শনিবার, ২৪ মার্চ, ২০১২

বিশ্ব ধরা খাওয়া দিবস---!!!


প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা! গলা শুকিয়ে কাঁঠ হয়ে আছে। হবারই কথা। ৯ কোটি ৩০ লক্ষ মাইল দূরে ছিল যে সূর্য, সেটি আজ মাথার ৯ ইঞ্চি উপরে! অবস্থা ভয়াবহ! এরই মধ্যে ঘুরছি আমি। বিশাল মাঠে। খোঁজছি পরিচিত কাউকে পাওয়ার আশায়। যদিও জানি, লাভ নেই। আজ কেউ কাউকে না চেনার দিন। আজ মুখ ফিরিয়ে নেয়ার দিন।

বাবার কাছে গিয়ে সন্তান বলবে, বাবা, সামান্য একটু পূণ্যের জন্য ধরা খেয়ে গেছি বাবা। একটু সাহায্য করেন না!

বাবা বলবেন, কে তুমি বালক? তোমাকে তো চিনতে পারছি না! আর আমাকে বাবা বলছ কেনো-পৃথিবীতে থাকতে আমি তো বিয়ে করেছিলাম বলেই মনে করতে পারছি না। তাহলে তুমি আমার ছেলে হবে কীভাবে??

সন্তান যাবে মায়ের কাছে। সেই মা, মাসের পর মাস যে মায়ের কলিজায় লাথি মেরেই ছিল পৃথিবীতে আসা। সেই মা, শীতের রাতে যে মায়ের বুক ভিজিয়ে ছিল বারবার তবুও বিরক্ত হননি একবারের জন্যও। সেই মা, ঝড়-ঝাপটা থেকে সন্তানকে আগলে রেখেছেন বুক পেতে দিয়ে। ছেলের অসুস্থতায় অস্থির হয়ে গেছেন, বলেছেন হে আল্লাহ, যত খুশি কষ্ট আমাকে দাও, আমার সন্তানকে ভাল করে দাও ------------- সেই মায়ের কাছে ।


মা, ও মা! সামান্য একটি পূণ্যের জন্য আমি ধরা খেয়ে গেছি। আজ কেউ আমাকে সাহায্য করছে না গো মা। শেষ ভরসা হিসেবে তোমার কাছেই এলাম। তুমি আমার মা। মায়েরচে’ আপন তো আর কেউ নেই। আমাকে একটি মাত্র পূণ্য দিয়ে উদ্ধার করো আজ।


মা বলবেন, কে বাবা তুমি! তোমাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না! তোমার দুরবস্থার কথা শুনে খারাপ লাগছে। কিন্তু আমি কী করব বলো। আমি নিজেই আজ পেরেশান। তা ছাড়া তুমি আমাকে মা বলছো! পৃথিবীতে আমার তো বিয়েই হয়নি, তুমি আমার ছেলে হবে কী করে!! এই হল আজকের হালত।


------------

---------------

হাশরের দিন আজ। অন্য কথায় বলা যায়
ধরা খাওয়া দিবস। সবাইকেই আজ ধরা খেতে হবে। ভাগ্যবান সামান্য কিছু মানুষ আছেন, যারা আজ ধরা খাবেন না। তাদের কারো সাথে এখনো দেখা হয়নি আমার। হবে হয়তো। দেখা যাক।

হাঁটছি আমি। হঠাৎ একটি জটলা দেখে এগিয়ে গেলাম সেদিকে। ধুসর বাদামী কালারের সাফারী পরা একজনকে মানুষকে ঘিরে কয়েক ড’জন মহিলা। তাদের সাথে অনেকগুলো ছেলেমেয়ে। মানুষটি বসে আছেন গালে হাত দিয়ে। আজ সাফারী পরার দিন না। আজ কারো গায়েই কাপড় থাকার কথা না। সাফারী আমার দৃষ্টি বিভ্রম, সন্দেহ নেই।


খুব পরিচিত মনে হতে লাগলো মানুষটিকে। কোথায় যেনো দেখেছি! কোথায় যেনো---


কাছে গেলাম আমি। আরে! এ তো আমাদের হু মু এমদাদ সাহেব! উনার আশে পাশে উনার দলের আর কাউকেই দেখতে পেলাম না। অবশ্য সেটাই স্বাভাবিক। গাছেরটা খেয়েছেন, সাথে থেকে তলারটাও কুড়িয়েছেন, উনার তেমন বন্ধুরা পৃথিবীতে থাকতেই সুযোগ মত কেটে পড়েছিলেন আর আজ তো কিয়ামত।


উনার কাছে গেলাম আমি। কথাবার্তা বলে যা জানলাম, তা হচ্ছে, অনেকগুলো কারণে আজ তিনি ধরা খেয়েছেন। যে মহিলারা ছেলেমেয়ে নিয়ে ঘিরে রেখেছেন তাকে, তাদের দাবি, তাদের সবগুলো সন্তানের বাবা হলেন তিনি! কিন্তু হু মু এমদাদ সাহেব সেটা স্বীকার করতে চাইছেন না! আশ্চর্য! তিনি যাকে নিজের পূত্র বলে দাবি করছেন, সেই ছেলে যে উনারই, নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। আবার যেগুলো পিতৃ্ত্বের দাবি তোলা হচ্ছে তাকে ঘিরে, তিনি সেটা মেনে নিচ্ছেন না!!


ফেরেশতারা পড়েছেন মহা মুশকিলে। এখন রীতিমত ডিএনএ টেস্ট এর ব্যবস্থা করতে হবে। তাঁরা যাচ্ছেন আল্লাহ পাকের কাছে। এ ব্যাপারে করণীয় কী, সেটির সিদ্ধান্ত আনতে হবে। আমি ফিরে আসলাম সেখান থেকে। এই ব্যাপারে আপডেট জানতে আরো অপেক্ষা করতে হবে আমাদের। সে পর্যন্ত আমরা বসে না থেকে বরং অন্য দিকে যাচ্ছি।


------------

------------------

ঘুরতে ঘুরতে আমার দেখা হল ডঃ জামাল হুসেনের সাথে। তিনি একজন বিখ্যাত আইনজীবি ছিলেন। উনার কাহিনী কি! জিজ্ঞেস করলাম ফেরেশতাকে। আমাকে জানানো হল, তিনি ধরা খেয়েছেন অন্য কারণে। উনাকে বলা হয়েছে পৃথিবীতে থাকতে তুমি যা যা করেছিলে, সব বাদ, শুধু একটি প্রশ্নের জবাব দাও। তোমার বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে তুমি তোমার নিজের দেশের আলো বাতাস ব্যবহার করতে, কিন্তু তোমার হৃদয়ের টান ছিলো পশ্চিম পাড়ার দিকে! ওরাই ছিলো তোমার মনের মানুষ। নিজ দেশের স্বার্থেরচে’ ওই দেশের স্বার্থই ছিলো তোমার কাছে বড়। এমন অভিযোগ আছে তোমার বিরুদ্ধে। বলো সত্যি কি না? তুমি চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে পারো। বলো কী চাও তুমি?


তিনি আমতা আমতা করেছেন। জবাব দিতে পারেননি। তিনি জানেন আজ যুক্তি খাড়া করে পার পাওয়া যাবে না। আজ কথা বলবে শুধুই ডকুমেন্ট। তিনি বিড় বিড় করে শুধু বলেছিলেন,

পরম করুণাময়ের করুণা চাই আমি।
কী চাই বললে? কী চাই?
করুণা
কার করুণা?
পরম করুণাময়ের।
তিনি আবার কে?
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন।
মানে? তুমি কি তার করুণায় বিশ্বাস করো?
জি, কেনো করবো না?
পৃথিবীতে থাকতেও করতে?

একটু থমকে উঠলেন তিনি! সারা জীবন অন্যকে জেরা করেছেন তিনি। নিজে কখনো জেরার সামনে পড়েননি। আজ পড়েছেন। বুঝতে পারছেন জেরা অন্য দিকে মোড় নিচ্ছে। কী বলবেন, ভেবে পাচ্ছেন না।


ফেরেশতা বললেন,

কী হলো? কথা বলো---!
--------- তিনি এখনো নিশ্চুপ
কথা বলছো না কেনো? হাত বন্ধ কেনো? কথা না বললে তো হবে না!

এই ফাঁকে জানিয়ে রাখা দরকার আজ কিয়ামতের দিন। মুখ বন্ধ। সারা জীবন মুখ তথা জিহবা কথা বলেছে। সত্য-মিথ্যা , বলেছে যা খুশি, যেমন খুশি। আজ আল্লাহ আদেশ জারি করেছেন। আজ মুখ না, কথা বলবে হাত। সাক্ষ দেবে পা।


ফেরেশতাদের পক্ষ থেকে হালকা ধমক দিয়ে বলা হলো, চুপ করে থাকলে তো হবে না। কথা বলতে হবে। তোমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে পৃথিবীতে থাকতে তুমি কি আল্লাহর করুণায় বিশ্বাস করতে? তাহলে ঊনিশশ’ কুয়াত্তর সালে তোমাদের দেশ চালনার সংবিধান যখন তৈরি করেছিলে, তুমিই তো ছিলে ফ্রন্ট লাইনের কারিগর। কোথায় ছিলো করুণার কথা? কোথায় ছিলো আল্লাহর নাম?


বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন তিনি। তিনি তার মেয়ের সাহায্য নিতে চাইলেন। উনার মেয়েও আইনজীবি । তাকে জানানো হলো, আজ ওকালতি চলবে না। কিছু বলতে চাইলে আত্মপক্ষ সমর্থন করে, সেটা নিজেকেই করতে হবে। তাছাড়া কন্যাও আছেন রিমান্ডে। উল্টা-পাল্টা তো আর তিনিও কম করেননি বেঁচে থাকতে!


আমি জানি না চূড়ান্ত রায়ে কী হবে। বিচার তো এখনো শুরু হয়নি, আনুষ্ঠানিকভাবে। শুরু হোক, তারপর। চলুন, দেখি আর কার কী অবস্থা!!!


আমি আছি, ঘুরছি, সাথেই থাকুন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন