেন না, এটা অন্যায়। তোমরা এটা করতে পারো না। প্রতিবাদের ঝান্ডা নিয়ে সামনে দাঁড়ালেন মেজর জলিল। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার মেজর এম এ জলিল। রুখে দাঁড়ালেন তিনি। ভারতীয় অই লুঠতরাজের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন সিংহের হুংকারে। আমরা চূড়ান্ত নিমকহারামীটা করলাম তখন। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা ঠুকে দেয়া হলো জলিলের বিরুদ্ধে। এমনকি বিচারে মৃত্যদন্ড পর্যন্ত দেয়া হলো জলিলকে। যে দেশটির জন্ম দেয়ার জন্য জীবন হাতে নিয়ে যুদ্ধ করলেন জলিল, যুদ্ধ করালেন তার অধীনস্থ যোদ্ধাদের, সেই দেশেই তাকে সাব্যস্থ করা হলো দেশদ্রোহী হিসেবে!
      নিমকহারামী আর কাকে বলে? 
     আমরা যারা একাত্তর পরবর্তী প্রজন্ম, আমরা যারা বিজয় দেখিনি, ২০১০ সালের নিঝুম কোনো দুপুরে বসে আমরা যখন অতীতের পৃষ্ঠা উল্টাই, ৩৮ বছরের খাতা খুলে বসি, তখন বড়বেশি অস্বস্থির সাথে ভাবি ... এ কোন্ দেশে বাস করছি আমরা? মুক্তিযুদ্ধের একজন সেক্টর কমান্ডার হবার পরও শুধু ভারতীয় অধিপত্যবাদ ও লুঠতরাজের প্রতিবাদ করায় মৃত্যুদন্ড দেয়া হয় মেজর জলিলকে? অন্যদিকে রাজাকারদের দেয়া হয় মন্ত্রিত্ব!
      এ লজ্জা আমরা কোথায় রাখবো? 



চার. 

      কেউ যদি আমাকে প্রশ্ন করে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্ব দেয়া নেতাদের মধ্যে সব’চে অবহেলিত নাম কোনটি?
বঙ্গবীর জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী, নির্ধিদ্বায় জবাব দেব আমি। যদি জিজ্ঞেস করা হয়, ওসমানীকে সব’চে বেশি অবমূল্যায়ন করেছে কারা? আমি বলবো, ওসমানীর জন্মভূমি সিলেটের মানুষ। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুকে নিমর্মভাবে হত্যা করার পর মেজর জিয়াউর রহমানকে মেরে ফেলার পর অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন বঙ্গবীর ওসমানী। দাঁড়িয়েছিলেন মানে জোর করে দাঁড় করানো হয়েছিলো তাঁকে। কিন্তু দেশবাসী তাকে ভোট দেয়নি। কষ্টের ব্যাপার হল আমরা সিলেটবাসীও ওসমানীকে ভোট দেইনি। সিলেটবাসীকে এ লজ্জা যুগের পর যুগ ধরে ধাওয়া করে যাবে। 

     বাংলাদেশের রাজনীতিকে যারা প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখতেন বা রাখেন, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যাদের অবস্থান বেশ শক্ত ছিল কিংবা এখন আছে, আমরা লক্ষ্য করেছি সমসময়ই তাদের উল্লেখযোগ্য অংশ সিলেটরই। প্রয়াত স্পীকার হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী, মরহুম আব্দুস সামাদ আজাদ, মরহুম এম. সাইফুর রহমান, শাহ এ এম এস কিবরিয়া, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, অর্থমন্ত্রী এ এম এ মুহিত, সংসদের চিপ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস সহিদ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদ, সাবেক মন্ত্রী এবাদুর রহমান চৌধুরী, প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী এবং আরো অনেকে। অন্যদের কথা বাদই দিলাম। সিলেটের এই নেতারাইতো ওসমানীকে প্রাপ্য সম্মানটুকু দিতে রাজি ছিলেন না বা এখনো নন। কেন? কেন এই ওসমানী বিদ্বেষ? অথবা অবহেলা? পেশী বহুল রাজনৈতিক দলগঠন করতে পারেন নি তিনি। এটাইকি কারণ? আমাদের জাতীয় সংসদে, সবসরকারের আমলেই, জাতীয় প্রয়াত নেতাদের নিয়ে মাতামাতি হয়। অবশ্য মাত্রাতিরিক্ত মাতামাতি কখনো কখনো হাতাহাতি পর্যায়েও চলে যায়, সেটা ভিন্ন কথা।

     আমরা অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে লক্ষ্য করে থাকি কখনো ওসমানীকে তার প্রাপ্য মর্যাদা ও সম্মানটুকু জানানো হয় না।
     কেন? 
     কেন এই অকৃতজ্ঞতা?
     নিমকহারামী? 
     আমাদের জাতীয় সংসদে কালে ভাদ্রে এবং ভুলক্রমে কেউ মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক হিসেবে ওসমানীর নাম নিলে আওয়ামীলীগ প্রতিবাদমুখর হয়। বিএনপি চুপ থাকে। কেন এমন হয়? ওসমানীর জীবনে অপরাধ তো একটাই ছিলো, বাকশাল সমর্থন করেন নি। বাকশাল সরকারে যোগ দেন নি। ক্ষোভের কারণ কি এটাই নয়? আসামীর কাঠগড়ায় আমি সিলেটবাসীকেও দাঁড় করাতে চাই। নিজেও দাঁড়াতে চাই। জিজ্ঞেস করতে চাই সিলেটবাসীকে, ওসমানীর বালাগঞ্জকে, বালাগঞ্জের মানুষকে, নিজেকে, কী করেছি আমরা তাঁর জন্য? আমরা কি আমাদের এই মহান নেতাকে মূল্যায়ন করতে পেরেছি যথাযথভাবে? আমাদের মন এত ছোট কেন? এত সংকীর্নতা কেন আমাদের? 



পাঁচ. 

      আমরা সিলেটবাসীর সৌভাগ্য যে, ওসমানীর মতো একজন ক্ষনজন্মা মানুষকে আমরা জন্ম দিতে পেরেছিলাম। আর আমাদের দুর্ভাগ্য হলো, ওসমানীকে আমরা যোগ্যস্থানে স্থাপন করতে পারলাম না। না জীবিত ওসমানীকে, না মৃত ওসমানীকে। তামাম বিশ্বের মানুষ জানে বাঙালি জাতি একটু অন্যরকম। জুলুম নির্যাতন মুখ বুঝে সহ্য করে নেয়। কিন্তু যখন দেয়ালে তাদের পিঠ ঠেকে যায়, যখন রুখে দাঁড়ায় জুলুমের বিরুদ্ধে, দাঁড়িয়ে যার অধিকারের দাবিতে, তখন আর সাফল্য না নিয়ে ঘরে ফিরে যায় না। বাহান্ন, উনশত্তর ও একাত্তর তার প্রমাণ। বিশ্বের মানুষ দেখেছে, ১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাস ধরে কত অদম্য সাহসিকতায় যুদ্ধ করেছে বাঙালি। তবে বিশ্ববাসী জানে আমাদের এই মুক্তিযুদ্ধের প্রধান কারিগরের নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। ঘোষক হিসেবে জানে জেনারেল জিয়ার নাম। 

    (এর আগেও আমি একাধিক লেখায় উল্লেখ করেছি জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এটা ঐতিহাসিক সত্য। তবে সেটিই প্রথম ঘোষণা ছিল কিনা, বির্তক সেটা নিয়ে। এ ব্যাপারে মহামান্য হাইকোর্ট থেকে একটি রায়ও দেয়া হয়েছে। উচ্চ আদালতের রায়ের প্রতি আমরা বরাবরই শ্রদ্ধাশীল। উচ্চ আদালত বলেছেন, বঙ্গবন্ধুই স্বাধীনতার ঘোষক। আর জেনারেল জিয়া ও তার পঠিত ঘোষণায় বলেছেন আমি বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা করছি। জেনারেল জিয়ার সেদিনের ভাষা ছিল এ রকম- I Major Ziaur Rahman at the direction of Bango Bondhu Sheikh Mujibur Rahman hereby declare that the independent peoples Republic of Bangladesh ..... তাহলে সমস্যা কোথায়? বঙ্গবন্ধু এবং জিয়াকে যার যার অবস্থানে রেখে মূল্যায়ন করলে তো বিতর্কেরই সুযোগ থাকে না।) 

     যে কথা বলছিলাম। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কথা উচ্চারিত হলে বিশ্ববাসী বঙ্গবন্ধু এবং জিয়ার কথাই জানে। সেখানে ওসমানীর নাম আসে না! বিশ্বের মানুষ জানে না আমাদের মুক্তিযুদ্ধে মাঠপর্যায়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জেনারেল ওসমানী। আমরা সেটা জানতে দেইনি। মুখে আমরা ইতিহাস বিকৃতির কথা বলি। প্রতি পাঁচ বছর পর পর নতুন করে ইতিহাস লেখা হয়। ইতিহাসের পরিবর্তনও হয় ক্ষমতার পালাবদলের সাথে সাথে। নতুন প্রজন্ম বিভ্রান্ত হয়। আমরা বিভ্রান্ত হই। কোন্টি সত্য আর কোন্টি বিকৃতি, আমরা ভেবে পাই না। সব’চে বেশি বিভ্রান্ত হয় কোমলমতি ছাত্র ছাত্রীরা। ইতিহাসকে তাদের সামনে হাজির করা হয় ভিন্ন ভিন্ন লেবাস পরিয়ে। 

     আমরা বালাগঞ্জবাসীর চরম দুর্ভাগ্য যে, তৃতীয় বিশ্বের কাছে বালাগঞ্জের নামটি আমরা পৌছে দিতে পারতাম। সুযোগ ছিল আমাদের হাতে। বলতে পারতাম, আমাদের বালাগঞ্জ একজন ওসমানীকে জন্ম দিয়েছিলো। সেই ওসমানী ছিলেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি। ওসমানীর নেতৃত্বেই মাঠ পর্যায়ে যুদ্ধ হয়েছিলো। সুতরাং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বালাগঞ্জের সন্তান বঙ্গবীর ওসমানী একটি দুর্দান্ত নাম। 
    আমরা সেটি করি নি। কেন করিনি বলতে পারবো না। ইতিহাসের আত্মভোলা ছাত্র আমরা। আমরা আমাদের বালাগঞ্জের শীতল পাঠিকে নিয়ে গর্ব করি। বিশ্ব দরবারে শীতল পাঠির জন্য বিখ্যাত হিসেবে বালাগঞ্জকে সামনে তুলে ধরি। ওসমানীকে নিয়ে গর্ব করি না। আমরা বুক ফুলিয়ে বলতে পারিনা আমরা সেই বালাগঞ্জের মানুষ, যে মাটি একজন ওসমানীকে জন্ম দিয়েছিলো। 



ছয়. 

     সার্বিক অর্থে বড়বেশি অন্যায় করেছি আমরা ওসমানীর সাথে। অন্যায় আমরা করেই চলেছি। দু’এক দশক পরের প্রজন্মের কাছে ওসমানী নামের বিশেষ কোনো তাৎপর্য থাকবে না। তাদের কাছ এম এ জি ওসমানীর পরিচয় হবে নিছক একজন মুক্তিযোদ্ধা আর্মি অফিসার হিসেবে। ওসমানী নামের বিশেষত্ব হবে বালাগঞ্জের ওসমানীনগরের ওসমানপুর গ্রামে জন্ম নেয়া একজন সাধারণ মানুষ বলে। 

       আমার যদি সুযোগ থাকতো, তাহলে হাত জোড় করে দাঁড়াতাম আমি ওসমানীর সামনে। বলতাম, প্রিয় বঙ্গবীর! আমরা তোমাকে সম্মান জানাতে পারি নি। মৃত্যুর আগেও না, পরেও না। তোমার সাহসী নেতৃত্বে আমরা একটি ভূ-খন্ড পেয়েছি। একটি পতাকাকে আপন করে পেয়েছি। আমাদের উচিৎ ছিলো তোমাকে কৃতজ্ঞতা জানানো। উচিৎ ছিলো তোমার সম্মান ও মর্যাদা উপরে তুলে ধরা। আমরা সেটা করিনি। 
বালাগঞ্জবাসীর পক্ষ থেকে, 
  সিলেটবাসীর পক্ষ থেকে, 
    বাংলাদেশের সকল মানুষের পক্ষ থেকে,
      তোমার বঙ্গ সন্তানদের পক্ষ থেকে,
        হে বঙ্গবীর,
          ক্ষমা চাইছি আমি। 
পারলে আমাদের ক্ষমা করে দিও।