শনিবার, ২৪ মার্চ, ২০১২

সে ছিলো এক ভিন্ন সফর--- ২



পূর্ব প্রকাশিতের পর

পিনপতন নিরবতা মাড়িয়ে এগিয়ে চলেছি আমি। বিশেষ ব্যবস্থায়। হঠাৎ চোখে পড়ল একটি জটলা। এগিয়ে গেলাম আমি। কয়েক হাজার মানুষকে মাথা নিচে পা উপরে-অবস্থায় ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। কাছে গেলাম আমি। এরা কারা-জানা দরকার। কী এমন পাপ তারা করেছিল যে, আজ তাদের এই করুণ পরিণতির সামনা করতে হল!!

খোঁজ নিয়ে জানলাম এরা হচ্ছে নাস্তিক। পৃথিবীতে থাকতে তারা বলত, স্রষ্টা বলে কিছু নেই। আজ তাদের আল্লাহপাকের সামনে হাজির করে বলা হয়েছিল, তোমরা বলতে আল্লাহ বলে কেউ নেই! এখন---

ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে একটি শব্দই শুধু বের হয়েছে তাদের মুখ থেকে, সরি। ফেরেশতারা জানিয়ে দিয়েছেন, আজ নো সরি। যা করার করে ফেলেছ। সুযোগ দেয়া হয়েছে। আর না। আজ পরিণতি দিবস। তারপর তাদের উলটো করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এভাবে কত দিন থাকতে হবে- বলা মুশকিল। বিচারিক কার্যক্রম কতদিন চলবে, আল্লাহপাক ছাড়া কেউ জানে না। শুধু একটি অংকই জানা গেছে। কিয়ামতের এক দিন হবে পৃথিবীর হিসাবে ৫০ হাজার বছরের সমান! এর মানে এই পৃথিবীতে কেউ যদি একশ বছর বেঁচে থাকে, তাহলে কিয়ামতের এক দিনের তুলনায় সেটা হবে ২ মিনিট ৪৫ সেকেন্ড!!

-----------
--------------

কিছু দূর এগিয়ে গেলাম আমি। বেশ কিছু সামনে গিয়ে আবিস্কার করলাম ভারি একটি পর্দা টানানো। পর্দার ভেতরে কিছু লোককে জড়ো করা হয়েছে। জানাগেল এরা উম্মতে মুহাম্মদীর আলেম সমাজের একটি অংশ। উনাদের উল্লেখযোগ্য অংশ বাংলাদেশি।

আমার জানামতে পৃথিবীতে থাকতে আলেমরা তো ভালো কাজই করতেন। লোকজনকে নেক কাজের নসিহত করতেন, তাও মাইক লাগিয়ে। বুঝলাম আল্লাহপাক খুশি হয়ে আলেমদের জন্য আজ বিশেষ সম্মান বা আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেছেন, বোধকরি। আফসোস হতে লাগলো আমার। ইচ্ছে করতে লাগলো ভেতরে যাবার। চমৎকার এই ব্যাপারটি কাছে থেকে দেখা দরকার।

পর্দার কাছাকাছি গেলাম আমি। দায়িত্বশীল ফেরেশতার কাছে জানতে চাইলাম, ভেতরে কারা?
ভুরু কুচকে তাকালেন তিনি। চেহারায় বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। আমি আমার পাস দেখালাম। হাশরের মাঠে ঘুরে বেড়াবার জন্যে আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে বিশেষ পারমিশন দেয়া হয়েছে আমাকে। পাস দেখার পর ফেরেশতার মুখের পেশিগুলো স্বাভাবিক হয়ে আসতে শুরু করেল। তিনি জানালেন, উনারা আলেম সমাজ।
আমি বললাম, উনাদের এখানে বিশেষভাবে আলাদা করা হল কেন?
বিশেষ কারণ আছে।
সেই বিশেষ কারণটি কি বলা যাবে?
তিনি বললেন---

তিনি যা বললেন, তাতে আমার আক্কেলগুড়ুম অবস্থা! এমন কিছু শুনতে হতে পারে- আমার কল্পনায়ও ছিলো না। তিনি আমাকে যা জানালেন, তার সারমর্ম হল,

এখানে আলেম-উলামাদের একটা অংশকে জড়ো জরা হয়েছে বিশেষ শাস্থি দেয়ার জন্য। এরা তারা, যারা পৃথিবীতে থাকতে ঐক্যের পক্ষে লম্বা লম্বা কথা বলতেন। মাইক লাগিয়ে কুরআনের আয়াত ওয়া’তাসিমূ বি-হাবলিল্লাহি জামিয়াঊ ওয়ালা তাফাররাক্কূ, ( তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখো, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না) পড়ে পড়ে ওয়াজ করে বেড়াতেন, ঘন্টার পর ঘন্টা লোকজনের কান গরম করে রাখতেন কিন্তু নিজেরা থাকতেন পরস্পর থেকে একশ হাত দূরে!

আমি ফেরেশতাকে প্রশ্ন করলাম, উনাদের সাথে আজ কেমন ব্যবহার করা হচ্ছে?
তিনি জানালেন, তাদের জন্য আজ কেঁচি ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কিছু বুঝতে না পেরে তাকালাম আমি। তিনি বললেন, তাদেরকে পবিত্র কুরআনের আরেকটি আয়াত সামনে নিয়ে এসে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে, লিমা তাকুলূনা মা-লা তাফয়ালূন, সেটা তোমরা কেনো বলতে যা করতে না! তারা জবাব দিতে পারেননি! তাই আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে তাদের জিহবা গোড়ার দিক থেকে আজ কেটে ফেলার নির্দেষ দেয়া হয়েছে! আপনি চাইলে আপনাকে ভেতরে যাবার সুযোগ দিতে পারি। যেহেতু পাস আছে আপনার।

আমি বললাম, তার আর দরকার নেই। শুনেই ভয় করছে আমার। এমন বীভৎস ঘটনা না দেখাই ভালো।

সালাম দিয়ে ঘুরে দাড়ালাম আমি। আমি মুসাফির। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকলে হবে না। আমাকে ছুটতে হবে।

------------
----------------

কিছু দূর অগ্রসর হলাম আরো। হঠাৎ চোখ আটকে গেল এক জায়গায়। দেখলাম ফেরাউন, কারুন, নমরুদ, শাদ্দাদ আর আবু জেহেলদের নেতৃত্বে একটি বিশাল দল একত্রে জট পাকিয়ে বসে আছে ভয়ার্ত চেহারায়। তাদের সাথে বুশ-ব্লেয়ার নেতানিয়াহুরাও আছেন। আমি বিস্মিত হয়ে লক্ষ্য করলাম আমার বাংলাদেশের পরিচিত অনেক মুখও রয়েছে এই দলে। এগিয়ে গেলাম আমি, তাদের কাছাকাছি। এ ব্যাপারে আমাকে কোন তথ্য যদি উদঘাটন করা যায়!

কর্তব্যরত ফেরেশতা আমাকে নিরাশ করলেন না। আমি যখন এখানকার ব্যক্তিবর্গ সম্বন্ধে জানতে চাইলাম, বিশেষ করে যখন জানতে চাইলাম আমার বাংলাদেশি মানুষগুলোকে কেনো এদের কাতারে যুক্ত করা হল, ফেরাউন---বুশ গংরা, ওরা তো একাধিক স্রষ্টা বা ত্রিত্ববাদে বিশ্বাসী। কেউ কেউ নাস্তিকও।এদের সাথে ওদের কী সম্পর্ক?

আমাকে জানানো হল, আপনার বাংলাদেশি যাদের দেখছেন, তারা বেঁচে থাকতে বুশ-ব্লেয়ার-ফেরাউনদের অনুস্মরণ করত। আর পৃথিবীতে থাকতেই জানিয়ে রাখা ছিলো, যে যার সাথে চলবে বা অনুস্মরণ করবে, তার সাথেই তার হাশর হবে!

মুসলমান হয়েও অমুসলিমদের সারিতে দাঁড়ানো ঐ লোকগুলোর ভাগ্যে কী আছে, সেটা জানার জন্য আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। বিচার দিবসের আনুষ্ঠানিক কর্মকাণ্ড শুরু হয়নি এখনো।

আরো সামনে এগুলাম আমি। দেখি আর কার সাথে দেখা হয়। সাথেই থাকুন--

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন