বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১১

রাজনীতিতে প্রথমকথা, শেষকথা, আসল কথা





“মাছের পচন ধরে মাথা থেকে আর জাতির পঁচন ধরে নেতা থেকে’’-কথাটি কি আর এমনি এমনি বলা হয়! অন্তত বাংলাদেশের রাজনীতিকে সামনে রাখলে!
রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই কথাটি সবাই বলেন। কোনো রকমের হীনমন্যতা বা জড়তায় না ভোগেই বলে ফেলেন, যদিও নীতির মানদন্ডে এই কথাটি কতটুকু নৈতিক, সেই সহজ ব্যাপারটি বুঝবার জন্য বিদ্যাসাগর হবার দরকার হয় না।

এদেশের রাজনৈতিক সুবিধাবাদীদের জন্য ঐ কথাটিরচে’ নিত্য প্রয়োজনীয় কোনো বস্তু আর কিছু হতে পারে বলে অন্ত-ত আমার মনে হয় না। ঐ একটিমাত্র বাক্যকে ঠিকমত বাজারজাত করতে পারার মাঝেই রাজনীতির মাঠে জগণের সাথে প্রতারণামূলক মিথ্যাচারের কাফফারা খুঁজে পেতে চান আমাদের রাজনীতিবিদরা। কথা দিয়ে কথা রাখতে হয়না কারণ ঐ কথা শেষ কথা ছিল না। মুখে যা আসে তাই বলে ফেলা যায় যেহেতু শেষ কথা বলে কিছু নেই। ব্যাপারটি একটি গণতান্ত্রীক রাষ্ট্রের মূল কাঠামোর অস্তিত্বের জন্য কতটা ভয়ংকর, অনুমান করে নিতে কারো সমস্যা হবার কথা না। আর এমন রাজনৈতিক বসন্তবাদীদের গলায় কেমন বিশেষন ঝুলিয়ে দেয়া যায়, বিজ্ঞজনেরাই ভাল বলতে পারবেন।


(দুই)

যদিও বলা হয় শেষ কথা নেই। আর প্রথম কথা বলে কোনো কথা আমাদের স্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয় না, কিন্তু রাজনীতির আসল কথাটি আমাদের অনুমান করে নিতে অসুবিধা হয় না কিছু। সেই আসল কথাটি হচ্ছে অনেকটা “তোরা যে যা বলিস ভাই, আমার সোনার হরিণ চাই’’ এর মত। কথাটির ব্যাখ্যা হতে পারে এভাবে,-


জনগণের জন্য রাজনীতি করা হবে। সেই জনগণের জন্য আন্দোলন করতে যেয়ে কখনো লাশের দরকার হলে সেই জনগণকেই লাশ বানাবেন। সেই লাশের সিঁড়িতে পা রেখে ডিঙ্গাতে থাকবেন ক্ষমতায় যাবার এক একটি সিঁড়ি। সেই পিচ্ছিল সিঁড়ি ভাঙ্গতে পা যাতে ফস্কে না যায়, সেজন্য প্রয়োজন কিছু গাম জাতীয় তরল পদার্থ। এজন্য ও ভাবার দরকার নেই। অসহায় গরীব দিন মজুরের শরীরের মূল্যহীন রক্ত তো রয়েছেই।


(তিন)


একটি উন্নয়নশীল দেশের হতভাগা নাগরিক আমরা। অনেক কিছুই আমরা আশা করি না কিন্তু সেগুলো আমাদের চেয়ে চেয়ে দেখতে হয়। রাজনৈতিক গলাবাজি দেখতে হয়। দল বদলের ডিগবাজি দেখতে হয়। দেখতে হয় নির্বাচন প্রাক্কলিক রাজনৈতিক চাঁদাবাজিও। আমাদেরকে অসহায়ের মত দেখতে হয় এদেশের নির্বাচিত জন প্রতিনিধিরা এদেশেরই সেইসব নেতা, যারা না হলে আমরা একটি চমৎকার লাল সবুজ পতাকা পেতাম কিনা সন্দেহ, তেমন মৃত নেতাদের চৌদ্দগোষ্ঠীসহ কবর থেকে তুলে আনেন। এদেশের জন্মে যাদের অবদান, তাদেরকে টেনে হেছড়ে কবর থেকে বর করে নিয়ে আসা হয় জাতীয় সংসদে আচ্ছা করে ধোলাই দেবার জন্য।


(চার)


আমরা যারা এদেশের অত্যন্ত সাধারণ এবং দুর্বল প্রজাতির লোক, যাদের কিছু কারার ক্ষমতা নেই, সেই আমাদের নিরুপায় হয়ে মাথা নিচু করে দেখতে হয়েছে এ দেশের জাতীয় রাজনীতিবিদদের সৃষ্ট সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান বের করে দেবার জন্য ৩০ লক্ষ শহীদানের রক্তের সাথে গাদ্দারী করে স্যার নিনিয়ান স্টিফেনদের দ্বারস্থ হতে। বিউটেনিসদের দরজায় গিয়ে ধরণা দিতে। বর্তমানে অবস্থা আবার সেদিকেই যাচ্ছে কি না-ভেবে আতংকিত না হয়ে পারি না।


আধুনিক গণতন্ত্রের জননী বলা হয় যে ইংল্যান্ডকে, সেই ইংল্যান্ডে কোনো সমস্যা সমাধাণের জন্য রাস্তা-ঘাট দোকান পাঠ, অফিস আদালত বা যানবাহন বন্ধ করে দিয়ে দাবি আদায় করতে শুনা যায় না অথচ আমাদের এ দেশের, যেখানে গণতন্ত্র নামক শিশুটি এখনো নিজের পাঁয়ে দাঁড়াতে শেখেনি, সে দেশে দিনের পর দিন হরতাল ডেকে দেশের অর্থনীতির পাজড়ে লাথি মারা হচ্ছে সমানে।


কারা মারছেন?


মারছেন তারাই, যারা সকাল দুপুর সন্ধ্যায় নিয়মিত গণতন্ত্রের তছবীহ জপ করেন।


তাদের পরিচয় তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত।

তাদের পরিচয় তারা জিয়ার সৈনিক।
তাদের পরিচয় তারা আল্লাহর আইন ও সৎলোকের শাসন চায়।
তাদের পরিচয় তারা পল্লীবন্ধুর রাজনীতির দাবার গুটি।
ছোট-খাট দলগুলোকে হিসেবের বাইরেই রাখা হল কারণ এককভাবে তারা হরতাল ডেকে সফল করে ফেলবেন, তেমন ক্ষমতা তাদের নেই বলেই আমার ধারণা।

তো যারা হরতাল ডাকেন গণতান্ত্রীক অধিকারের ক্ষমতা বলে, তারা দিব্যি ভুলে বসেন হরতাল ডাকা যেমন তাদের গণতান্ত্রীক অধিকার, তেমনি সেই হরতাল মানা- না মানার অধিকারও গণতান্ত্রীক অধিকার। যদি নিজের গণতান্ত্রীক অধিকার অন্যের ঘাড়ে জোর করে চাপিয়ে দেয়া হয়, তাহলে তাকে সৈরতন্ত্র, ফ্যসিবাদ, সেচ্ছাতন্ত্র বা যাই বলা যাক অন্তত গণতন্ত্রক বলা যায় না। আর এর নামই যদি হয় প্রকৃত গণতন্ত্র, এই জোর করে মানুষকে নিজের কথা বা নিজের দলের কথা মানতে বাধ্য করার নামই যদি হয় গণতান্ত্রীক অধিকার, তাহলে এমন গণতন্ত্র থেকে মুক্তি চাই আমরা। মুক্তি চায় এদেশের সাধারণ মানুষ।


(পাঁচ)


এদেশের মানুষ বড়ই শান্তিপ্রিয়। এতটুকু শান্তির আশায় তারা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে ও রাজি। এ কথা বুঝেন আমাদের জাতীয় নেতৃবৃন্দ। আর তাই এদেশের সহজ সরল মানুষের আবেগ অনুভূতিকে ব্যবহার করে থাকেন তারা বারবার ক্ষমতায় যাবার সিঁড়ি হিসেবে। নেতা-নেত্রীরা আন্দোলন ডাকেন ক্ষমতায় যাবার পথ পরিস্কার করবার জন্য। প্রয়োজনে তারা যে জনগণের জন্য রাজনীতি করেন বলে দাবি করেন, সেই জনগণকে মুখোমুখি সংঘর্ষের মাঠে ছেড়ে দিয়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নিরাপদ কক্ষে বসে থেকে পর্যবেক্ষণ করেন তাদের জড়োকরা বা লেলিয়ে দেয়া গরীব অসহায় মানুষগুলো কে কার গা থেকে কত রক্ত ঝরাতে পারছে!


অস্বাভাবিক ব্যতিক্রম কিছু না ঘটলে আড়াই বছর পরে আমাদের নেতা-নেত্রীরা আবারো এদেশের গরীবের দরজায় এসে তাদের দুঃখ কষ্টের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করবেন। কী করে এই দুঃখি চেহারাগুলো সুখের জোয়ারে ডুবিয়ে দেয়া যায়, এ নিয়ে তাদের ভয়াবহ রকম দুশ্চিন্তা দেখে যে কারো মনে হবে-ইস! এদেশের নেতা-নেত্রীদের মন কত কোমল! সাধারণ জনগণের জন্য তাদের অন্তরে কতই না দরদ!


এমন কেউ কি আছেন যিনি তখন সাহস করে দাড়িঁয়ে যাবেন ঐ সকল নেতা-নেত্রীদের মুখোমুখি। অত্যন্ত বিনয়ের সাথে তাদের জিজ্ঞেস করবেন ---


“আগামী পাঁচটি বছর ক্ষমতায় টিকে থাকা বা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আপনাদের মোট কতটি হরতাল প্রয়োজন হবে? মোট কতটি লাশ হলে চলবে আপনাদের? আপনারা যখন আপনাদের প্রয়োজনে লাশ হবার আন্দোলনে শরীক হওয়ার ডাক দিবেন আমাদের, তখন সেই রাজপথের আন্দোলনে আপনাদের সন্তাদেরকে ও পাব কি আমরা আমাদের পাশে? লাশের মিছিল কেবল অসহায় গরীব দিনমজুরদের বস্তির দিকেই এগুতে থাকবে কেনো? এভাবে আর কত কাল”? এমন কেউ কি আছেন যিনি সত্যিই দাঁড়িয়ে যাবেন এক বুক সাহস নিয়ে!


(ছয়)


আমরা এদেশের সাধারণ জনগণ রাজনৈতিক স্থিতি চাই, সামাজিক প্রীতি চাই এবং তারও আগে চাই দেশের মর্যাদা। আমরা দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সকল সমস্যার সমাধাণ চাই। তবে সেটা দেশপ্রেম আদলে, সেটা চাই দেশের ভাবমূর্ত্তির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে, সেটা চাই সাধারণ মানুষের অধিকারের প্রতি যত্নশীল হয়ে।

আমরা বিশ্বাস করি আমাদের এই চাওয়া অতি স্বাভাবিক এবং ন্যায্য চাওয়া। দারিদ্র্যের অত্যাচারে জর্জরিত গরীব দেশের নাগরিক আমরা। আত্মসম্মান ছাড়া তেমন কিছুই নেই আমাদের। আমাদের এই আত্মমর্যাদা নিয়েই আমরা অহংকার করে বেঁচে থাকতে চাই। আমরা আমাদের জাতীয় নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে কি এই সামান্য অধিকারটুকু ও আশা করতে পারি না?

রবিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১১

সরকারের বেসুরো ডুগডুগি, মনমোহনের নিরামিষ ভেলকি, মুখ্যমন্ত্রীর মোক্ষম চাল, প্রয়োজন সত্যের শাণিত উপলব্দি



অনেকগুলো প্রশ্ন ভবিষ্যতের জন্য অমীমাংসিত রেখেই বিদায় নিলেন ড. মনমোহন সিং। দু’দিন ছিলেন। আতিথেয়তায় কমতি করিনি কোনো। তিনি স্বল্পাহারি মানুষ, তবুও সাধ্যমত খাইয়েছি। বিশ্বখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক হিষেবে প্রাপ্য সম্মান করেছি। বিদায়বেলা দেড়শ কেজি পদ্মার ইলিশও হাদিয়া দিয়েছি। কিন্তু বহুল আলোচিত এই সফর থেকে সম্পর্কের পালে হাওয়া লাগানো ছাড়া চোখে পড়ার মতো উল্লেখযোগ্য কোনো সফলতা খোঁজে পাইনি আমরা। দীর্ঘ ১২ বছর পর ভারতীয় কোনো প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকে নিয়ে যারা একটু বেশিই উচ্ছ্বাসিত ছিলেন, তাদেরকেও এখন মাথা নিচু করে গাইতে শুনি, স্বাদ না মিটিলো, আশা না পুরিলো......

না, আমরা নেগেটিভ সেন্স লালন করি না। এই সফর থেকে একদম কিছুই পাওয়া যায়নি বলবো না। ৪৬ টি গার্মেন্ট পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার ও সীমান্ত সমাঝোতা স্মারক স্বার, এগুলোকে আমরা ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখতে চাই। যদিও দেশটির নাম যেহেতু ভারত, সেজন্য তাদের উপর আশা করতে ভরসা পাইনা আমরা। অতীত অভিজ্ঞতা তো আমাদের সুখকর নয়। পণ্যের গুণগত মান বা অন্য কোনো ঠুনকো অজুহাত তুলে আমাদের পণ্য যে বাতিল করে দেবে না, সীমান্তে যে বিএসএফ এর বর্বরতা বন্ধ হবেই, আর কোনো ফেলানীকে মেরে কাটাতারের সাথে ঝুলিয়ে রাখবে না, কী গ্যারান্টি আছে?

এই সফরে আরেকটি কাজ হয়েছে। আমাদের বেরুবাড়ী ভারতের হাতে তুলে দেয়ার বিনিময়ে প্রাপ্ত দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা সিটমহলে যাবার করিডোরটি ২৪ ঘন্টা খোলে দেয়ার কথা ফাইনাল হয়েছে। কীভাবে বিশ্বাস করি! এই চুক্তি তো ১৯৭৪ সালেই স্বারিত হয়েছিলো, যার সাক্ষী হয়ে আছে আমাদের সংবিধান। ১৯৭৪ সালের ১৬ই মে সম্পাদিত মুজিব-ইন্ধিরা চুক্তিটিকে সাংবিধানিক বৈধতা দিতেই তো আয়োজন করা হয়েছিলো তৃতীয় সংশোধনী। ২৮শে নভেম্বর ১৯৭৪ সংবিধানের তৃতীয় সংশোধনীর শিরোনামটিই তো হচ্ছে-

“গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও প্রজাতন্ত্রী ভারত সরকারের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি কার্যকর করিবার উদ্দেশ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের কতিপয় বিধানের অধিকতর সংশোধন কল্পে প্রণীত আইন।”

কেমন ছিলো চুক্তি? আমাদের সংবিধানের এই অংশটি এখনো বাংলা করা হয়নি। কেনো হয়নি কে জানে। তপশীল ১৪ অংশে চুক্তির বিবরণ দেয়া হয়েছে এভাবে-

14, Benubari- India will retain the southern half of south berubari union no 12 and the adjacent cnelaves. Measuring an area of 2.64 square mils approximately. and in exchange Bangladesh will retain the Dahagram and Angarpota cnelaves. India will lease in perctuily of Bangladesh and area of 178 metres85 metres near. `Tin bigha’ of connect Dahagram with panibari Mouza (P.S. Patgram) of Bangladesh.

বাংলায় সার সংপে বোধকরি এভাবেই দাঁড়ায়; বাংলাদেশ দক্ষিণ বেরুবাড়ির দক্ষিণ অংশের ২.৬৪ বর্গমাইল ভূমি ভারত কে দেবে। এবং ভারত আমাদের দেকে দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা সিটমহল এবং সেখানে যাবার জন্য তিন বিঘা করিডোর। কিন্তু বিগত সাঁইত্রিশ বছর ধরে ভারত আমাদের নাকের ডগায় তিন বিঘার মূলো ঝুলিয়ে রেখেছে। যখন ইচ্ছ খুলে দিয়েছে, যখন ভালো লাগেনি বন্ধ করে দিয়েছে। তো বঙ্গবন্ধু যেখানে বিনিময় (বেরুবাড়ি) দিয়ে চুক্তি করেও তিনবিঘা করিডোর সুবিধা আদায় করে যেতে পারেননি, সেখানে বঙ্গবন্ধু কন্যা আবার নতুন করে সমঝোতা করে এবং বাহ্যিকভাবে বিনা বিনিময়ে এই ন্যায্য সুবিধা আমাদের পাইয়ে দেবেন, কী করে বিশ্বাস করি?

ভারত তিস্তা সই করেনি বলে বাংলাদেশও ট্রানজিট সই করেনি। এটি হচ্ছে একটি খবর। আর কে না জানে, খবরের ভেতরেই থাকে আসল খবর। আমরা যারা সাধারণ জনগণ, সেই আমরা এই আসল খবরটি নিয়েই বেশি উদ্ভিগ্ন। আমরা খুব করে চাইছি আমাদের অনুমান যেনো সঠিক না হয়। আমাদের উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা যেনো মিথ্যে প্রমাণিত হয়।

বাংলাদেশের বুকের উপর দিয়ে ভারত যে রাস্তাটি চাচ্ছে, ট্রানজিটের নামে, সেটা কোনোভাবেই ট্রানজিটের সংজ্ঞায় পড়েনা। সকলেই জানি কোনো একটি দেশ থেকে দ্বিতীয় দেশের ভেতর দিয়ে গিয়ে তৃতীয় দেশে যে রাস্তা বের হয়, সেটার নাম ট্রানজিট। আর দ্বিতীয় দেশ ঘুরে আবার নিজ দেশেরই অন্য অঞ্চলে ফিরে এলে সেটা হয় করিডোর। বহুল আলোচিত ট্রানজিট নামক রোডটির রোডম্যাপ হলো দুটি।
১, কলকাতা-রায়মন্ডল-খুলনা-বরিশাল-চাদপুর-গোয়ানন্দ-সিরাজঞ্জ-বাহাদুরাবাদ-চিলমারী-ধুবড়ী
২,কলকাতা-রায়মন্ডল-বরিশাল-চাদপুর-নারায়নগঞ্জ-ভৈরব-আজমিরিগঞ্জ-মারকুলি-শেরপুর-ফেঞ্চুগঞ্জ-জকিগঞ্জ-করিমপুর
অর্থাৎ ভারত থেকেই শুরু, ভারতে গিয়েই খতম। তারপরও সরকারের বড় বড় মাথাওয়ালারা এটিকে কোন যুক্তিতে ট্রানজিট বলেন, বুঝার কোনো কুদরত নেই।

মনমোহনের এই সফরে তিস্তাচুক্তি কেনো হয়নি? ট্রানজিটের সাথে তিস্তার কী সম্পর্ক, সেটা অনুমান করবার জন্য প্রাসঙ্গিক কিছু কথা সামনে আসা দরকার।
১) তিস্তার আলোচনা কিন্তু হুট করে সামনে আসেনি। গত বিশ মাস থেকে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে চুক্তিটির খসড়া তৈরি করা হয়েছিলো, তাহলে শেষ বিকেলে এসে গোলমাল বাঁধবে কেনো?

২) কী ছিলো চুক্তির খসড়ায়? কেউ জানে না। গোটা জাতিকে অন্ধকারে রেখেই চুক্তিটি হতে যাচ্ছিলো। মন্ত্রীসভায় আলোচনা হলো না। জাতীয় সংসদের অধিবেশনে হয়ে গেলো, সেখানেও এ নিয়ে টু শব্দটি নেই। এমনকি আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়ামের সভায়ও তো বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারতো। মন্ত্রী-এমপিদের জিজ্ঞেস করা হলে তারা বলতেন জানি না। পাল্টা প্রশ্ন, জানে কে? তাও জানি না! আর এই সুযোগটি তো করে দিয়েছে আমাদের সংবিধান। আমাদের সংবিধানের ১৪১ ক ধারায় বলা আছে,
‘‘ বিদেশের সহিত সম্পাদিত সকল চুক্তি রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করা হইবে এবং রাষ্ট্রপতি তাহা সংসদে পেশ করিবার ব্যবস্থা করিবেন।’’

এই যে, সংবিধান সংশোধন নিয়ে এতো জল ঘোলা করা হলো। কই! কাউতেই তো ১৪১ ধারাটি নিয়ে প্রশ্ন উঠাতে দেখলাম না! কেউ বললেন না, চুক্তি সম্পাদিত হয়ে যাবার পর সেটা আর সংসদে পেশ করার দরকার কি? করলে তো আগে করা দরকার। তবেই না দেশের স্বার্থে আলাপ- আলোচনার অবকাশ থাকে। কাউকে বলতে শোনা গেলো না এখানে সম্পাদিত’র স্থলে সম্পাদনাধীন শব্দটি প্রতিস্থাপিত হোক। এই ধারার কাধে বন্দুক রেখেই তো বিদেশের সাথে দেশের স্বার্থ বিরোধী চুক্তিগুলো হয়ে যায়। জনগণকে অন্ধকারে রেখে।

সরকারি সূত্রে জানানো হলো চুক্তির চূড়ান্ত খসড়া অনুযায়ী বাংলাদেশ পাচ্ছে ৪৮ শতাংশ পানি। ভারত ৫২ শতাংশ। কিন্তু মমতা বেঁকে বসার মুহুর্তে বললেন, আমাকে জানানো হয়েছিলো বাংলাদেশকে দেয়া হচ্ছে ২৫ হাজার কেউসেক কিন্তু চূড়ান্ত খসড়া হাতে আসার পর দেখতে পেলাম সেখানে লেখা ৩৩ হাজার কিউসেক। আমি ২৫ হাজারের এক ফোটা বেশি দিতেও রাজি নই।

মাথা ভনভন করতে শুরু করলে। মমতা বলছেন তিনি জানতেন ২৩ এর স্থলে ২৫। চুক্তিতে দেখতে পান ৩৩। সরকার জানালো চুক্তিতে ছিলো ৪৮%। এই ২৩, ২৫, ৩৩ ও ৪৮ এর গ্যাড়াকলে পড়ে আমাদের অবস্থা.........? কে মিথ্যাবাদী সেটা না হয় জানতে চাইলাম না। কিন্তু কে সত্যবাদী, সেটা জানার অধিকার কি আমাদের নেই?

৩) ভারতীয় মিডিয়া যেখানে আগের দিনই নিশ্চিত করেছিলো মমতার অসম্মতির কারণে তিস্তাচুক্তি হচ্ছে না। সেখানে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ৬ তারিখেও বলতে শুনলাম , চুক্তি হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে তিনি কি জেনে গোপন করেছিলেন না জানতেনই না। যদি না জেনে থাকেন, তাহলে ঘন ঘন বিদেশ সফর করা ছাড়া আপার আর কাজটা কী? পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারটি আঁকড়ে পড়ে থাকতে তাঁকে কে বলেছে? আর জেনে করলে নি:সন্দেহে জাতির সাথে মশকারা করা। কেনো করলেন জানবার অধিকার আছে আমাদের।

৪) বাঁশ থেকে যদি কঞ্চি মোটা হয়ে যায়, তাহলে বুঝতে হবে ‘ডালমে কুচ কালা হায়’। বিশ্বের এক পঞ্চমাংশ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন ড. মনমোহন সিং। তিনি গোটা ভারতের প্রধানমন্ত্রী, পশ্চিমবঙ্গসহ। আর দেশের প্রধানমন্ত্রী একটি কাজ করতে চান কিন্তু তাঁরই দেশের একটি অঙ্গরাজ্যে তারই অধিনস্থ একজন মুখ্যমন্ত্রীর সদয় সম্মতি না থাকায় এটা করতে পারেননি, আফসোস সে কথাও আমাদের বিশ্বাস করতে বলা হয়।

৫) যেহেতু তিস্তার সাথে মমতার পশ্চিমবঙ্গ জড়িত, তাহলে আমার দেশের সরকারের মাথামোটা উপদেষ্টাদের একবারও কেনো মনে হলো না কেন্দ্র সরকারের সাথে সাথে ব্যপারটি নিয়ে রাজ্য সরকার তথা মমতার সাথেও কথা বলা দরকার। আবার ইস্যুটি যেহেতু রাজনৈতিক। তাই উপদেষ্টা নামের সাবেক এই আমলাদের দায়িত্ব দেয়ার আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একবারও কেনো মনে হলো না এই কাজ আমলাদের না, এটা রাজনীতিবিদদের। ১৯৯৬ সালে ভারতের সাথে করা গঙ্গা চুক্তির কারিগরদের মধ্যে এক আব্দুস সামাদ আজাদ না হয় নেই কিন্তু আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, সি এম শফি সামি’রা তো বেঁচে আছেন। তাদেরকে কি কাজে লাগানো যেত না?

এবার আসি মূল পয়েন্টে। তিস্তার পানি আমাদের অতি ন্যায্য অধিকার। আন্তর্জাতিক নদী আইন অনুযায়ী ভারত আমাদের পানি দিতে বাধ্য। কিন্তু দিচ্ছে না গায়ের জোরে। আর ট্রানজিট? সেটা ঐচ্ছিক, তারা আমাদের কাছে এই সুবিধাটুকু চাইছে। ট্রানজিট দিতে বাধ্য নই আমরা। আমরা আমাদের দেশের স্বার্থ বিবেচনা করে ইচ্ছে করলে দেবো না হলে নাই।

অথচ আমরা গভীর উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার সাথে ল্য করছি তিস্তা ও করিডোরকে পরিকল্পিতভাবে সমান্তরাল করে ফেলা হচ্ছে! মনমোহনের এই সফরের শুরুতে অতি সুক্ষ্মভাবে বাজারজাত করা হলো, তিস্তা চুক্তি হচ্ছেই। তিস্তা চুক্তি না হলে ট্রানজিট চুক্তিও করা হবে না। সফরের মধ্যেখানে জানানো হলো, ভারত তিস্তা সই করেনি বলে বাংলাদেশও ট্রানজিট সই করেনি। সফর শেষে বিদায়বেলা মনমোহন তিস্তা চুক্তি করতে না পারায় বেজায় মন খারাপ ভাব প্রকাশ করে বললেন, অচিরেই এটি হয়ে যাবে। শেখ হাসিনা জানালেন, তিন মাসের মধ্যেই তিস্তা সই হতে যাচ্ছে। কী প্রমাণ হয???

ভারত আমাদের তিস্তার পানি দেয়নি বলে আমরাও ট্রানজিট দেইনি। জনগণকে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে এই ম্যাসেজটি দেয়া হলো, তার মানে তিস্তা দিলে ট্রানজিটও দিয়ে দেয়া হতো। তার মানে তিস্তা সমান ট্রানজিট! আসলেই কি তাই? ট্রানজিট অতি স্পর্শকাতর একটি ব্যাপার। আমরা ট্রানজিটের বিরোধী নই। বর্তমান বিশ্বের হাত পা গুটিয়ে ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই। তবে সেটা তো ট্রানজিটই হতে হবে। কানেকটিভিটির দরকার আছে। কিন্তু ট্রানজিটের নামে তো আর করিডোর দেয়া যায় না। বলবেন ট্রানজিট, দেবেন করিডোর, এটা কেনো?

কথা তো আরো আছে। মানলাম আমরা ভারতকে করিডোর দিতে রাজি হয়েছি। এবারে দেখবার বিষয় হলো, প্রস্তাবিত( অথবা বিএপির অভিযোগ অনুযায়ী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরেই স্বারিত) ট্রানজিটের স্বরূপ কেমন? কেমন সেটার প্রকৃতি? কেমন হবে তার প্রয়োগরীতি? সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রগুলো থেকে দায়িত্বহীন অসংলগ্ন ও পরস্পর বিরোধী কথাবার্তা ছাড়া ভরসা করবার মতো কোনো তথ্য পাওয়া তো মুশকিল। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়কে প্রশ্ন করলে যে জবাব পাওয়া যাবে, তাতে মনে হবে, সামনের শনি-মংগলবারেই বুঝি সব ঝামেলা চুকে যাবে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি সাফ জানিয়ে দেবেন, ট্রানজিট দেবার জন্য নতুন করে আর কোনো চুক্তিরই প্রয়োজন নেই। ৭২ এর চুক্তিই যথেষ্ট। আর আমাদের মুহতারাম পানিমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলে তিনি তো আরেক ধাপ আগ বেড়ে বলে দেবেন, ভারত আমাদের যেটুকুন পানি দিচ্ছে, তাই তো যথেষ্ট। তাহলে সঠিক তথ্য আর পাবেন কোথায়?

বিভিন্ন সূত্র থেকে যেটুকুন জানা গেছে, ভারতীয় ট্রাক বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে অবাধে চলার সুযোগ পাবে। কোনো চেকিং করা যাবে না! আমরা জানতে চাইতে পারবো না কী নিয়ে যাওয়া হচ্ছে! আমরা দেখতে চাইতে পারবো না ভেতরে ক’ আছে- আলু নাকি পটল? চিনি না ফেন্সিডিল? নাকি উত্তর পূর্ব ভারতের স্বাধীনতাকামী( তাদের ভাষায় বিচ্ছিন্নতাবাদী) সেভেন সিস্টারকে সাইজ করবার জন্য হাতিয়ার? একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্য এরচে’ বেশি খতরনাক আর কী হতে পারে?

সবকিছু মাথায় রেখে মনমোহনের এই সফরে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ প্রযোজনায় একটি নাটক মঞ্চস্থ হলো কিনা-সেটা নিশ্চিত হতে আরো কয়েক মাস অপো করতে লাগবে। তবে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে ট্রানজিটকে হালাল করার জন্য অত্যন্ত পরিকল্পিত ভাবেই এই নাটকটি মঞ্চায়ন করা হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই তিস্তা সই করে গোপনে ট্রানজিট দিয়ে বলাহবে, আমরা কথা রেখেছি। তিস্তা আদায় করে তবেই ট্রানজিট দিয়েছি।

তিস্তার প্রয়োজনীয়তা মাথায় রেখেই বলছি, ট্রানজিট ও তিস্তাকে এক পাল্লায় মাপার কোনো সুযোগ নেই। আমরা পানি চাই। অবশ্যই চাই। এটা আমাদের ন্যায্য প্রাপ্য। কিন্তু তার বিনিময়ে ট্রানজিট কোনো শর্ত হতে পারে না। অথচ পরিকল্পনা মাফিক সেটাই করা হচ্ছে। জনগণের দৃষ্টিভঙ্গিকে এই জায়গায় এনে সেট করা হচ্ছে যে, তারা তিস্তা সই করেনি আমরা ট্রানজিট দেইনি, তারা দিলে আমরা দিতাম। এরই ধারাবাহিকতায়, আমরাদের ধারণা আগেই বলেছি, কামনা করছি মিথ্যা হোক, নামকাওয়াস্তে তিস্তা চুক্তি করে ট্রানজিট হালাল করা হয়ে যাবে জনগণকে বোঝানো হবে আমরা আমাদের দাবি আদায় করে তবেই ট্রানজিট দিয়েছি।

আমরা আমাদের সরকারকে বলি, আত্মঘাতি কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। ভারত যদি গায়ের জোরে তিস্তার পানি না দেয়, না দিক, প্রয়োজনে আমরা ১৬ কোটি মানুষ আমাদের চোখের পানি দিয়েই তিস্তার প্রবাহ সচল রাখবো তবুও আমরা চাইবো না আমাদের বুকের উপর দিয়ে ইন্ডিয়ান ট্রাক চলুক । সরকারকে আমরা বিনয়ের সাথে বলি, ট্রানজিটের ব্যপারে হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে বসা ঠিক হবে না। এর সাথে দেশের ষোল কোটি মানুষের নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত। দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন জড়িত। এদেশের মানুষ আপনাদের ভোট দিয়েছে আপনাদের নির্বাচনি ইশতেহার দেখে। খোলে দেখুন, সেখানে কিন্তু ট্রানজিটের কথা বলা নেই। এখন ভারতকে ট্রানজিট দিতে চাইলে আবার জনগণের ম্যান্ডেট নিন। গণভোটের ব্যবস্থা করুন। দেখুস দেশের মানুষ কী চায়?

আর ঠান্ডা মাথায় একটু ভেবে দেখুন দুশমন বাড়ানোর খুব বেশি দরকার আছে কি না। আজ যারা, যে ভারতীয়রা তাদের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করছে, আজ থেকে ৪০ বছর আগে, ঊনিশ শ একাত্তর সালে এই মানুষগুলোও কিন্তু তাদের থালার ভাত শেয়ার করেছিলো আমাদের সাথে। আজ যখন তারা লড়ছে, এটাকে ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যপার বলে আমরা না হয় চুপ করে থাকলাম যেমন আছি। কিন্তু আমাদের বাড়ি ব্যবহার করে তাদের বুকে গুলি চালানোর পথ করে দিয়ে তাদের টার্গেটে পরিণত হবো কেনো? কেনো তাদের শত্র“তে পরিণত হবো? শত্র“র কি আমাদের এতই অকাল পড়েছে যে, নতুন করে শত্র“ বানাতে হবে? আর ভারতের মতো বন্ধু খাকতে শত্র“র আর দরকারইবা কি!

বৃহস্পতিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১১

সাবাস মমতা সাবাস!



নিজের ভাবমূর্তিকে আরও একধাপ এগিয়ে নিলেন পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী শ্রীমতি মমতা বন্দোপাধ্যায়। বাংলাদেশের সাথে প্রায় হতে চলা তিস্তা চুক্তি রুখে দিলেন তিনি। তিনি প্রমাণ করলেন, পার্শবর্তীদের সাথে সুসম্পর্ক, বন্ধুত , সেটা পরে, আগে নিজের স্বার্থ, নিজের রাজ্যের মানুষের স্বার্থ । মমতার এই মানসিকতার জন্য আমি তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। আমার দেশের ক্ষমতাসীন বা ক্ষমতালিপ্সু রাজনৈতিক কুশীলবগণ কি এখান থেকে শিক্ষনীয় কিছু খোঁজে পাচ্ছেন? মনে তো হয় না!

৬ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড: মনমোহন সিং যখন ঢাকা সফর করছেন, তখন আমার দেশের সরকারের নীতি নির্ধারনী মহলে যারা আছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রথম সারির চেয়ার-টেবিলগুলো যাদের স্পর্শে ধন্য হচ্ছে, মাননীয় মন্ত্রী দীপুমনি সহ পদস্থদের বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান, ‘দেখাযাক কী হয়’-টাইপ ছন্নছাড়া কথাবার্তা দেশের সাধারণ মানুষকে বরাবরের মতো বিভ্রান্তিতে ফেলে রাখে। মমতা কেনো আসেননি, মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার ব্যাখ্যা দিলেন এভাবে, “ পশ্চিমবঙ্গের উপ নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত আছেন বলে আসতে পারেননি! পরে কোনো এক সময় আসবেন তিনি।

আমার দেশের সহজ সরল জনগণ ভাবলো, তাহলে কী আর করা! বেচারী নিজের বাড়িতে এতো বড় একটি আয়োজন রেখে আসবেইবা কীভাবে? আমরা আর ভাবলাম না মনমোহন’র এই সফর তো আর হুট করেই অনুষ্টিত হচ্ছে না। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র ভারত সফরের সময়ই এই ফিরতি সফর ঠিক হয়েছিলো। মমতা রাজ্য সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেয়ার আগে থেকেই জানতেন এই সফরের কথা। আর পশ্চিমবঙ্গের উপ নির্বাচনও নিশ্চই দু’পাঁচ দিনের নোটিশেই অনুষ্টিত হচ্ছে না। তাহলে কী করে বিশ্বাস করা যায় মমতার না আসার এটাই কারণ? সেই সাথে ভারতের পানি মন্ত্রীও নাই। ঘটনা কী?

মনমোহন সিংকে ঢাকায় রেখে শ্রদ্ধেয় মোজাম্মেল কবির’র কথার সূত্র ধরে কৌতূহলের বশেই ঢু মারলাম কোলকাতার প্রভাবশালী দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার অনলাইন এডিশনে। যদি কিছু জানা যায়। স্ববিস্ময়ে আবিস্কার করলাম আনন্দবাজার ফলাও করে বলছে,

“মমতা বন্দোপাধ্যায়ের আপত্তিতেই শেষ মুহুর্তে আটকে গেলো বাংলাদেশের সাথে তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি। ক্ষমতা গ্রহনের পর ১১০ দিনে এটাই মমতার সেরা চাল বলে মনে করা হচ্ছে। জলবণ্টন নিয়ে শতাংশের জটিল হিসেব বা সংখ্যাতত্ত্বকে পিছনে ফেলে তিনি সোজাসাপ্টা বার্তা দিতে চেয়েছেন যে, রাজ্যের স্বার্থেই রুখে দাঁড়িয়ে তিনি চুক্তি আটকে দিয়েছেন। এই চুক্তি হলে আদতে বিপদ্......

তৃণমূল শিবিরের মতে, এটাই মূখ্যমন্ত্রীর মোক্ষম চাল এবং মোক্ষম সময়ে। যা দিয়ে গোটা পরিস্থিতিকে তিনি নিজের অনুক’লে এনে ফেলেছেন। রাজ্যের স্বার্থের মুখপাত্র হিসাবে ভাবমূর্তি উজ্জ্বলের পাশাপাশি বাম শিবিরকে ইষৎ বিভ্রান্তও করে দিতে পেরেছেন মমতা”

বোঝতে আর বাকী রইলো না কেনো ছিলো মমতার বেঁকে বসা! আরো খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, শুকনো মওসুমে ২৩ হাজারের পরিবর্তে ২৫ হাজার কিউসেক পানি দেয়া হবে বাংলাদেশকে, মমতাকে কেন্দ্র সরকারের তরফ থেকে নাকি সেটাই জানানো হয়েছিলো। কিন্তু চুক্তির খসড়া হাতে পেয়ে তিনি দেখতে পান বাংলাদেশ পাচ্ছে ৩৩ হাজার কিউসেক। বেঁকে বসেন তিনি।

যদিও ইনসাফ ভিত্তিক বণ্টন হলে বাংলাদেশের ৬০ হাজার কিউসেক পানি পাবার কথা, কিন্তু যার বিজয়ে আনন্দে নৃত্য করেছিলাম আমরা আর ভাবছিলাম, পশ্চিমবঙ্গটা বুঝি আমরাই জয় করে ফেলেছি, আমাদের সেই দরদীনি মমতা পরিস্কার জানিয়ে দেন, ২৫ হাজারের একফোটা বেশি পানি দিতে তিনি রাজি নন, কখনো রাজি হবেন না। ফলে ভেস্তে যায় সবকিছু।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে আরো জানা যায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই যোগাযোগ করেছেন মমতার সাথে। ৩ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনার চিঠি নিয়ে তাঁর একজন বিশেষ দূত মমতার সাথে দেখাও করেন। হিমালয়ের বরফ গলানো সম্ভব হয়নি তবুও। মমতা সাফ জানিয়ে দেন, এমন কোনো শর্তে তিনি চুক্তি করতে পারেন না যাতে তাঁর রাজ্যে জল সংকট তৈরি হয়।

ছয় তারিখের আনন্দবাজার’র ভাষ্য অনুযায়ী, মমতা যে আসছেন না, তিস্তা চুক্তি যে হচ্ছে না, বাংলাদেশ সেটা আগে থেকেই জানতো। পত্রিকাটি ভারতের পররাষ্ট্র সচিব রঞ্জন মাথাই’র বরাত দিয়ে জানায়, “ আপাতত ঠিক হয়েছে প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় গিয়ে জানিয়ে আসবেন অদূর ভবিষ্যতে তিস্তা চুক্তি করতে ভারত বদ্ধ পরির্ক ।”

তার মানে ভারত-বাংলাদেশ, উভয়েই জানতো, এই মোলাকাতে অন্তত তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরিত হচ্ছে না। তাহলে এ নিয়ে কেনো ছিলো এতো লোকচুরি! মমতা কেনো আসছেন না-এই প্রকৃত সত্যটা জাতির সামনে প্রকাশ করতে সমস্যাটা কী ছিলো? এটা করলে তো সরকারের স্বচ্ছতাই প্রকাশ পেতো।

আমাদের প্রতি মমতার এই ভয়াবহ মমতা দেখে আমার বারবার মনে পড়তে লাগলো ছাগলের তিন বাচ্চার সেই গল্পটি। আই যে! ছাগলের দুই বাচ্চা দুধ খেয়ে লাফাচ্ছিলো আর তৃতীয়টি এমনি এমনিই তিড়িং বিড়িং করছিলো। মাস চারেক আগে মমতা যখন এক ঐতিহাসিক ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে পশ্চিম বঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী হলেন, তখন ওখানকার দুধ খাওয়া ছাগলের বাচ্চাগুলো খুশিতে যে পরিমাণ লাফাচ্ছিলো, এখানকার আমরা, দুধ না খাওয়া অতি উৎসাহী ছাগশিশুরা লাফাচ্ছিলাম তারচে’ও কয়েকগুন বেশি! আজ যখন মূখ্যমন্ত্রী মমতা মোক্ষম সময়ে স্বরূপে আবিভূত হলেন, তিনি তাঁর দেশের প্রেক্ষাপটে রাজ্যপ্রেমের সাথে কোনো রকম আপোষে গেলেন না, তখন আমার দেশের আমরা যারা লারাচ্ছিলাম, সেই আমাদের বর্তমান চেহারাটা দেখতে খুব ইচ্ছে করছে আমার।

ভারতের সাথে বাংলাদেশের রয়েছে পঞ্চাশোর্ধ অভিন্ন নদী। ভারত আছে সুবিধাজনক অবস্থানে। তারা আছে উজানে। শুকনো মওসুমে আমাদের মাটি যখন একফোটা পানির জন্য খা খা করে, তখন তারা পানি আটকে রাখে। আবার বর্ষাকালে আমরা যখন বন্যার পানিতে ভাসতে থাকি, তখন তারা বাধগুলো ছেড়ে দেয়। আমাদের কিছুই করার থাকে না! যাবার কোনো জাযগাও নেই বলে। তিন দিকে ভারত একদিকে বঙ্গপোসাগর, যাবার আর জায়গা কোথায়!!

সেই ষাটের দশক থেকে আলোচনা হতে হতে অবশেষে ৯৬ সালে এসে একটি মাত্র নদীর পানি বণ্টনের ব্যাপারে চুক্তি হয়েছিলো। যাকে আমরা অনেকেই ঐতিহাসিক গঙ্গাচুক্তি বলে গর্ব করতে ভালোবাসি। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী পানি কখনো পেলাম কি না, সেটা দেখবার জন্য যে, বিশেষজ্ঞ হবার দরকার হয় না, শুকনো মওসুমে নদীটি’র মধ্যেখানে গিয়ে দাড়ালেই হয়, সেটা ভাববার তাগিদ কখনো অনুভূত হযনি!

ফিরে আসি তিস্তায়। তিস্তার উৎস সিকিমের কাংসে হিমবাহ। হিন্দু পুরান অনুসারে দেবী পার্বতীর স্তন থেকে তিস্তা’র উৎপত্তি! উইকিপিডিয়া জানাচ্ছে, তিন নদীর স্রোত মিলে তিস্তা। তিস্তা শব্দটি এসেছে ত্রি-সেরাতা বা তিন প্রবাহ থেকে। হিমালয়ের ৭২০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত চিতামু হ্রদ থেকে নদীটির সৃষ্টি হয়েছে। এটি দার্জিলিং এ অবস্থিত শিভক গোলা নামে পরিচিত একটি গিরি সঙ্কটের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। পশ্চিমবঙ্গ হয়ে নদীটি নীলফামারী জেলার খড়িবাড়ি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের এসে প্রবেশ করতো। ১৭৮৭ সালে এসে অতিবৃষ্টিজনিত ব্যাপক বন্যার কারণে নদীটি তার গতিপথ পরিবর্তন করে পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি হয়ে এসে লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম এবং গাইবান্ধা জেলার মধ্যদিয়ে চিলামারী নদীবন্দরের দক্ষিণে ব্রক্ষপুত্রে এসে মিলিত হয়।

৪২৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এই নদীটির ১৫১ কিলোমিটার পড়েছে সিকিমে। পশ্চিমবঙ্গে ১২৩ কি:মি:। দুই রাজ্যের সীমানা বরাবর ১৯ কি:মি;। বাংলাদেশে ১২১ কি:মি:। ভারত এখন তিস্তা থেকে বছরে পানি পাচ্ছে ১১০ কিউমেক। (ঘনমিটার/সেকেন্ড) যেখানে শুকনো মওসুমে বাংলাদেশ পাচ্ছে মাত্র ৩০ কিউমেক!। এটা কতবেশি দাদাগিরি সুলভ বণ্টন নীতি, ব্যাখ্যার অবকাশ রাখে না।

মনমোহনের এই সফরে তিস্তা চুক্তি হয়নি বলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ট্রানজিট চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়নি। এতে করে কিছু মানুষকে বেশ উল্লোসিত মনে হচ্ছে। তাদেরকে আমি বলতে শুনছি, কাজের কাজ হয়েছে। আমাদের জন্য তিস্তা চুক্তি করেনি, আমরাও ট্রানজিট চুক্তি করিনি। সমুচিৎ জবাব।

তবে আমরা খুতখুতে মেজাজের সাধারণ মানুষ কিন্তু খুশি হতে পারছি না। উপরন্তু ঠিক যে কারণে কিছু ভাই আমার উল্লোসিত, সেই একই কারণেই আমরা উদ্বিগ্ন! সে অনেক দীর্ঘ কথা। আগামী কিস্তিতে বিস্তারিত আলোচনার ওয়াদা থাকলো।

সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১১

কোন সে কারিগর...???



ভাবনার খোরাক হতে পারে, যদি চাই।
ছোট্ট একটি বীজ, আমের আঁটি, বড়া, নামে কী আসে যায়, তাকাই আমি,
চোখে জিজ্ঞাসা, হিসাব মিলে না কোনোভাবে!


বিস্ময়ের চাঁদর এক ঢেকে দেয় , বলে;
ভাবান্ধ! তবু, তবুও তুমি বুঝলে না। আমি ফিরে আসি বিবেকের কাছে,
যুক্তির পোষাক পরা, বলি, সমাধান কি?


লোহা শক্ত পদার্থ, শক্ত খুব, দৃঢ় চেতা,
মাটি ছাড়েনা তাকেও। মাটিকরে ফেলে , যখন বাগে পায়, আঘাত হানে,
বিবেকের কথা বলছি, বলে; কথা সত্য।


আমের আঁটিটি চলে যায় মাটির বুকে,
কী হবে? লোহার যদি হয় সাঙ্গলী্লা! তবে সেরেছে, কিছু পাবেনা খোঁজে,
যুক্তি বলে। আমি হাসি, বলি, কথাতো সত্য।


একটি বীজ/আঁটি পুঁতেছিলাম মাটিতে।
বছর ঘুরে এলো, খোঁজ নিতে যাবো ? একদিন, দেখে আসি কেমন আছে?
গন্ধও পাবে না তার, যুক্তি জবাব দেয়।


আমাকে হতবাক করে দিয়ে, যুক্তিকেও।
মিশে যাবার কথা যার মাটির সাথে, আমের সেই আটি, দাঁড়িয়ে আছে
শক্ত মাটির বুক ফেড়ে! কীভাবে কী হলো?


তাকাই যুক্তির দিকে, চোখ নামিয়ে ফেলে
হিসাব তো মিলে না, কীভাবে কী হলো? কে সেই! কোন সে মহান কারিগর?
???? ???? ????? ????? ???? ????

পুস্পকানন এবার বৃষ্টিতে ভিজবে


জীবনের আবাহন, সম্মোহন, স্বপ্নলোকের চাবি,
ঘরেফেরা, শুরু করা, জীবনের গান।
দখিনা বাতায়ন,
হিমেল হাওয়া,
ঝাকে ঝাকে হাসনাহেনার গন্ধ।
মনমাতানো,
নেশাধরানো,
অদ্ভুত অনুভূতি।

ভালোবাসার নায়ে চেপে দুই জোড়া চোখ,

চোখে চোখ রাখা,
পাল তুলে চেয়ে থাকা সুদূরে।
জোসনার আলো গায়ে মেখে এঁকে-বেঁকে
এগিয়ে যাওয়া,
পুস্পকানন এবার বৃষ্টিতে ভিজবে।

নীলাকাশ। এতো নীল।

যদি ছুঁতে পারতাম!
একমুঠো নীল যদি আমার হতো!
সাজিয়ে রাখতে পারতাম পূর্ণিমার দ্বিতীয় প্রহরে,
জোসনার মলাটে।
মেশানো যেতো জীবনের রঙে।

স্বপ্নগুলো কোনো যে নীড়ে ফেরে না।

অবেলার সাতকাহন আর কতো!
বাবুই কতো সুখি।
নীড় আছে,
স্বপ্ন আছে,
স্বপ্নকে স্পর্শ করার হাত আছে।
আমার নেই কেনো?
উড়ন্ত স্বপ্নচারি,
ভাবনার জগতকে বলো গুডবাই। কারণ,
পুস্পকানন এবার বৃষ্টিতে ভিজবে।


এ যাবৎ জীবনে, কত শত স্মৃতি কথা,

এলোমেলো, ছড়ানো, সুখ-দু:খ জড়ানো,
জমে থাকা কথামালা,
জমে থাক।
শব্দের গাঁথুনি, বাক্যের ডামাঢোল,
কথার পিঠে কথা, না বলা কথামালা,
চাপা থাক।

আজ কোনো কথা নেই।

কতোদিন, বহুদিন,
অন্যকে রাঙাতে,
দিবানিদ ভাঙাতে
এশা হয়েছে নিশা।
নাওয়া-খাওয়া শিকেয় তুলে গড়ে দিয়েছে
কত যুগলের সৌধ।
আর কতো?
জানি তুমি আসবে।

কে তুমি! অশরীরি!

হানা দিয়েছো ঘুমকাননে?
স্বপ্নের পাজর ভাঙার শব্দ কত নির্মম,
তা তো তুমি শুনতে পাওনি মেয়ে!
আঁধারের কালোকে, কী দরকার ছিলো
আলো দেয়া, ক্ষণিকের,
নাইবা যদি থাকবে!

মেয়ে কে তুমি!

এলেই যখন, নিরবে,
বারবার অনুভবের দোলায় চড়ে,
অস্তিত্বের জানান দিলে না কেনো?

কতদিন ভোরবেলা খোঁজেছে তোমায়!

স্বপ্নের আকাশে,
পাতালে।
তন্ন তন্ন করেছে গহীন অরণ্য।
বাতাসে ভালোবাসার গন্ধ,
পিছু নিয়েছে।
পায়নি কেনো?

স্বপ্নচারি!

স্বপ্নকন্যা তোমার, ভুল ভেঙেছে,
বুল ফুটেছে।
বাড়িয়েছে হাত।
চলো, হাতে হাত রাখো।
গড়ে তুলো স্বপ্নের প্রাসাদ।
আজাদীর যবনিকা, মন যদি ভেঙে যায়,
খুশি হও এই ভেবে,
পুস্পকানন এবার বৃষ্টিতে ভিজবেই।


স্বপ্নচারির হাতধরে স্বপ্নবোনার স্বপ্ন,

স্বপ্নখরার বেসাতি, বৃষ্টি নেই!
বেদনার নীল ফেড়ে মুখ তুলে তাকানো,
রঙধনুর সাত-সপ্তমি,
খোঁজে ফেরা ভালোবাসার রঙ।
কী যেনো?

একজীবনের ধুলোমাখা স্বপ্ন,

ছাইপাশের স্তুপ,
স্বপ্নেরা উঁকি দিতে চায়।
প্রতীক্ষার প্রহর গোনা, একপশলা বৃষ্টির।

কথাগুলো, আশাগুলো,

তিলে তিলে লালিত স্বপ্নের ভাষাগুলো,
বুকে ছিলো। মুখ ছিলো, ছিলো না।
আহারে!

একজন কেউ যদি একবার,

শুধুমাত্র একবার, বলতো,
চলো ধরো হাত...

স্বপ্নচারিনি,

চোখ বুঝি ভিজেছে! মুছে নাও।
আবেগের বেগদ্বার খোলে দাও।
চোখ খোলো, মুখ তোলো আকাশে-
পুস্পকানন এবার বৃষ্টিতে ভিজবেই।


নিভৃত স্বপ্নচারি,

একজন আবুল কালাম।
আজাদ ছিলো।
অন্তহীন আজাদী, মানে নেই।
লাগামহীন জীবনে, হতে নেই, হতে দিতে নেই।
সানাইয়ের সুর, বহুদিন, দূরে ঠেলে দিতে নেই।

একজন স্বপ্নচারিনি,

সালমা বোধ’য়।
নামের বাঁকে বাঁকে শান্তির কণাগুলো,
আশাগুলো, ভালোবাসাগুলো
বেঁচে থাক, সাথে থাক।
গড়ে উঠুক নন্দনকানন সেই।

বাগানবাড়ির বাতায়নগুলো

জড়িয়ে যাবে লতানো ডালে,
যাক না।
বেলি-চাঁপার কলকাকলিতে জেগে উঠবে অন্য কোনো কুসুমকলি।
উঠুক না।

জানি পরে কী হবে!

ঐ যে!
সেই কলি ফুল হবে।
জানান দেবে পাপড়ি মেলার।
পুস্পকানন এবার...

কলি হোক, ফুল হোক,

ফুলে ফুলে ভরে উঠুক বাগানটি।
প্রতিদিন ভোর হোক,
ঘুম থেকে জাগা হোক ফুলেদের চিৎকারে!
পড়শীর মুখে মুখে চলুক কথা-
কোন কাননের ফুল যেনো...?

ধৈর্য ও প্রতীক্ষার রজনী,

এ তো শুধু একদিক।
উল্টো পিঠেই তার প্রাপ্তি ও আনন্দ,
অপরূপ দিন-রাত।
দিবসের এই দ্বি-প্রহরে জীবনের জয় হোক।
ক্ষয় হোক অপ্রাপ্তির।
কষ্ট জরা হতাশা, ঘুছে যাক, মুছে যাক। পুস্পকাননে অমীয় ঝরণাধারা,
জীবনের জয় হোক।

জীবনের দুপুরে

এসে,
হেসে,
ভালোবেসে,
বলার আছে কিছু?

দরকার নেই।

আজ কোনো কথা নয়।
কোনো কথা শোনা নয়।
আজ শুধু বৃষ্টি ভেজার দিন।

চোখে চোখ রাখা- জয় হোক।

হাতে হাত রাখা- জয় হোক।
বুকে মাথা রাখা- জয় হোক।


জীবনের জয় হোক।